
ডেস্ক রিপোর্ট
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বিভিন্ন মৎস ঘের কে কেন্দ্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী চাদাবাজ চক্র, বিভিন্ন ঘের মালিক কে চাদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ঘের মালিকরা।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের বারবাগ গ্রামের বিলে মৎস ঘের মালিকরা আতংকে আছেন। জানতে চাইলে তারা জানান স্থানীয় সন্ত্রাসী সবুজ ও তার সহযোগীরা প্রায় প্রত্যেক মৎস ঘেরে চাদা দাবী করে না দিলে হয় মারধর করবে নাহয় মাছের ক্ষতি করবে। সম্প্রতি বেশ কিছুদিন আগেও অসিম সরকার নামে একজন ব্যবসায়ীর হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেয় চাদার দাবীতে, সে সময় এবিষয়ে মামলা ও হয় সে মামলায় জেল থেকে বের হয়ে আবার সবুজ ও তাদের সহযোগীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বসুন্দিয়া ইউনিয়নের বসুন্দিয়া গ্রামের মৎস ঘের ব্যবসায়ী সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে পতিত জমি কিনে মৎস ঘের করে মাছ চাষ শুরু করলে হঠাৎ করে বারবাগ গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাদক কারবারী সবুজ আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে চাদা দাবী করেন। এর পরে নিয়মিত চাদার দাবীতে মোবাইল এবং সরাসরি হুমকি দিতে থাকে এক পর্যায়ে আমি ঘের লিজ দিয়ে জীবন নিয়ে ফিরে আসি।
মৎস ঘের নিয়ে বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাসেল খান কে জানতে চাইলে তিনি জানান বসুন্দিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু ঘের ব্যবসায়ী বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নে ঘের করে মাছ চাষ করে সম্প্রতি বেশ কিছু ব্যবসায়ী তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন বারবাগ এলাকার চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী এই সমস্যা গুলো করছে আমি প্রশাসনের আহবান জানাবো যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেন। চেয়ারম্যান রাসেল খান আরো জানান বেশ কিছু দিন আগে অসিম নামে একজন ঘের ব্যবসায়ীর হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেয় চাদার দাবীতে। তিনি আরো জানান এসব ঘটনায় আসামী আটক হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সংশ্লিষ্ট ঘের মালিকের নাম বলে যে সে এসব করতে বলেছে। তিনি বিষয় গুলা আরো ক্ষতিয়ে দেখার আহবান জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শওকত জাহান সুপ্ত জানান সবুজ একজন সন্ত্রাসীর নামে বেশ কিছু অভিযোগ আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে কিছু মৎস ঘের মালিক আমাদের কে জানিয়েছে আমরা খোজ নিয়ে জানলাম সবুজ একজন মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী সবুজ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হামলা মারধর মাদক মামলা সহ বেশ কিছু মামলা চলমান বেশ কিছু ঘের ব্যবসায়ী কে হুমকির বিষয়টি ও জেনেছি।
ইউপি মেম্বর সুপ্ত আরো জানান ঘের নিয়ে চাদাবাজি মাঝে একটু কম থাকলেও হঠাৎ করে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। শওকত জাহান সুপ্ত বলেন সব আশ্চর্যের বিষয় হলো যখন কোন ঘের কে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সবুজ সহ তার কোন সহযোগী আটক হয় তখন সংশ্লিষ্ট ঘের মালিকের নাম বলে যে সে এই কাজ বা অপরাধ করতে বলেছে। এবিষয়টা আরেকটু খতিয়ে দেখার জন্যে জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আরো জানান গত ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই