স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে বৃন্দাবন লীলায় ব্রজবাসীগণ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তি রাধারানীকে একত্রে পেয়ে সীমাহীন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তাঁদের চরণে আবির ঢেলে রঞ্জিত করে দেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধা রানীও এই আনন্দ উৎসবে তাদের সাথে মেতে ওঠেন।
সেই দিনটি ছিল ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথি। ওই দিনে এতটাই আনন্দ উৎসব হয় যে পরবর্তীতে বৃন্দাবন বাসীরা আর ঐ দিনটিকে ভুলতে পারেন নি। তাই আজও মানুষ তা পালন করে চলেছে।
ওই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর রাধারানীকে বৃন্দাবন বাসীরা প্রেমানন্দের দোলনায় দোল দিয়েছিল বলে এই উৎসবটিকে দোল উৎসব বলা হয়। আর যেহেতু ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উৎসবটি পালিত হয়েছিল তাই ফাল্গুন মাসের এই পূর্ণিমাকে দোল পূর্ণিমা বলা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব।বাংলাদেশে এই উৎসবটি ‘দোলযাত্রা’, ‘দোল পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত। এই উৎসবের অপর নাম বসন্ত উৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
দোল পূর্ণিমা-২০২৫ এর তিথি:-বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার থেকেই পড়ছে দোলপূর্ণিমার তিথি। ইংরেজি ১৩ মার্চ, ও বাংলার ২৯ ফাল্গুন সকাল ১০ টা ৩৭ মিনিটে পড়ছে দোল পূর্ণিমা। পূর্ণিমা তিথি শেষ হচ্ছেস ১৪ মার্চ, ২০২৫ সালে। বাংলা ক্যালেন্ডার মতে ৩০ ফাল্গুন, শুক্রবার পূর্ণিমা তিথি শেষ হচ্ছে। সেদিন বেলা ১২ টা ২৫ মিনিট নাগাদ শেষ হচ্ছে তিথি। এদিকে, গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা বলছে, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ শুরু হচ্ছে এই পূর্ণিমা তিথি। সেদিন এই পঞ্জিকা অনুসারে বাংলার ২৮ ফাল্গুন। আর তিথি শুরু হচ্ছে বেলা ১০টা ২২ মিনিট ২৩ সেকেন্ড থেকে। পূর্ণিমা তিথি শেষ হচ্ছে, বাংলার ক্যালেন্ডার মতে ২৯ ফাল্গুন। সেদিন ইংরেজি ক্যালেন্ডার মতে শুক্রবার ১৪ মার্চ। সেই দিনে বেলা ১১ টা ৩৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে।
তাই এ বছর শুক্রবার ( ১৪ই মার্চ) দোল উৎসব পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
উল্লেখ্য ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।
দোলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাধা কৃষ্ণের অমর প্রেম কাহিনি।কোথাও অশুভকে হারিয়ে শুভ শক্তির জয়, আবার কোথাও ঘন প্রেমের আখ্যান, এই সবের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দোল বা হোলির রঙ।
বিশ্বের অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। কোন কোন স্থানে এ উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন।
সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।
সারাদেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন।