মানুষ অর্থই ভুল
তিন গল্পের মুল
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন
লেখক পরিচিতিঃ
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন ১৯৮২ খৃষ্টাব্দের ১লা ডিসেম্বর, বাংলা ১৩৮৯ সালের ১৫ই অগ্রহায়ন রোজ বুধবার যশোর জেলার মনিরামপুর থানার অন্তর্গত ঝাঁপা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাহার পিতা মাওলানা আজহারুল ইসলাম। তিনি একই গ্রামে ঝাঁপা আলিম মাদ্রাসার মৌলভী শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধিক বই রচনা করেন। মাতাঃ মৃতঃ গফুরুননেছা, পেশায় গৃহিনী।
৩ বোন এবং ৪ ভায়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ৬ষ্ট। ভাইদের মধ্যে ছিলেন সবার ছোট।
ঝাঁপা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করলেও পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী পিতার কর্মস্থল ঝাঁপা আলিম মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরবর্তীতে কাশিপুর পীরবাড়ি সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হয় এবং ১৯৯৭ খৃষ্টাব্দে দাখিল পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করেন।
পরবর্তীতে মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হলেও পিতার নির্দেশে পুনারায় ঝাঁপা আলিম মাদ্রাসায় আলিমে ভর্তি হয়ে ১৯৯৯খৃষ্টাব্দে আলিম পাশ করার পর খেদাপাড়া ফাযিল মাদ্রাসায় ফাযিলে ভর্তি হলেও সংসারের দায়িত্ব কাধে আসায় পড়াশুনা চলমান রাখতে পারে নাই।
কর্মজীবনে পারিবারিক ব্যাবসা পরিচালনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে লেখালেখি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি নিউজবিডিজার্নালিস্ট২৪ (অনলাইন মিডিয়া) এর প্রকাশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সাথে তিনি লেখা-লেখির ময়দানেও অনেকটা এগিয়ে চলেছেন।
বাণীঃ
এই গল্পের বইটি সৃষ্টির শুরু থেকে শুরু করে বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু শিক্ষামুলক গল্প-কথা তুলে ধরা হয়েছে। অহংকার, হিংসা, ন্যায়-নীতি, শ্রমের সঠিক মুল্য এবং ভালোবাসা এসমস্ত বিষয়ের গুরুত্বারোপ করে বইটি সাজিয়ে লেখা। হিংসা এবং অহংকার মানুষের কত ক্ষতি করে সাথে সাথে ন্যায়-নীতি, ভালোবাসায় মানুষকে কতদুর আল্লাহ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই কথাগুলো গল্পের ভিতরে তুলে ধরে শিক্ষা নেওয়ার জন্য এই লেখা। হিংসা এবং অহংকার মানুষের ধ্বংশের মুল কারণ, হিংসা এবং অহংকার থাকলে কেউ উন্নতি স্বাধন করতে পারেনা। সেই কথাগুলো গল্পোকারে লেখা হয়েছে, আশা করি বইটি পড়ে পাঠকগণ মুগ্ধ হবেন এবং ভালো লাগবে, আর ভালো লাগলে লেখকের লেখার প্রতি আরও আগ্রহ জাগবে। লেখকের ইতিপুর্বে ইতিহাসের পাতায় যশোর, "ভাগ্যের লিখন" (কাব্য গ্রন্থ), "যৌথ কাব্য গ্রন্থ" শত কবিতার সমাহার, আলোর মশাল, ছুয়ে দাও কল্পনায়, কবির চোখে জল, স্মৃতির পাতায় আগষ্ট২৪, যৌথভাবে "গল্প" "গল্পে গল্পে হারিয়ে যাবো" এবং এককভাবে "শিক্ষনীয় তিন গল্প" ভাগ্যের নির্মম পরিহাস (উপন্যাশ) ছাড়াও তার আরো অনেকগুলো পান্ডুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
০১, ভূল শুধুই ভূল
মুহাঃ মোশাররফ হোসেনঃ
দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন তুমি যদি কোনো ভূল করে থাকো এবং সেটিকে সংশোধন না করো তাহলে সেটিই হচ্ছে জীবনের সব চেয়ে বড় ভূল।
আসলে ভুল করা প্রতিটি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। ভূল প্রত্যেকটা মানূষ করে থাকে, কারন আমাদের আদি মানব পিতা হযরত আদম এবং মা হাওয়া আঃ ভূল করেছেন, আর ভূল দিয়েই মানূষের সৃষ্টি, মানুষ শব্দের আরবি হলো নাস, যাহার আভিধানিক অর্থ হলো ভূল, পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যিনি ভুল করেন নি। এই ভুল করাকে আমরা খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছি। যার ফলে প্রবাদ-ই দাঁড়িয়ে গেছে যে, মানুষ মাত্রই ভুল করে (Only humans make mistakes)।
আমরা গানও শুনি এরকম যে, ‘ভুল সবই ভুল, তার পর ভূল বুঝিয়া যদি ভূলে যাও মোরে, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা আছে তাহা সবই ভুল’। এভাবে ভুলকে মেনে নিয়ে আমরা ভুলের বৃত্তে আটকে আছি।
জীবন চলার পথে বিভিন্ন সময়ে আমরা ভূল করছি। আর এই একই ভূল বার বার করার পেছনে দায়ী মূলত আমাদের অসচেতনতা, যেমনটা করেছিলো বাবা আদম এবং মা হাওয়া, কারন আল্লাহর নিষেধ সত্যেও গন্ধপ খেয়েছিলো, যেটা আল্লাহর নিষেধ ছিলো, এ সব এর পিছনে কাজ করে শয়তানের প্রবঞ্চনা ও অসচেতনতা, আর ভূলের কারনেই আজ আমরা দুনিয়াই এসেছি, নইলে আনরা বেহেস্তেই থাকতাম। ভূল আমাদের যেহেতু প্রথম থেকেই আল্লাহর ইশারায় হয়ে আসছে, তাই ভূলকে আমাদের মেনে নিয়েই সচেতনতার সাথে সামনে এগুতে হবে।
এই অসচেতনতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে এসে আমরা যেনো আমাদের জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারি। আমরা প্রতিনিয়ত ভূল করি কিন্তু ভুলটাকে সহজে স্বীকার করতে চাই না, কারণ আমাদের অবচেতন মনের অহমিকার কারণে। ভূল স্বীকার না করে আমরা বরং বিষয়টিকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। এর ফলে আমরা ভূলটাকে আর বুঝতে পারি না, ভূলের মধ্যেই আমরা বাস করি। তখন সহজ-সরল জীবনটা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়।
আমরা অনেক সময়ই একটা প্রবাদ বলে থাকি যে, ‘ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়’ অর্থাৎ মানুষ একবার ভূল করলে আর ঐ পথে যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, মানুষ সাধারণভাবে একই ভূলই বার বার করে।
আমরা ভূলের ক্ষেত্রেও নতুন কোনো ভূল করতে পারি না। দেখবেন, যে রাগী সে হয়তো একটি ব্যাপার ঘুরে ফিরে একইভাবে রাগ করে। যেমন- সন্তান জানে যে, মা-বাবা কোন বিষয়টিতে বেশি রাগ করেন। হয়তো সেই ঘটনাটিই সে বার বার করে, যাতে তারা ক্ষেপেন।
বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই পরীক্ষার আগে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ! এই বার কোনো রকমে পাস করিয়ে দাও, এমন ভূল আর করবো না। পরের বার সব পড়া আগেই শেষ করে রাখবো, আর ফাঁকি দেবো না, সময় নষ্ট করবো না। কিন্তু পরীক্ষা শেষ! পরের পরীক্ষার আগে আবার একই ঘটনা।
আমরা কি করি- রোজ ভাবি কালকে সকালবেলা ঠিক সময় মতো ঘুম থেকে উঠবো, নামাজ পড়বো, ব্যায়াম করবো। এরপর কি হয়? এলার্ম বাজে আমরা এলার্ম বন্ধ করে দিয়ে আবার ঘুমাই। অর্থাৎ আমরা ভূল সংশোধন করার বদলে ভূলের পুনরাবৃত্তিই করি, ভূলের বৃত্তে ঘুরপাক খাই।
