
হুমায়ুন কবির কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ :
কালীগঞ্জে ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা
ইটভাটায় জ্বালানির জন্য কয়লা ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বেশ কিছু ভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকাশ্যে কাঠ পুড়ছে ভাটায়
কালীগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্যমতে, উপজেলায় মোট ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। সরেজমিনে নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বলাকান্দোয় অবস্থিত কাজী ব্রিকসে দেখা গেছে, চুল্লির চারপাশে বিপুল পরিমাণ কাঠ ফেলে রাখা হয়েছে এবং প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
কাজী ব্রিকসের মালিক কাজী মনিরুজ্জামান জানান, “আমরা কয়লা দিয়েই ইট পোড়াই। খড়ি দিয়ে শুরু করেছি মাত্র, এই রাউন্ড শেষে কয়লা ব্যবহার করব।” তবে তিনি স্বীকার করেন যে, কালীগঞ্জের কোনো ইটভাটাই বৈধ নয়।
অর্থনৈতিক লাভ বনাম পরিবেশের ক্ষতি
বর্তমানে এক টন কয়লার দাম ১৭-১৯ হাজার টাকা, অন্যদিকে এক মণ খড়ির দাম মাত্র ১৬০ টাকা। এক লাখ ইট পোড়াতে ১৬ টন কয়লার প্রয়োজন হয়, যেখানে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। কাঠ ব্যবহার করলে খরচ হয় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা, ফলে ভাটা মালিকদের মাত্র ১৬ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।
তবে সামান্য এই অর্থ সাশ্রয়ের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ইট পোড়াতে ২৪ ঘণ্টায় ৭-৮ টন কাঠ ব্যবহৃত হচ্ছে, যা স্থানীয় বনাঞ্চল ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ রক্ষা আইনের তোয়াক্কা নেই
২০১৩ সালের “ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালা” অনুযায়ী, ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার বেআইনি। তবে আইন অমান্য করেও এসব ভাটা অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বন উজাড় ও রাস্তা ভাঙার শঙ্কা
স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে। ইটভাটার জন্য ব্যাপক হারে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে, যার ফলে শীতকালে আগের মতো খেজুর রস ও গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, মাটি পরিবহনের কারণে সরু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কাদা জমে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
প্রশাসনের আশ্বাস, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
কালীগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন চুন্নু বলেন, “বন ধ্বংস করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সমিতি সমর্থন করে না। মালিকদের নিষেধ করা হয়েছে।” তবে তিনি কালীগঞ্জে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা কতটি, তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুনতাসির রহমান অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিলেও ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে কিছু করার সুযোগ নেই।”