Monday, June 2, 2025

মোঃ বুলবুল হোসেনের ঈদের ছুটি নিয়ে কিছু গল্পকথা ঈদের ছুটি

Date:

Share post:

ঈদের ছুটি

মোঃ বুলবুল হোসেনঃ

কালিহাতী, টাঙ্গাইল।

রহিম মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় তিনি সংসার কোনরকম চলে। জমি থেকে যে ধান উৎপাদন হয় তা দিয়ে সারা বছর চলে যায়। তবে টানা টানি করে চলতে হয় । এরই মধ্যে রহিমের ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়। সে গাজীপুরের ভিতরে একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। চাকরি করে টাকা দেওয়ার পর তার কিছু থাকে না। তার স্বপ্ন তার পরিবারকে নিয়ে। টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে তার যৌবন চলে গেছে রহিম বুঝতেই পারেনি। সামনে ঈদ ভাই বোনদের কাপড়-চোপড় বাবা মার কাপড়-চোপড় দিতে হবে। ঈদের বোনাস বেতনে টাকা দিয়ে রহিম সকলের জন্য কাপড়-চোপড় ক্রয় করে। বসকে বলে ঈদের একদিন আগেই ছুটি নিয়ে নেই। রহিমের বস ভালো মানুষ রহিম কাজও ভালো বোঝে। তাই সে রহিম কে না করতে পারে নাই। রহিম কাজের দিকটা অনেক দক্ষ একজন ছেলে কখনো কাজে ফাঁকি দেয় নাই। বস যা বলেছে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তাই তার প্রতি বসের একটা দুর্বলতা রয়ে গেছে। বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে রহিম বাসায় চলে আসে।

রহিমের বন্ধু আরিফ তার কাছাকাছি অপর ফ্যাক্টরিতে জব করে। রহিমের দেখা দেখি আরিফ একদিন আগে ছুটি নিয়ে নেয়। দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরবে বাস কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটার সময় দেখে সব টিকিটই বুক হয়ে গেছে । দুজনে পরামর্শ করল আমাদের তো বাড়ি যেতে হবে । আধা ঘন্টা পরে গেলে তো কোন সমস্যা নাই। একজন আগে পড়ে চলে যাই । রহিম বলল ঠিক আছে যেটা ভালো হয় সেটাই তো করতে হবে। কারণ পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের মেনে নিতে হবে। ঈদের সময় সবাই বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে টিকেট কেটেছে। তাই যেহেতু দুটা টিকেট পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ আমাদের যেতে হবে। রহিম আরিফকে বলল দোস্ত তুই কোন বাসে যাবি। তুই আগে বল তারপর আমি যাব। আরিফ বলল দোস্ত আমার বাড়িতে কিছু কাজ আছে। আধা ঘন্টা আগে গেলে কাজটা হয়তো ভালোভাবে করতে পারবো। তুই পরের বাসায় চলে আয়। রহিম বলল ঠিক আছে বন্ধু তুই তাহলে আগে যা। আমি পরের বাসে আসতেছি। এই বলে তারা একই সময় কাউন্টারে গিয়ে উপস্থিত হল। তারপর আরিফকে বাসে উঠিয়ে দিল রহিম। উঠিয়ে দেওয়ার পর বলল আমি আধাঘন্টা পরে আসতেছি। এদিকে আরিফের বাস ছেড়ে দিয়েছে। রহিম বসে আছে বাস কাউন্টারে তার বাস আসতে আসতে এক ঘন্টা পরে এসেছে।