আসলে একই ভূল বার বার করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। আহাম্মকেরাই একই ভূল বার বার করে, আর জ্ঞানীরা ভূল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বা সংশোধনের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালায়।
আসলে ভুল করা যতটা দোষের ভুলের পুনরাবৃত্তি তার চেয়ে বেশি দোষের। যতক্ষণ না নিজের ভিতর থেকে অভ্যাসটাকে বদলাতে পারবেন, ততক্ষণ আপনার দুর্দশা কেউ ঘোচাতে পারবে না।
ভুল ছোট বা বড় সব ব্যাপারেই সচেতন হতে হবে।
অনেক সময় ছোট ছোট ভুলগুলোকে অবহেলা করতে করতেই আমরা বড় ভূল করে বড় গর্তে পড়ে যাই। একটা ছোট্ট ছিদ্রই কিন্তু একটা বিশাল জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। কলস যদি ছিদ্র থাকে, আর পানি এনে সেই কলসে যদি রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি তাহলে কলসেতো পানি দাঁড়াবে না, কারন কলসতো ছিদ্র যতক্ষন না আপনি কলসটির ছিদ্র করবেন।
যেমন গ্যাংগ্রিন হয় ছোট্ট একটা কাটা থেকে। ছোট্ট একটা সিগারেটের টানই একজন ধূমপায়ীর জীবনে আসক্তির প্রথম পদক্ষেপ। আর ছোট্ট একটা সিগারেটের কারণেই মানূষের হয় ক্যান্সার, আর এই ক্যান্সারের কারনেই হায়াত থাকতেও হায়াত থাকে না, মানুষকে মৃত্যুর কোলে ডেলে পড়তে হয়।
আবার যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখবো সম্রাট জাহাঙ্গীর তার কন্যার রোগ নিরাময় লাভের বিনিময়ে ব্রিটিশ চিকিৎসককে উপহারস্বরূপ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিনা মাশুলে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। এর পরিণতিতে পুরো জাতিকে ২০০ বছরের পরাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে হয়েছিলো।
আমাদের পারিবারিক জীবনেও যে অশান্তি, কলহ বা ঝগড়ার সূত্রপাত তা হয়তো খুব সাধারণ, ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে হয়ে থাকে, আমরা এই ছোট্ট ছোট্ট বিষয় গুলোকে বড় করে দেখে তার থেকে দূরে সরে আসার চেষ্ঠা করি দেখবেন আস্তে আস্তে সব ভূলই কম হতে থাকবে।
অনেক সময় আমরা অপরপক্ষকে সেন্টিমেন্টে আঘাত করে কথা বলি, যা আমাদের পরস্পরের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। ছোট্ট একটা বিষয় থেকে বিরাট কলহ, এমনকি বিচ্ছেদেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অতএব ছোট ছোট ভুলগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সংশোধনের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে, সচেতন হতে হবে। ভুল আসলে মানুষের জীবনে থাকবেই। রাতা রাতি সবকিছু বদলে যাওয়া যায় না। তাকে সময় দিতে হবে, চেষ্টা করতে হবে। তবে আন্তরিক চেষ্টা করলে আস্তে আস্তে ভুলের পরিমাণ কমতে থাকবে।
ভুল না করার ব্যাপারে সব চেয়ে প্রথম কাজ হলো সচেতন হতে হবে, এবং সকল মন-স্থির করে করতে হবে। তবে অতীত ভুলকে বার বার মনে করে অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় পাপবোধ অর্থাৎ অহেতুক অনুশোচনা যেনো আমরা বেশি বেশি না করি।
ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়ে গেলেও হতাশ হওয়া যাবে না। বার বার চেষ্টা করতে হবে ভুলের গতি প্রকৃতি বিচার বিশ্লেষণ করে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একবার বলেছিলেন- ‘মানুষের সাফল্য সবটুকু করতে পারে না, সাধ্যমতো করতে পারায়। সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে, সেটাই স্রষ্টা দেখবেন, সাধ্যের বাহিরে কিছু করা ঠিক নই ইংরেজি এক প্রবাদ আছে যে Exess of anything is very bad অর্থাৎ অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ভালো নই।
