Friday, August 15, 2025

হার না মানা রতন মিয়ার গল্প

Date:

Share post:

জাবির আহমেদ জিহাদ, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি ঃ

বর্তমান ছেলেটির বয়স ২৬,২৭ হবে হয়তো। বাহাদুরাবাদ নয়াগ্রাম মেইন রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা ভর্তি একটি পুকুরে পাড়ে ছোট্ট এক জায়গায় বসবাস তার। ৫ ভাই, ১ বোন ও বাবা মা নিয়ে পরিবার। বড় তিন ভাই জীবন ও জীবীকার তাগিদে সারাবছর স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকে। অন্য এক ভাই ও সে বাড়িতে থাকেন।
ভাইদের মধ্যে সব ছোট সে।

ছোট বেলা থেকে সে প্রচুর পরিশ্রম করে, কখনো দিন মজুরির কাজ করেন,আবার কখনো অন্যের ভ্যেন গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা মায়ের দেখার ভার পরে তার কাধে। এরই মধ্যে ছোট বোন কে বিয়ে দেয়। আর সে নিজেও বিয়ে করেন।

তার ৫ বছরের একটি মেয়ে, ও ১ মাস বয়সি ছোট্ট আরেকটি মেয়ে আছে তার ঘরে। যে মেয়েটি হয়তো তার বাবাকে একবার বাবা বলেও ডাকতে পারেনি। আর মেয়েটি বড় হয়ে মনেই রাখতে পারবেনা তার বাবা দেখতে কেমন ছিলো।

অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা মা ও পরিবার চালানো তার জন্য অনেক বেশি কষ্টের হয়ে দাড়িয়েছিলো। এলাকায় সমিতি থেকে সুদ ভিত্তিক কিস্তির উপর টাকা নিয়ে একটি নিজস্ব ভ্যেন গাড়ি কিনে সে। আর সেই ভ্যেন চালিয়ে পরিবার দেখছেন। গত কয়েকদিন যাবৎ খুব অসুস্থ হয়ে পরে সে। অসুস্থ অবস্থায় নিয়মিত ভ্যেন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়। কিন্তু অসুস্থতার পরিমাণ বাড়তি হওয়ায় সে আর বাইরে ভ্যেন নিয়ে বের হতে পারছিলো না।

এলাকায় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে কিছু ঔষুধ নিয়ে খাওয়াচ্ছিলো তার বৃদ্ধ মা। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিলো অসুস্থতার পরিমান বাড়তেই থাকে। তার মা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অনেকের কাছে টাকা ঋণ চাই,কিন্তু পাইনি। এর পর সুধের উপর টাকা খুজে সে,তবুও না পেয়ে হাতে থাকা অল্প কিছু টাকা নিয়ে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেন মা।

হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা পরিক্ষা করার পর বুঝতে পারেন তার হার্টের বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই ডাক্তার তার মাকে বলেন রুগী যেন কোন ভারি কাজ না করেন,পূর্নাঙ্গ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। আর যত দ্রুত সম্ভব উন্নত্য চিকিৎসা করার জন্য বলেন।

কয়েকদিন হাসপাতালে থাকা অবস্থায় পাশে অসুস্থ মা ও স্ত্রী কে ছাড়া অন্য কাউকে পাইনি সে। কেউ তার খুজ নিতে যায়নি। টাকা না থাকায় বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসেন সে। বাড়িতে এসে বসে থাকলে তার পরিবারের খাবার আসবে কোথা থেকে??

তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে বেড়িয়ে পরেন ভ্যান গাড়ি নিয়ে। চলতি পথে ঘন্টা খানিক পর তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পরেন। এর পর অন্যের সাহায্যে বাড়িতে ফিরে আসেন।
রাতে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে পরে,কিন্তু পরদিন সকালে সে আর শুয়া থেকে উঠতে পারেনি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে অনন্তকালের জন্য।

এটা কাল্পনিক কোন গল্প নয়, বলছিলাম আমাদের সকলের পরিচিত সহজ সরল মনের মানুষ “রতন মিয়ার” জীবন কাহিনি।

খুবই কষ্ট লাগে আমরা এমন সমাজে বসবাস করি,যেখানে এমন হাজারো অসহায় রতন টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে পরপারে চলে যায়। অথচ সমাজে বিত্তবান সম্পদশালী অনেক মানুষ আছে যারা এসব অসহায় মানুষের কখনো একটু খুজও রাখে না।
ধিক্কার জানায় সেসব সম্পদশালী ব্যক্তিদের।

মহান আল্লাহ তায়া’লা রতন কে পরপারে জান্নাতে শান্তিতে রাখুন আর তার অসহায় পরিবারকে সাহায্য করুন ও ধৈয্য ধরার তাওফিক দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

শ্রীপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা ২০২৫ অনুষ্ঠিত

মোঃ এমদাদ, মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৫নং দারিয়াপুর ও ৭নং সাব্দালপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা...

শার্শায় বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল

শাহারুল ইসলাম রাজ, স্টাফ রিপোর্টার: শার্শা উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম...

বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিনে রাজগঞ্জে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত

মোঃ ইউনুচ গাজী, রাজগঞ্জ : সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজগঞ্জ ব্ল্যাকপাড়া...

খাগড়াছড়িতে সে’না অ’ভিযা’নে মগ লি’বারে’শন পা’র্টির সদ’স্য নি’হত

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মগ লিবারেশন পার্টি–এর অন্যতম সদস্য কং চাইঞো...