বাস আসার সাথে সাথে রহিম তার নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসে পড়ল । এদিকে কিছুক্ষণ পরে বাসটা ছেড়ে দিল রহিম আর আরিফ দের বাসায় যাইতে শহর থেকে চার ঘন্টা সময় লাগে। তিন ঘন্টা যাওয়ার পর রাস্তায় জাম লেগে যায় সবাই বলতেছে সামনে গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। রহিম মনে মনে ভাবো আমার বন্ধু আরিফ তো এক ঘণ্টা আগে বাহির হয়েছে তার তো কোনো কিছু হয়নি। রহিমের বুকের ভিতরটা কিরম জানি করতেছে। সবসময় ভয় কাজ করতেছে তারপর রহিম ড্রাইভার এর কাছে গিয়ে জানতে পেল । তাদের আগের গাড়িটা নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে । রহিমের দু চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেছে না । তাদের অনেক স্বপ্ন ছিল দুই বন্ধু মিলে একসাথে ঈদ করবে । কতদিন পরে বাড়ি যাচ্ছে দুজন। রহিম কাঁদতে কাঁদতে আরিফের বাসের কাছাকাছি পৌঁছে যায় । পৌঁছে দেখে কেউ মারা যায়নি তবে অনেকের হাত ভেঙেছে। অনেকের পাও ভেঙেছে এমনকি নিকটে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। অনেক লোকজন দেখতে শুরু করল কিন্তু তার বন্ধুকে খুঁজে পেল না । হঠাৎ এক লোক বলে উঠলো ভাইয়া আপনি কি কাউকে খুঁজছেন । আপনি পাশে হসপিটালে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। রহিম সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালের দিকে ছুটে চলল আর মনে মনে ভাবল এ সময় কাউকে কিছু জানাবো না । আগে আরিফের অবস্থা দেখি তারপর বাড়িতে বলবো।

প্রথম যে হসপিটালের রহিম ঢুকে ছিল। সেই হসপিটালে আরিফকে পেয়েছে। কিন্তু যাওয়ার পর আরিফের যে অবস্থা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না রহিম।
তখন আরিফের জ্ঞান ফিরে নাই । রহিম দেখল আরবির হাত কেটে ফেলেছে। রহিম ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করল আপনি কেন হাত কেটে ফেলেছেন। ডাক্তার বলল এছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিল না। আল্লাহকে ডাকুন সুস্থ আছে এজন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। এর মধ্যে হঠাৎ আরিফের জ্ঞান ফিরে আসে। আরিফ চেয়ে দেখে রহিম তার পাশে বসে আছে। আরিফ যেই মাত্র হাত দুটো উপরে উঠাতে যাবে তখনই দেখে তার হাত নেই। আরিফ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল। দোস্ত আমার হাত কই । রহিম আরিফকে কোনরকম শান্তনা দিতে থাকে । দোস্ত তোর হাত ঠিক হয়ে যাবে ডাক্তার বলেছে কিছুদিন পরে আবারো অপারেশন করবে। এই বলে মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে থাকে আরিফকে রহিম। এরই মধ্যে রহিম আরিফের বাবা মাকে ফোন করি জানিয়ে দেয়। তারা দ্রুত এসে পড়ে যেহেতু বাড়ি থেকে এক ঘন্টা রাস্তা দূরে এক্সিডেন্ট হয়েছে । তাই বলা যেতে পারে বাড়ির কাছাকাছি হসপিটালে নেওয়া হয়েছে । আরিফের বাবা-মা এসে আরিফের এই অবস্থা দেখে অনেক কান্নাকাটি করে। আর আরিফ আফসোস করতে থাকে হায় আল্লাহ আরিফের সংসার কিভাবে চলবে। তাদের বাবা-মা ভাই-বোন কে দেখবে ।আরিফের বাবা ভালোভাবে কাজ করতে পারে না অসুস্থ । ভাই বোন ও ছোট একমাত্র আয়ের উৎস ছিল আরিফ। সে যদি কাজ করতে না পারে কি করে চলবে তাদের সংসার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

ঢাকুরিয়া বাজারে ঈদুল আযহা উপলক্ষে জমজমাট গরু-ছাগলের হাট স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত 

এমদাদুল হক মনিরামপুর প্রতিনিধিঃ  আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারে বসেছে বিশাল গরু-ছাগল ও মহিষের...

কালীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী  উপলক্ষ্যে আলোচনা দোয়া ও খিচুড়ি বিতরণ

হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল...

রামনগর পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে অতিদরিদ্রদের মাঝে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ 

মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলা রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের পবিত্র ঈদ - উল আযহা উপলক্ষে অতিদরিদ্র ও...

যশোরের অভয়নগরে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের মানবিক সহায়তা

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটীতে কৃষক দলের নওয়াপাড়া সভাপতি তরিকুল ইসলাম ঘের সংক্রান্ত...