আসলে নিজের ভুলের জন্যে স্রষ্টার কাছ থেকে ক্ষমা পেতে চাইলে অন্যের ভুলকে ক্ষমা করা শিখতে হবে আগে, যতবার অন্যকে ক্ষমা করবে, ততবার স্রষ্টার কাছ থেকে ক্ষমা পাইবে। প্রাকৃতিক নিয়মেই তখন ভুলের পরিমাণ কমতে থাকবে।
নিজের কাজের জন্যে বা নিজের ভুলের জন্যে নিজের কাছে জবাবদিহিতা হলো ভুল কমাবার সবচেয়ে ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া। আপনি প্রতিদিন কাজ শেষে রাতে ঘুমানোর পূর্বে নিজের কাজের আত্বসমালোচনা করবেন দেখবেন সব ভূল আস্তে আস্তে কমে যাবে।
আসলে বুদ্ধিমান মানুষ সবসময় নিজের ভুল বুঝতে পারেন, এবং সেই ভূলকে সে শুদরাবার চেষ্টা করে, এবং সে সফলতাও পাই।
দেখা যাচ্ছে যে, অস্থির অবস্থায়ই মানুষ বেশি ভুল করে। কাজে মনোযোগ না থাকলে কোনো কাজই সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক উপায়ে করা যায় না। স্থির থাকলে সব কাজই সুন্দরভাবে করা যায়, যেকোনো অবস্থায় রি-এক্ট না করে, ধীর স্থীরভাবে বিষয়টি সমাধান করা যায়।
যখন একজন মানুষ একটু সু-স্থির হতে পারে, নীরবে চিন্তা করতে পারে, তখন সে মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে পারে, এবং সমাধানের নতুন পথ পেয়ে যায়। একমাত্র মেডিটেশন বা ধ্যান বা প্রানায়াম পারে আপনাকে স্থির করতে। ফলে আপনার কাজের গতি বাড়াবে, মনোসংযোগ বাড়াবে, কাজে পর্যালোচনাও বাড়বে নিয়মিত, সেই সাথে ভুলের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জীবনের প্রশান্ত অনুভূতিতে সিক্ত হতে পারবেন।
স্রষ্টা আমাদের সকলকেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুলের বৃত্ত ভাঙ্গার সুযোগ করে দিন। (আমিন)
০২, গরীব চাষা
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন
সকল মানুষ তাদের কর্মের ফলে পরিবর্তন হয়, হয় না কেবল খেটে খাওয়া সাধারণ চাষা, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ভাত তৈরী হয় তারাই সমাজে পরিবর্তন কম হয় এইটা আল্লাহর খেলা, এইটা আসলে খেলা না! আল্লাহর পরীক্ষা সেইটা এক মাত্র আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। যেমন যারা সমাজে এক সময় বিড়ি বানিয়ে দ্বারে দ্বারে বিক্রয় করে জিবীকা নির্বাহ করতো তারা কিন্তু আজ কোটিপতি, এবং মদ, গাজা বানিয়ে যারা দিন চালাতো তারাও আজ সমাজে বিত্তবান, কোটিপতি। আসলে এইটা কি আল্লাহর পরীক্ষা নাকি অভিশাপ তাহা আল্লাহই এক মাত্র ভাল যানেন।
বিড়ি বানিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে বিক্রয় করতো আজিজ বিড়ি এবং আফিল বিড়ি, এক সময় হাতে বানিয়ে বাজারে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো, আজ তাদের কোম্পানি সারা বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে স্থান পেয়েছে। আজিজ, আফিল বিড়ি কোম্পানি আজ মাল্টিমিডিয়া কোম্পানি তথা আজিজ এবং আফিল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে রুপ নিয়েছে এইটাও কি পরম করুনাময় আল্লাহর খেলা না লটারীর মত ভাগ্যের পরীক্ষা?
