
রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুর মহানগরীতে বিএসটিআই এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট অভিযানে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে রংপুর মহানগরীর আর কে রোডে অবস্থিত মেসার্স ঠিকানা রেস্তোরাঁকে সিএম লাইসেন্স ছাড়াই মিষ্টি উৎপাদন ও বিক্রয়-বিতরণের দায়ে বিএসটিআই আইন ১৫ (১)/২৭ ধারা অনুযায়ী জরিমানা করা হয়।
মোবাইল কোর্ট অভিযান:
অভিযানটি পরিচালনা করেন রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সুলতানা রোজী। প্রসিকিউটর হিসেবে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই’র ফিল্ড অফিসার (সিএম) মারুফা বেগম এবং পরিদর্শক (মেট্রোলজি) মোঃ নাসির উদ্দিন।
অভিযানে মেসার্স ঠিকানা রেস্তোরাঁয় সিএম লাইসেন্স ছাড়াই মিষ্টি উৎপাদন এবং তা বাজারজাত করার বিষয়টি ধরা পড়ে। বিএসটিআই আইন অনুযায়ী, কোনো খাদ্যপণ্য উৎপাদনের আগে সিএম লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য করে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে মিষ্টি তৈরি করছিল। এ কারণে তাদের জরিমানা করা হয়।
বিএসটিআই কর্মকর্তার বক্তব্য:
বিএসটিআই রংপুর বিভাগীয় অফিসের প্রধান মুবিন-উল-ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকবে। লাইসেন্সবিহীন পণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আমাদের নজরদারি আরো জোরদার করা হবে।”
তিনি আরও জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং খাদ্যে মান বজায় রাখতে এসব অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
আইন লঙ্ঘনের দায়:
বিএসটিআই আইন ১৫ (১)/২৭ ধারা অনুযায়ী, খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ে মান নিশ্চিত করা এবং সঠিক লাইসেন্সধারী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ব্যত্যয় ঘটালে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড বজায় রাখা হয়, যা দেশের জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
জনসচেতনতার আহ্বান:
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সুলতানা রোজী বলেন, “ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় এবং মানহীন খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভোক্তাদের উচিত পণ্য কেনার আগে মান এবং লাইসেন্স যাচাই করা। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকবে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষা পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা আইন লঙ্ঘন করে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে ভোক্তারা সচেতন হবেন এবং ব্যবসায়ীরাও নিয়ম মেনে চলবেন।”
বিএসটিআই’র উদ্দেশ্য:
বিএসটিআই দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যা খাদ্যপণ্যের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে। মানহীন পণ্যের উৎপাদন এবং বাজারজাত রোধে তারা নিয়মিত নজরদারি করে থাকে। বিশেষত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীদের সিএম লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
এই অভিযান থেকে বোঝা যায়, সরকারের লক্ষ্য হলো জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং মানসম্পন্ন খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করা। বিএসটিআই এবং জেলা প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া:
এ ধরনের অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, “বাজারে মানহীন খাদ্যপণ্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাই এসব প্রতিরোধে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এই অভিযান চালিয়ে গেলে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ থাকবে এবং মানসম্পন্ন পণ্য সহজলভ্য হবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বিএসটিআই এবং জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, রংপুরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তারা জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা এবং প্রচারণার উদ্যোগ নিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রম আরও নিয়মিত করা হলে মানহীন খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এটি শুধু জনস্বাস্থ্যের উন্নতি করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।