
এমদাদুল হক,মনিরামপুর প্রতিনিধিঃ
বর্তমানে দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে অনুমোদনহীন যৌন উত্তেজক ও বিভিন্ন হোমিওপ্যাথি ধরনের কথিত ওষুধ ও তেলের অবাধ বিক্রি। ‘Natural Solution’, shifacarebd.com সহ বেশ কিছু ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ উত্তেজক ছবি, প্রলোভনমূলক ভাষা এবং ভুয়া চিকিৎসার নামে এসব পণ্য বাজারজাত করছে, যা সরাসরি জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব সাইটে পুরুষাঙ্গ বড় করার ক্রিম, যৌনশক্তি বৃদ্ধির ক্যাপসুল, স্তনবৃদ্ধি, ওজন কমানো, ব্যথা নিরাময়ের নানা প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে যেগুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসনের (DGDA) অনুমোদনহীন এবং কার্যকারিতার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
‘Natural Solution’ ওয়েবসাইটে ‘৭ দিনে স্থায়ী সমাধান’, ‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করুন’, ‘যৌন দুর্বলতার স্থায়ী সমাধান’ ইত্যাদি স্লোগানের পাশাপাশি রয়েছে অশ্লীল ছবি ও প্ররোচনামূলক কনটেন্ট। এসব পণ্যের অর্ডার নেওয়া হচ্ছে মোবাইল নম্বর ও হোম ডেলিভারির মাধ্যমে।
উচ্চমূল্যে ভুয়া ওষুধ বিক্রি: ‘Shifacarebd.com’-এর “বুস্টার ডোজ নিরাময় তেল” একটি উদাহরণ
অনুমোদনহীন ওষুধের দামও রাখা হয়েছে চরম পর্যায়ে।উদাহরণস্বরূপ, shifacarebd.com ওয়েবসাইটে “বুস্টার ডোজ নিরাময় তেল” নামে একটি কথিত যৌন উত্তেজক এবং ব্যথানাশক তেল বিক্রি হচ্ছে।এটির এক পিসের দাম ৮৯০ টাকা, আর দুই পিসের প্যাকেজে ১৬০০ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে।এই পণ্যের সঙ্গে ‘হোম ডেলিভারি ফ্রি’, ‘যেকোনো বয়সে উপকারী’, ‘৭ দিনে ফল’ ইত্যাদি দাবি করে সরল রোগীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে।
এই ধরনের পণ্যের মূল্য, প্রচারণা এবং অসত্য উপকারিতার দাবি দেখে অনেকে ভুলভাবে ধরে নেন এটি কার্যকর ও বৈধ কোনো মেডিকেল পণ্য। অথচ এসব পণ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, অনুমোদন বা নির্ভরযোগ্যতা নেই।আরও ওয়েবসাইট যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে:
bd-sexdoctor.blogspot.com
sexsolutionbd.blogspot.com
Kamukdoktorbd.com
Happy life
এইসব ব্লগ মূলত গুগলের Blogspot প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো বৈধ নিবন্ধন বা চিকিৎসা অনুমোদন নেই।ভুক্তভোগী ও চিকিৎসকদের মতামত:একাধিক ভুক্তভোগী জানান, তারা ফোনে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ওষুধ অর্ডার করেন, পরে ডেলিভারির মাধ্যমে ওষুধ পেলেও খাওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন। কেউ কেউ জানান, পরবর্তীতে অভিযোগ জানাতে গেলে ওই নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এইসব কথিত ওষুধে থাকা উপাদান দীর্ঘমেয়াদে লিভার, কিডনি, স্নায়ু ও হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। যৌন উত্তেজনার নামে বিক্রি হওয়া এইসব ভেজাল ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক এবং মানসিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।আইনি দৃষ্টিকোণ ও প্রশাসনের দায়িত্ব:আইনজীবীরা জানান, ড্রাগ অ্যাক্ট ১৯৪০, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এ ধরনের অননুমোদিত ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা স্পষ্টতই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদ্যোগে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ওয়েবসাইটে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তারা কোনো মন্তব্য দেয়নি।