Saturday, July 26, 2025

আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাস:

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ঊনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, নাট্যকার, প্রহসন রচয়িতা এবং বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের পথিকৃৎ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার নির্জন পাখিডাকা, ছায়াঢাকা কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তার প্রথমা স্ত্রী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার মা জাহ্নবী দেবীর কাছে। মা তাকে পুরাণ, মহাভারত, রামায়ণসহ ধর্মীয় গ্রন্থে পরিচিত করেন। পাশাপাশি শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তিনি বাংলা, আরবি এবং ফারসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।

বাল্যকাল কাটিয়ে তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়ার পর হিন্দু কলেজে (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। এখানে অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি.এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হিসেবে তার কাব্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে।

খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ ও প্রভাব
১৮৪৩ সালে মধুসূদন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরিচিত হন মাইকেল মধুসূদন দত্ত নামে। এই সিদ্ধান্ত তৎকালীন সমাজে আলোড়ন তোলে, এবং তার পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। তা সত্ত্বেও তিনি বিশপস কলেজে শিক্ষালাভ চালিয়ে যান এবং গ্রীক, লাতিন, সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী হন।

সাহিত্যজগতে পদার্পণ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার সাহিত্যজীবন শুরু করেন ইংরেজি ভাষায়। মাদ্রাজে অবস্থানকালে তিনি প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’ রচনা করেন। তবে জে.ই.ডি. বেথুনের পরামর্শে তিনি বাংলায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন।

১৮৫৬ সালে কলকাতায় ফিরে তিনি বাংলা নাটক রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৯)
  • ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৮৬০)
  • ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৬০)

মধুসূদন বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন। তার অনন্য কীর্তি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১), যা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য।

ব্যক্তিগত জীবন
মাইকেল প্রথমে রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি ফরাসি তরুণী এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়াকে বিয়ে করেন, যিনি তার সারাজীবনের সঙ্গী ছিলেন।

অর্থকষ্ট ও শেষজীবন
অমিতব্যয়ের ফলে জীবনের শেষদিকে মধুসূদন দারিদ্র্যের শিকার হন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন, মাত্র ৪৯ বছর বয়সে, তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মধু মেলা
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন উপলক্ষে যশোর জেলার কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সপ্তাহব্যাপী মধু মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরও মহাকবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

যশোরে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদে স্ব’ল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ

ওয়াজেদ আলী,স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়ন পরিষদে স্বল্পমূল্যের কার্ডধারীদের মাঝে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর পণ্যসামগ্রী...

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন কলকাতার শহরের বহু এলাকা

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: গতকাল দিল্লীর মৌসম ভবন থেকে আগাম সতর্কতা জারি হিসেবে বলা হয়েছিল যে আগামী...

ট্রেনিং বিমান দু’র্ঘটনায় নি’হতদের স্ম’রণে শ্রীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল

শরিফুল খান প্লাবন: শ্রীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ট্রেনিং ফাইটার বিমান বিধ্বস্ত...

রামনগর ইউনিয়নে ১৭০টি ভাতা বই বিতরণ এজেন্ট ব্যাংকের বি’রুদ্ধে অর্থ কাটার অ’ভিযোগ

মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়ন পরিষদে মোট ১৭০টি ভাতা বই বিতরণ করা হয়েছে। এর...