
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইল জেলায় ১৫৮টি অবৈধ ইটভাটা থাকলেও বারবার মোবাইল কোর্টের শিকার হচ্ছে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ও বহুরিয়া ইউনিয়নের মাত্র ৭টি ইটভাটা। এসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ায় মালিকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এবং ঋণের বোঝায় দিশেহারা হয়ে গেছেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে পতিত জমিতে এসব ইটভাটার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্মাণকাজ শেষ হয়। ইটভাটাগুলো হলো—বাটা ব্রিকস, নিউ সরকার ব্রিকস, হক ব্রিকস, নিউ রমিজ ব্রিকস, বি অ্যান্ড বি ব্রিকস, সনি ব্রিকস ও রান ব্রিকস।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘোষণা করেন, আর কোনো নতুন ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হবে না। প্রশাসনের ধারণা, যেহেতু এই ৭টি ইটভাটায় তখনও আগুন দেওয়া হয়নি, তাই এগুলো নতুন। এরপর ১২ ডিসেম্বর প্রথম দফায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রতিটি ইটভাটাকে ৪ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। পরে ৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে চিমনি স্থায়ীভাবে ভেঙে দেওয়া হয়। সবশেষে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের নির্দেশে ইটভাটাগুলো সম্পূর্ণভাবে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এতে করে ইটভাটা মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা সবাই কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, অনেকে পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এসব ইটভাটায় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন, যাদের অগ্রিম লক্ষ লক্ষ টাকা দাদন দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
ইটভাটা মালিকরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না এনে অনুরোধ জানিয়েছেন, অন্তত এক বছরের জন্য তাদের ইটভাটাগুলো চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক, যাতে তারা কিছুটা হলেও ঋণ পরিশোধ করতে পারেন।
মানবাধিকার কর্মী মো. সোহেল রানা প্রশ্ন তুলেছেন, “টাঙ্গাইলে এতোগুলো অবৈধ ইটভাটা থাকলেও কেন শুধু এই ৭টি ইটভাটার বিরুদ্ধে বারবার মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে? যদি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হয়, তাহলে সবগুলো বন্ধ করা উচিত।”
তিনি সরকারের কাছে মানবিক বিবেচনায় এক বছরের জন্য এই ইটভাটাগুলো চালানোর অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানান, যেহেতু মালিকরা নিজেরাই বলেছেন, এক বছর পর তারা নিজ উদ্যোগেই এগুলো বন্ধ করে দেবেন।