Friday, September 19, 2025

আজ মহাশিবরাত্রি শিবের মহাতাণ্ডব ও পবিত্র ব্রতের মহিমা

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোর:

শিব শব্দের অর্থ কল্যাণকারী, অর্থাৎ যিনি জগতের মঙ্গল সাধন করেন। পৌরাণিক কাহিনিতে শিব শুধুমাত্র দেবতা বা মানুষের নয়, পশু-পাখি ও ভূত-প্রেতেরও উপাস্য। এই কারণে তিনি দেবাদিদেব মহাদেব নামে পরিচিত। শিবলিঙ্গ হল কল্যাণের প্রতীক। বৈদিক মন্ত্রে তাঁকেই জগতের সর্বোচ্চ ঈশ্বর বলে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং তন্ত্র মতে তিনি ‘ঈশান’ নামে পরিচিত।

হিন্দুদের মধ্যে যারা শিবের উপাসনা করেন, তাদের শৈব বলা হয়। শৈব সম্প্রদায়ের কাছে মহাশিবরাত্রি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার ও উৎসব। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয় এই শিবরাত্রি, তাই একে শিব চতুর্দশীও বলা হয়। মহাশিবরাত্রি আসলে শিবের মহা রাত্রি, যে রাতে ভগবান শিব নিজ মহিমায় বিরাজ করেন।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই রাতে শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহাতাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন। আবার এই রাতেই শিব ও পার্বতীর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। এর গভীর তাৎপর্য হল শিব ও শক্তির মিলন, যা পুরুষ ও আদিশক্তির একাত্মতার প্রতীক। এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তাঁর প্রতীক শিবলিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপমোচন ও মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন।

এই ব্রত হিন্দুদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রতগুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্রতের আগের দিন ভক্তরা নিরামিষ আহার করেন এবং রাতে মাটিতে শয়ন করেন। ব্রতের দিনে উপবাস রেখে সারারাত শিবলিঙ্গের পূজা করা হয়। পূজার সময় শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর বেলপাতা, নীলকণ্ঠ ফুল, ধুতুরা, আকন্দ ও অপরাজিতা ফুল দিয়ে শিবের আরাধনা করা হয় এবং ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ মহামন্ত্র জপ করা হয়। ভক্তরা সারারাত জেগে থেকে শিবের ব্রতকথা পাঠ ও মন্ত্রোচ্চারণ করেন। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবমন্দিরে এই পূজা মহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। তান্ত্রিকরাও এই রাতে বিশেষ সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধিলাভের চেষ্টা করেন।

শিবমহাপুরাণ অনুসারে, এক নিষ্ঠুর ব্যাধের জীবনে মহাশিবরাত্রির মাহাত্ম্য এক বিস্ময়কর পরিবর্তন এনেছিল। একদিন এক ব্যাধ শিকারে বেরিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে এবং রাতে বাঁচার জন্য একটি বেলগাছে আশ্রয় নেয়। হতাশায় সে বেলপাতা ছিঁড়ে ফেলে দিতে থাকে, আর সেগুলো নিচে থাকা শিবলিঙ্গের ওপর পড়ে। সেদিন ছিল মহাশিবরাত্রি, আর সে উপবাসী থাকায় অজান্তেই শিবরাত্রি ব্রতের পূর্ণ ফল লাভ করে।

মৃত্যুর পর যখন যমদূতরা তাকে নিতে আসে, তখন শিবদূতরা এসে যমদূতদের পরাজিত করে ব্যাধকে শিবলোকে নিয়ে যান। যমরাজ তখন স্বীকার করেন যে, যে কেউ শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে, তার ওপর যমের কোনো অধিকার থাকে না। এইভাবে পৃথিবীতে শিবচতুর্দশী ব্রতের মাহাত্ম্য প্রচারিত হয়।

২০২৬ সালে মহাশিবরাত্রি উদযাপিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, চতুর্দশী তিথি শুরু হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১:২২ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯:২৪ মিনিটে।

শিবভক্তদের জন্য এই রাত এক অনন্য পবিত্র সময়, যখন তারা শিবের চরণে আত্মসমর্পণ করে পাপমোচন ও মুক্তির আশায় ব্রত পালন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

শার্শায় বাগআঁচড়া পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নে ম’রণ ভাতা ও স্মার্ট কার্ড বিতরণ 

মোঃ শাহারুল ইসলাম রাজ,স্টাফ রিপোর্টারঃ বাগআঁচড়া,নাভারণ,বেনাপোল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে শ্রমিকদের পরিচয় পত্র(স্মার্ট কার্ড)বিতরণ ও মরণভাতা প্রদান অনুষ্ঠান...

যশোরে রামনগর ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত 

মোঃ ওয়াজেদ আলী,স্টাফ রিপোর্টারঃ যশোর সদর উপজেলা ১১ নং রামনগর  ইউনিয়নে ৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।...

যশোর রামনগর ইউনিয়নে মানব পা’চার প্রতিরোধ কমিটির দ্বিমাসিক সমন্বয় সভা

মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: সুইজারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এর বাস্তবায়নে এবং উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর এর আয়োজনে ১৮...

আমরা বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং সময়ে আছি – ডিসি আজহারুল ইসলাম

এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ  সমাজে ফিতনা, ফেসাত তৈরি করা মানুষ হত্যার চেয়ে বড় অপরাধ! ‎কর্মজীবনে যশোরে আসাটাও আমি মনে করি একটা...