
কালিগঞ্জ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাচন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী ছাড়া অধিকাংশ সদস্য জানেনই না কবে, কখন বা কীভাবে ভোট হবে। গোপনে আয়োজিত এই নির্বাচন নিয়ে জানাজানি হওয়ায় সেটি এখন টক অব দ্য টাউন। গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, ফলে এটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। অথচ সংগঠনের ৪৩ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৩০ জন জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। শহরের ফয়লা গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর বজলুর রশিদ নান্নু, ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল খা ও সাকলায়েন মুরাদসহ অনেকেই বলেছেন, এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) হয়নি এবং তারা নির্বাচন সম্পর্কে কোনো নোটিশ পাননি। এখন সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনছেন, নির্বাচন হচ্ছে, কিন্তু কোনো নিয়মকানুন না মেনে কীভাবে এই নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে, সেটি তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জানুয়ারি কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সেটি সংগঠনের নোটিশ বোর্ড ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসের নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর কথা ছিল। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) মনোনয়নপত্র বিক্রির দিনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো নোটিশ বোর্ড নেই এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাউকেও পাওয়া যাচ্ছে না।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামসহ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে অভিযোগ উঠেছে, এই নির্বাচন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাস্তবে নির্বাচন আয়োজনের কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। নির্বাচনের জন্য মোট ১৫টি পদ ছিল, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪টি পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সভাপতি পদে ২ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ১ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ১ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। বাকি ১১টি পদে কোনো মনোনয়নপত্রই জমা পড়েনি।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, “সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা আমাদের তালিকা দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ করেছিলেন। আমি একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি। কিন্তু সংগঠনটি কীভাবে এজিএম করে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমার জানা নেই।”
তিনি আরও বলেন, অনিয়ম ও জটিলতার কারণে এই নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটির দিন থাকায় রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির এই গোপন নির্বাচন নিয়ে সংগঠনের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম আর না ঘটে।