আর মদ বা তাড়ি বানিয়ে এক সময় দিন চালাতো। আমার বাস্তব জীবনে দেখা মনিরামপুর এর হাসমত, যে এক সময় খেজুর গাছের পঁচা রস দিয়ে মদ বা তাড়ি বানিয়ে বিক্রয় করে সংসার চালতো সেই পরিবার ও আজ কোটিপতি? হায়রে আল্লাহর লীলা খেলা! বুঝা বড় বড় দায়: যেমন পবিত্র কুর-আনে সুরা আল এমরানের ২৬ এবং ২৭ নং আয়াতে এসেছে আল্লাহ যাকে খুশি ধনী বানান আবার খুশি তাকে গরীব বানিয়ে দেন। তবে আল্লাহ কি ভাল কাজ যারা করে তাদেরই বাশি পরীক্ষা করেন? হ্যা আসলে আল্লাহর ধর্যের পরীক্ষা কারন সুরা বাকারার মধ্যে এসেছে আল্লাহ ভাল কাজ যারা করেন তাদের জন্যই সুপথ। আসলে আল্লাহ বান্দাকে বুঝাতে চেয়েছেন, বান্দা যেকোনো কাজে আল্লাহকে স্বরণ করিলে আল্লাহ বান্দার সহযোগিতা করেন তাই ভাল কাজ হোক আর মন্দ কাজ হোক। আল্লাহ তা-আলা ভাল কাজ যারা করেন তাদের প্রতি বেশি বেশি সহযোগিতা করেন, ভাল কাজের ফল আল্লাহ বেশি বেশি দেন আর খারাপ কাজের ফল কম করে দেন এটাও আল্লাহ তার বান্দার সহজ করার জন্য করেন যাতে করে বান্দা খুশি থাকেন, যেমন বান্দা যদি ভুল করে খারাপ কাজ করে সেখানে আল্লাহ সহযোগিতাও করেন আর গুনা কম করে লেখেন আর বান্দা যদি ভাল কাজ করা বা করতে চায় তাতেও আল্লাহ বেশি বেশি সহযোগিতা এবং পূণ্যতা বেশি বেশি লিখেন, কারন আল্লাহ তার বান্দাকে সন্তানের মত ভাল বাসেন তাই।
এই পৃথিবীটা বড়ই অবাক! কারন এই দুনিয়াই যারা খারাপ কাজ :যেমন বিড়ি, গাজা, মদ যারা বানাতো তারাই আজ শিল্পপতি কিন্তু যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আল্লাহর এই বান্দার মুখে আহার যোগায় তারা আজ এই দুনিয়াই যেমন ছিলো তেমনি আছে। আজ যারা আল্লাহর এই বান্দার মুখের আহার অর্থাৎ ভাত বানাই তাদের কোনো পরিবর্তন নাই আসলে কি এইটা অভিশাপ? হয়তো আল্লাহর এইটাও লীলা খেলা হতে পারে: ধনী, গরীব সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয় তবে কেনো এই খেটে খাওয়া সাধারণ চাষা যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা মুখে দুটো ভাত তুলি তারা কেনো পরিবর্তন হয়না! এইটাও হয়তো আল্লাহর কোনো লীলা-খেলা আছে। আল্লাহ তা-আলা বান্দার যেকোনো উপায়ে খুশি রাখার চেষ্টা করেন।
দুনিয়াটা বড়ই আজোব!
