স্টাফ রিপোর্টার:
হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি বিস্ময়কর জনপদ হলো বানিয়াচং। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত এই ঐতিহাসিক গ্রামটি আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এটি বাংলাদেশের গৌরবময় একটি স্থান।
বানিয়াচং গ্রামটি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। এটি চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। গ্রামটির মোট আয়তন প্রায় ৩২.৪৩ বর্গমাইল এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার। প্রায় ১২০টি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গঠিত এই গ্রামটির নাম প্রথমে এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত।
বানিয়াচং নামের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি মত প্রচলিত। একটি মতে, ‘বানিয়া’ শব্দের অর্থ ব্যবসায়ী এবং ‘চং’ অর্থ জনপদ। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে এটি ব্যবসায়ীদের বড় কেন্দ্র ছিল। অন্য একটি মতে, এখানে এক সময় একটি বড় বিল ছিল, যেখানে ‘বানিয়া’ নামে একজন পাখি শিকার করতেন। শিকারস্থল হিসেবে চাঙ নির্মাণ করায় ‘বানিয়া’ ও ‘চং’ মিলিয়ে এলাকাটির নাম হয় বানিয়াচং।
১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠনের সময় বানিয়াচং সিলেট জেলা থেকে পৃথক হয়ে আসে। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ থানা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে, বানিয়াচং থানা ছিল প্রশাসনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বানিয়াচং গ্রাম এবং এর নেতৃবৃন্দ সিলেট অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে এটি একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। স্বাধীনতার পরে ১৯৮২ সালে বানিয়াচংকে উপজেলা হিসেবে উন্নীত করা হয়।
বানিয়াচং শুধু আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকেই বড় নয়; এটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ। উল্লেখযোগ্য স্থান ও নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বানিয়াচং গ্রামটি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান। বিশেষ করে বর্ষাকালে নৌকা ভ্রমণ এবং স্থানীয় খাবার এই এলাকাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
বানিয়াচং শুধু একটি গ্রাম নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক মেলবন্ধন। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে এটি দেশের গৌরব এবং পর্যটন বিকাশের এক অপার সম্ভাবনাময় স্থান।
(তথ্যসূত্র: স্থানীয় পরিসংখ্যান, ঐতিহাসিক নথি ও উইকিপিডিয়া)