দিবা গত রাতে বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সদুল্ল্যাপুর গ্রামের বিমল সরকারের ছেলে অসিম সরকারের উপর সবুজ সহ তার সহযোগীরা চাদার দাবীতে হামলা করে এবং চাপাতি দিয়ে তার হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নিয়ে যায় এঘটনায় মামলা হলে সন্ত্রাসী সবুজ কে আটক করে পুলিশ এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো আটকের পর সবুজ তার জবানবন্দিতে হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেওয়া অসিমের ঘের মালিক কে জড়িয়ে বক্তব্য প্রদান করেন যে এই অপরাধ করতে ঘের মালিক ইউসুফ আলী করতে বলেছে এই মামলায় সাবেক সেনা সদস্য ইউসুফ আলী এখনও হয়রানির মধ্যে আছেন বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
সরেজমিনে বাঘারপাড়ার বারবাগ গ্রামের ঘের অধ্যুষিত বিলে গেলে ঘের মালিক আলী হায়দার খানের সাথে কথা হলে তিনি জানান বারবাগ গ্রামে তার মৎস ঘের নিয়ে সবুজ ও তার সহযোগীরা চাদা দাবী করে আমি চাদা দিতে অস্বীকার করায় ঘেরে থাকার ঘরে আগুন দেই এবং ঘেরের দায়িত্বে থাকা চৌকিদার ও তার ছেলে কে মারধর করে তারা এবং নারীদের জোর করে নির্যাতন করে পরবর্তীতে প্রান ভয়ে তারা পরিবার নিয়ে চলে যায়।
চাদার দাবীতে হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেওয়া বসুন্দিয়ার সাদল্ল্যাপুর গ্রামের অসিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই মধ্য রাতে আমি ও আমার পিতা ঘেরে মাছ ছৌকি দেওয়ার সময় হঠাৎ তিন চারজন যুবক এসে আমাকে অস্ত্রের মুখে ফাকা মাঠে জোর করে নিয়ে যায়। এবং আমাকে বলে এখানে ঘের ব্যবসা করিস এক বছর হলো আমাদের সাথে যোগাযোগ করিসনি কেন তখন আমি বলি আমি তো আপনাকে চিনি না তখন তারা আমার হাত পা মুখ বেধে চাপাতি দিয়ে আমার হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নিয়ে যায় এবং বলে এবার তুই যদি বাচতে পারিস বেচে যা। এর পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নি এবং এঘটনায় মামলা দায়ের করেছি এখন প্রায় আমাকে হুমকি দিচ্ছে এর আগে আঙ্গুল কেটেছি মামলা তুলে না নিলে এবার মাথা কেটে নিবো। অসিম আরো জানান ভয়ে সে এখন বাড়ি থেকেই বের হননা। এমনকি মৎস ঘেরেও যাননা কারন সবুজ ও তার সহযোগীরা মামলা তুলে নিতে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে বলেও জানান।
ঘের মালিক জামির হোসেন মোল্লা কে জানতে চাইলে তিনি জানান সবুজ ও তার সহযোগীরা চাদা দাবি করতো আমি চাদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধর করে মোবাইল ও কাছে থাকা কিছু নগদ টাকা কেড়ে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে এলাকার ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ মৎস ঘের মালিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঘের মালিকরা জানান আমরা চাদাবাজি সহ বিভিন্ন সমস্যার কারনে ঘের ছেড়ে দিয়ে চুক্তি ভিত্তিক লীজ দিলেও এখন আরো বেশি আতংকে আছি। কারন জানতে চাইলে তারা জানান যারা এখন চুক্তি ভিত্তিক লীজ নিয়ে ঘের ব্যবসা করছে সেখানে কোন সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ঘের মালিক কেও এসব সন্ত্রাসীরা জড়িয়ে বক্তব্য দেয়। এবং পরবর্তীতে ঘের মালিক কে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে ঘের মালিকরা জানান গত বছর চাদার দাবীতে হামলা করে বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেওয়ার ঘটনায় সবুজ কে আটক করলে সবুজ ঘের মালিক ইউসুফ আলীকে জড়িয়ে বক্তব্য প্রদান করলে সে মামলায় ঘের মালিক ইউসুফ আলী হয়রানির স্বীকার হচ্ছে বলে দাবী করেন সাধারণ ঘের মালিকরা।