কেও বিড়ি বানিয়ে বিক্রি করে, আর গাজা, মদ বানিয়ে বিক্রি করে কোটিপতি হচ্ছে আর যারা আল্লাহর এই বান্দার খাওয়ায়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভাত বানাচ্ছে তাদেরকে আল্লাহ একই অবস্থায় রেখেছে এইটা একমাত্র আল্লাহর পরীক্ষা কারন আল্লাহতো নিজেই তার কথা পবিত্র কুর-আন পাকের সুরা আল এমরানের ২৬ এবং ২৭ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন। আমাদের সকলকে আল্লাহর এই লীলা-খেলা বুঝার তৌফিক দিন। (আমিন)
০৩, দায়িত্বশীল "মিজান সাহেব"
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন।
মিজান একটা সুনামধন্য কোম্পানিতে জব করে। কোম্পানির মহাজন খুব ধার্মিক এবং উদার মনের। তার কোম্পানিতে আরও অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী আছে। কোম্পানির মহাজন সকলকেই আন্তরিকতার সাথে দেখে এবং মনে প্রাণে ভালোবাসে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সম্মানী ভাতা দেন। এদের সকলের আছে চাকরি শেষে আছে এককালীন মোটা অংকের বরাদ্দ। কোম্পানির মহাজন শ্রমিকদের খুব সম্মান ন্যায্য মুল্য প্রদান করেন, কারণ শ্রমিকরা ন্যয্য মুল্য পেলে কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং মনোযোগী হয়।
এই কোম্পানির মহাজন বিশ্বাস করেন যে প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা মনোযোগ দিয়ে কাজ সে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়না আল্লাহ সেই প্রতিষ্ঠানের আয় রোজগার বাড়িয়ে দেন। শ্রমিকদের সম্মানী সঠিক সময়ের ভিতরে দেন কারন মহাজন জানেন এবং মানেন শ্রমিকের মুল্য গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই দেওয়া উচিৎ, এ সম্পর্কে হযরত আয়শা সিদ্দিকী (রা:) এর বর্নিত হাদীস আছে। এই কোম্পানির আশ-পাশে বহু কোম্পানি এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে চলে দুর্নীতি এবং লুটপাট। যে প্রতিষ্টানে দুর্নীতি, লুটপাট আছে সে প্রতিষ্ঠান কোনোদিন উন্নতি করতে পারেনা অবশ্যই এর জন্য কোম্পানির পরিচালকের গাফিলতি আছে। কোম্পানির পরিচালক অর্থাৎ মহাজন যদি সঠিক প্রাপ্য কর্মচারীদের দেয় তাহলে দুর্নীতি করার কোনো প্রশ্ন আসবেনা। কর্মচারীদের চাওয়া পাওয়া যদি মহাজন পুরন করে দেই তাহলে দুর্নীতি করবে কেনো? খাটি সোনা যেমন ক্ষয় হয়না তেমনি মিজানের কোম্পানি ক্ষতি না হয়ে আল্লাহর রহমতে দিন দিন উপরের সিড়িতে উঠতে থাকে আর পাশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিচে নামতে থাকে। পাশের প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসার মুলনীতি ভালোনা তাই দিন দিন অধঃপতন। শ্রমিকের মুখের হাসিই সব প্রতিষ্ঠান উপরে উঠে কারণ শ্রমিকদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। এভাবে মিজানের কোম্পানি আস্তে আস্তে ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে থাকে। আর এই ব্যাবসা দেখে অন্য ব্যাবসার মহাজনদের মনে মনে হিংসা হতে থাকে আর মিজানের কোম্পানি কিভাবে ধ্বংশ করা যাবে সেই সড়যন্ত্র করতে থাকে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! উপরিওয়ালা