Saturday, July 12, 2025

রাজগঞ্জে ভুল ইনজেকশন পুশ করায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যুবক বাদল

Date:

Share post:

ডেস্ক রিপোর্টঃ

রাজগঞ্জ (যশোর) \ হাতুড়ে ডাক্তার কতৃর্ক ভুল ইনজেকশন পুশ করায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের বাদল কর্মকার নামের এক যুবক এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এব্যাপারে ভুক্তভোগি অসহায় এ পরিবারটি কথিত ও হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুুতি নিয়েছে।
জানা যায়. উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের অমুল্য কর্মকারের ছেলে রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী বাদল কর্মকার (৩০) গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে গায়ে মারাত্মক এলার্জি নিয়ে ঝাঁপা বাজারে পল্লী চিকিৎসক পরিচয়দানকারি ডা. আব্দুস সাত্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। কথিত ডাক্তার আব্দুস সাত্তার তার বাম হাতে জোরপূর্বক একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর বাদল কর্মকার বাড়ি আসলে সন্ধ্যার পর থেকে তার বাম হাতে অসহনীয় জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একপর্যায় তিনি মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।
স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ডাক্তার দেখিয়েও ভালো ফল না পাওয়ায় চলতি মাসের ১অক্টোবর সকালে পরিবারের লোকজন তাকে যশোর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপালে ভর্তি করে দেন। সেখানে ৪দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে হাতে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে আসেন এবং গত ৫ অক্টোবর খুলনার হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়। ভর্তির দিন রাতেই তার হাতে অপারেশন করে পুঁজ বের করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ১৫দিন চিকিৎসাধীন থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় অসহায় এ পরিবারটির। এরপর টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা করাতে না পেরে গত ২১ অক্টোবর বাড়ি চলে আসেন বাদল কর্মকার। বর্তমানে তিনি বাড়িতে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
নাগরিক কমিটির সভাপতি ও নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারন সম্পাদক খলিলুর রহমান খাঁন বলেন, হাট বাজারগুলোতে কথিত এসব ডাক্তারদের সাইন বোর্ডে এমনসব ডিগ্রীর নাম লেখা থাকে যা সাধারন মানুষতো দুরের কথা ওষুধ বিক্রেতারাও তাতে আকৃষ্ট হয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধ বিক্রির জন্য তদবীর করতে থাকে।
বৃহত্তর বানিজ্যিক শহরখ্যাত রাজগঞ্জ বাজার ও ঝাঁপাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা এসব ডাক্তার কবিরাজদের দৌরাত্মে রোগীসহ সাধারন মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও রাজগঞ্জ বাজারসহ পার্শ্ববর্তী রোহিতা, খেদাপাড়া, হরিহরনগর, ঝাঁপা, মশ্মিমনগর ও চালুয়াটি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট—বাজারের ফার্মেসীগুলো ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের ধার ধারে না।
রোগের নাম ও উপসর্গ বললেই ফার্মেসী মালিকগুলো তাদের ইচ্ছা মতো ওষুধ দিয়ে থাকেন। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারি ওষুধের সঠিকভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় স্বল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত গ্রাম অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি ক্রমশ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এসকল সাধারণ লোকজনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের এসব কথিত ডাক্তার ও ফার্মেসী মালিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার বলে জানান এ নেতা।
ভুক্তভোগি বাদল কর্মকার জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলার্জি রোগে ভুগছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর ঝাঁপা বাজারে আব্দুস সাত্তার নামের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। যাওয়া মাত্রই ওই চিকিৎসক তাকে ইনজেকশন দেওয়ার কথা বলে। বাদল কর্মকার ইনজেকশন না দিয়ে মুখে খাওয়ার ঔষধ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তুু কথিত ওই পল্লী চিকিৎসক রোগীর কথা না শুনে তার শরীরে জোরপূর্বক ভুল ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার আড়াই ঘন্টা পর তিনি মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি তার নিজ বাড়িতে জীবন—মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তবে এব্যাপারে কথিত ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগি বাদলের পরিবার।
ঝাঁপা বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামছুজ্জামান খোঁকা জানান, আব্দুস সাত্তারের ডাক্তারি কোন সার্টিফিকেট আছে কিনা জানি না। তবে প্রতিদিন ঝাঁপা বাজারে তার চেম্বরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অসংখ্য নারী পুরুষকে এক সাথে এলোপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন এটা জানি।
অভিযুক্ত ডাক্তার আব্দুস সাত্তারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভাই ভুল হয়েছে। বাদল কর্মকারকে প্রাথমিক খরচ বাবদ তিনি ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে আরো টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার ও করেছি। এব্যাপারে এলোপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক বিষয়ে ডাক্তারি সনদ আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে বিষয়টি পত্রিকায় লেখার দরকার নেই বলে অনুরোধ করেন কথিত এ ডাক্তার।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ্বাস জানান, আব্দুস সাত্তারের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

দুর্নীতিবাজ মাহবুবের খুটির জোর কোথায় ? বহিষ্কারের পরেও স্বপদে বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর মাহাবুবুর রহমান।...

নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

অনলাইন ডেস্কঃ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন...

নানার বাড়ি

নানার বাড়ি মুহাঃ মোশাররফ হোসেন যশোর জেলার থানা মনিরামপুর ঝাঁপা গ্রামে বাড়ি আমার , চালুয়াহাটি ইইউনিয়নে নানা বাড়ি মন চাইতো যেতে বারেবার! বুঝবার যখন...

রৌমারীতে নদী ভাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ           

রৌমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নদী ভাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন...