
তুহিনুর রহমান তালুকদার, স্টাফ রিপোর্টার:
রমজান মাসকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন হাট-বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলছে না প্রয়োজনীয় তেল, আর পাওয়া গেলেও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা তেলের সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন, যার ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
নবীগঞ্জ পৌর শহরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। যেসব দোকানে তেল আছে, সেগুলোতে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে সরকারের নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ টাকা। অনেক দোকানে ১ লিটারের বোতল নেই, শুধু ৫ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম ১১শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, শুধু তেল কিনতে গেলে দোকানদাররা তা দিচ্ছেন না, বরং চিনিগুড়া চাল, ময়দা, লবণ, ডালসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন। এই পণ্যগুলো না কিনলে তেল দিচ্ছেন না বিক্রেতারা, যার ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
একজন ভুক্তভোগী ক্রেতা, আব্দুল্লাহ, জানান যে প্রায় দেড় মাস ধরে ডিলাররা তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে সংকট দেখা দিয়েছে এবং দাম বেড়েছে। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী রমজানের আগে কৌশলে তেলের সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেন আব্দুল মন্নান। তিনি বলেন, “বোতলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিয়েও অনেক জায়গায় তেল পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কারণে আমরা সাধারণ ক্রেতারা খুব কষ্টে আছি।”
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা অনুযায়ী, দেশে বছরে ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে রমজান মাসে প্রয়োজন হয় ৩ লাখ টন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন তেল আমদানি হয়েছে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং পাইপলাইনে রয়েছে আরও ৮ লাখ ১২ হাজার ৫৬৫ টন। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য নিম্নমুখী থাকা সত্ত্বেও দেশে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।