একজন আছে পাশের কোম্পানিরা যত সড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে ততই মিজানের মহাজনের কোম্পানির উন্নতি হতে থাকে অপরদিকে পাশের সড়যন্ত্রের জাল বুনা কোম্পানিগুলো নিচে নামতে থাকে। মিজানের কোম্পানির মহাজনের আদর্শের নীতিতে কোম্পানি উন্নতি হতে হতে সারা দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তার হতে থাকে। সারাদেশে মিজানের মহাজনের কোম্পানি বাড়তে বাড়তে সারাদেশের বিভাগ থেকে জেলা আর জেলা থেকে বিভিন্ন থানা পর্যায়ে পৌছিয়ে যায়।
মিজানের কোম্পানির উন্নয়নের কারণ একটাই এই মহাজন সমস্ত কর্মচারীদের যথাযথ সম্মান এবং উপযুক্ত সম্মানী দেন। শ্রমিকদের যথাযথ সম্মান এবং উপযুক্ত সম্মানী দেওয়ার কারণে শ্রমিকরা সন্তুষ্টি হয়ে মহাজনের জন্য প্রাণ খুলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে। শ্রমিকদের দোয়াই আর আল্লহর রহমতের ইশারায় হয়ত মিজানের কোম্পানি উপরে উঠে যায় আর কেউ মিজানের মহাজনের কোমানিকে সড়যন্ত্র করে নিচে নামাতে পারেনা। আল্লাহ চাইলে বাদশাহকে ফকির আর ফকিরকে বাদশা বানাতে পারে কিন্তু তার জন্য দরকার নিয়্যাত এবং ইসলামের আদর্শানুযায়ী চলা এবং উপযুক্ত সম্মাননা প্রদান। মিজানের মহাজনের কোম্পানির পাশের কোম্পানির মহাজনদের মুলনীতি, আদর্শ এবং নিয়্যাত ভালোনা, কারণ তারা খুব কৃপণ। কৃপণ লোকেরা এমন যে, তারা সামনের থাকে যেতে দেখলে মনে করে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এই মহাজনেরা ঠিক একই প্রকৃতির! তফাৎ কিছুই না। মিজানের কোম্পানির পাশের মহাজনেরা মনে করে শ্রমিকদের যে সম্মানী দিচ্ছি সেটাই যথেষ্ট। মিজানের কোম্পানির পাশের কোম্পানির শ্রমিকরা একাধিকবার প্রাপ্য সম্মানী ভাতা বাড়ানোর জন্য বহুবার আন্দোলন করেছে কিন্তু কোনো ফল পাইনি তারা। শ্রমিকদের মনে চাপা ক্ষোভ নিয়ে শুধু দুবেলা আহারের জন্য পেটের দায় নিরুপায় হয়ে চাকরি করতে থাকে। শ্রমিকদের মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কোম্পানি ভালো উন্নতি করতে পারেনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকের সঠিক মুল্য দিলে শ্রমিকরা কেমনে তাদের পরিবারের সেবা করবে? সেটাও একটা সচেতন মহাজনের ভাবা উচিৎ, শুধু কোম্পানির উন্নতি চাইবে আর শ্রমিকদের ন্যায্য মুল্য দিবেনা সে কি করে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের আশা করে। শ্রমিকের ভালোবাসা আর নেক দোয়া আর আল্লাহর রহমত ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সাধিত হতে পারেনা। কিছু পেতে কিছু দিতে হয় এটা স্বাভাবিক আল্লাহর রহমত নিতে গেলেও কিছু দেখাতে হয়। এমনতো হতে পারে শ্রমিকের দোয়াটা আল্লাহ কবুল করে সেই প্রতিষ্টানের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষন করে এবং সে প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সাধিত হয়। যেটা সম্ভব করেছে মিজানের কোম্পানির মহাজন, তার সততা, ন্যায় নীতি, উদারতা ও ভালোবাসায় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মিজানের কোম্পানি অনেক উপরে উঠেছে।
হঠাৎ করে মিজানের কোম্পানির উপর এক কুচক্রবাহিনীর কু-নজর পড়ে এবং বিভিন্ন সড়যন্ত্র করতে থাকে। এই সড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের কোম্পানি ঠিক না রাখতে পেরে দেশের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের সাথে আতাত করে সড়যন্ত্রে সফলতা অর্জন করে এবং এই মিজানের মহাজনের কোম্পানিকে তারা মালিকানা নিয়ে নেই। মিজানের মহাজনের কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন করে তারা খুশিতে মাতোয়ারা হয় এবং আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। নিজেদের কোম্পানি দেওলিয়া হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কারোর খেয়াল নাই কারন একটা স্বয়ংসম্পন্ন কোম্পানির তারা নতুন করে মালিক হয়েছে সেই খুশিতে আত্মহারা। মিজানের মহাজনের কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন করে নতুন মহাজন কোম্পানি পরিচালনা করতে থাকে কিন্তু দিন দিন এই কোম্পানির উপর আল্লাহর লানত পড়ে এবং তাদের কোম্পানির মত আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে যেতে থাকে। আল্লাহ চাইলে সবই করতে পারে মিজানের কোম্পানির মহাজনের কাছ থেকে শুধু কোম্পানির মালিকানা কেড়ে নিয়েই তারা ক্ষান্ত হননি এবার তার উপর চালাতে থাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জেল, জুলুম অত্যাচার। এভাবে মিজানের মহাজনের উপর অমানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
মিজানের মহাজন মনের কষ্টে আল্লাহু তাআলার কাছে বিচার চায় এবং বলে হে আল্লাহ তুমি উত্তম ফয়সালার মালিক, আমার উপর যে অন্যায়ভাবে অত্যাচার, নির্যাতন চালাচ্ছে এদেরকে তুমি সঠিক বিচার করো এবং আমার কোম্পানি যাতে আবার আমার কাছে ফিরে আসে সে ব্যাবস্থা তুমি করিও তুমিই একমাত্র আমার ভরসা। আল্লাহ সবসময় মাজলুমের দোয়া কবুল করেন, তাই মিজানের মহাজনের দোয়া কবুল করে যে সমস্ত কোম্পানিগুলো সড়যন্ত্র করেছিল তাদেরতো আল্লাহ উপরে উঠতে দেয়নি সাথে মিজানের মহাজনের ঐ কোম্পানিকেও নিচে নামিয়ে দেন।
আল্লাহর রহমত এবং মিজানের মহাজনের ন্যায় বিচারহীন নীতি, উদারতা এবং ভালোবাসার জন্য মিজানের মহাজন আল্লাহর রহমতে আবার পুনরায় ফিরে পান কিন্তু কোম্পানি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলেছে তারা। সবই আল্লাহর লীলা-খেলা, আল্লাহ চাইলে সব করতে পারে, আল্লাহ ফকিরকে বাদশা আবার বাদশা করতে পারেন (সুরা আল ইমরান)। যথারীতি মিজানের মহাজনের কোম্পানি আবার আল্লাহর রহমতে মিজানের মহাজনের নিয়ন্ত্রনে আসার পরে আল্লাহর ইচ্ছাই পুনর্জীবিত হয়েছে।
কিন্তু যারা সড়যন্ত্রের জাল বুনে এই কোম্পানিকে তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছিল আল্লাহর রহমতে তারাতো ধ্বংশ হয়েছে সাথে তাদের কোম্পানিগুলোও ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে এবং তারা তাদের কোম্পানিগুলো এখনো নিয়ন্ত্রনে আনতে পারে নাই। আল্লাহ হিংসা ও অহংকারী লোকদের সহ্য করতে পারেনা হিংসা এবং অহংকার পতনের মুল। শ্রমিকদের ভালোবাসা এবং সঠিক সম্মানী দিয়ে কর্মচারীদের খুশি করাও ঈমানী দায়িত্ব।
(আমিন)।