
মোঃ বুলবুল হোসেন:
সাগর বিয়ে করেছে এক মাস হয়েছে ।তার স্ত্রী নাম নদী তাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে সাগর। গত এক মাসে বুঝতে পেরেছে এমন ভালোবাসা পেয়ে সাগর অনেক সুখী। সাগর যেমন চেয়েছিল তেমনি একটা মিষ্টি বউ পেয়েছে। সাগরের বাবা-মা কেউ দেখাশোনা করে। এদিকে সাগরের সময় মত সবকিছু গুছিয়ে দেয়। অফিসে যাওয়ার সময় কি কি লাগবে সব। এমন ভালোবাসা দেখে সাগর ভয় হয়।সাগর শুনেছে এই দুনিয়াতে ভালো মানুষ নাকি বেশিদিন থাকে না। সাগর তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু নদী তা দেখে বলে কেন এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাগর বলে কিছু না, মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অফিসের দিকে চলে যায়। একবার অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসার পর সাগর বলল নদী চলো আমরা কোথাও ঘুরে আসি। নদী বলল সমস্যা নাই আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। সাগর আর নদী পরদিন তার বাবা মাকে বলে শহরের কাছে একটি পার্কে চলে গেল। একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্য। পার্কের ভিতর তারা গল্প করতে করতে কখন যে বিকেল হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। নদী বলল এখন তো সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেছে চলো আমরা বাসায় চলে যাই আব্বা আম্মা টেনশন করবে। সাগর বললো ঠিক আছে চলো। এরপর তারা সেখান থেকে বাসায় চলে আসে। দেখতে দেখতে বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। হঠাৎ করে শুনতে পেলো নদীর কাছে সাগর বাবা হতে চলেছে । সাগরের খুশি আর কে দেখে সাগরের পরিবারের সবাই খুশি। এদিকে সাগরের মা-বাবা সবাই নদীকে পছন্দ করে। নদী ও সাগরের বাবা মাকে নিজের বাবা-মার মত দেখে। সাগরের মা বলে সত্যি আমার মনের মত একটা বউ পেয়েছি।
সাগরের গড়ে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। মেয়েটির নাম রাখে বৃষ্টি। বৃষ্টি দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে। বৃষ্টিকে পেয়ে সাগরের মা অনেক খুশি যদিও আমাদের সমাজে বেশি বাক ফ্যামিলি চায় তাদের ছেলে সন্তান হবে। কিন্তু সাগরের বাবা-মা সাগরের মেয়েকে পেয়ে অনেক খুশি ।সাগরও খুশি সাগর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আল্লাহ আপনি যা দিয়েছেন এতেই আপনার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। এদিকে নদী ও খুশি তার মেয়েকে পেয়ে আস্তে আস্তে বৃষ্টি বড় হতে থাকে। বৃষ্টির বয়স যখন ছয় বছর তখন হঠাৎ করে নদীর মাথা ঘুরে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সাগরের মা সাগরকে ফোন দিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে , সাগর এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান । আর যতক্ষণে ডাক্তারের কাছে পৌঁছে যায়। তত তখনে না ফেরার দেশে চলে যায় নদী। এমন মৃত্যুতে সাগর ভেঙে পড়ে এবং তাদের অনাগত সন্তান এতিম হয়ে যায়। সাগরের মেয়ে বৃষ্টি সারাক্ষণ মা মা বলে কাঁদে। সাগরও অফিসে যায় না প্রায় মাস দুয়েক হয়ে গেছে। সরকারি চাকরি করে যার কারনে হয়তো চাকরির সেরকম কোন সমস্যা হবে না। অফিসের বস সাগরকে অনেক ভালোবাসে। আর সাগরের সম্পূর্ণ ঘটনা ও জানে বিদায় তাকে তিন মাসের রেস্ট দিয়েছে। এরপর সাগরের মা বলে বাবা আমি একটা কথা বলি রাখবি।
দেখ বৃষ্টি সারাক্ষণ মা মা বলে কাঁদে ।যদি ওকে একটা মা এনে দেওয়া হয় তাহলে মনে হয় ভালো হবে। মা তুমি কি বলছো আমি আর বিয়ে করতে পারব না ।মা বলল দেখে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। তোর ভবিষ্যৎ পড়ে আছে তাছাড়া মেয়েটারও তো একজন দেখাশোনা মানুষ দরকার। আমরা বৃদ্ধ মানুষ কয়দিনই আর বাঁচবো তাই তুই বিয়েটা করে ফেল। সাগরের বাবা এসেও একই কথা বলল, বাবা তোর মা ঠিকই কথা বলছে। তুই একটা বিয়ে কর আমি একটা মেয়ে দেখে এসেছি । মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল স্বামী মদ খায় অনেক মার দূর করে। মেয়েটার মা-বাবা তাকে নিয়ে এসেছে । তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে মেয়েটা দেখতে মিষ্টি। তুই যদি মেয়েটাকে আনিস তাহলে ভালো হবে। আমাদের সংসারের জন্য দেখ একবার ভেবে কি করা যায়। বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলে না। বাবা-মার কথা মত রাজি হয়ে গেল কারণ বাবা মার সুখী হলে সাগর সুখ পাবে।
পরদিন সাগরকে নিয়ে মেয়ের বাড়িতে চলে গেল । সাগরের বাবা মা আর সাগরের মেয়ে বৃষ্টি মেয়ের বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে সাগর মেয়েটাকে দেখে পছন্দ করলো। মেয়েটার নাম রানী সাগরের বাবা-মা বলল যেহেতু রানীকে আমাদের পছন্দ হয়েছে ।তাহলে আমরা আজকে বিয়ে দিয়ে নিয়ে যাব। সাগরের বাবা-মার কথামতো রানীকে তাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে আসল। দুপুরবেলা রানী যখন বৃষ্টির রুমে খাবার নিয়ে চলে গেল । তখন বৃষ্টি বলল আপনি আমার কাছে আসছেন কেন। মা আমি আসছি তোমাকে খাবার খাওয়াই দিতে রানী বলল, বৃষ্টি তখন বলে না আমাকে খাওয়াই দিতে হবে না। আপনি খাবার রেখে যান আমি পরে খেয়ে নেব। রানী মনে মনে ভাবল হয়তো আমি নতুন যার কারণে আমাকে মেনে নিতে পারছে না । কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েটা হয়তো খেয়ে নিবে কারণ মেয়েটার বয়স এখন ছয় বছর উপরে হয়ে গেছে। তাই সে খাবারটা রেখে চলে আসে।দুপুরবেলা সাগর বললো রানী বৃষ্টিকে খাবার দিয়েছো। রানী বলল হ্যাঁ আমি দিয়েছ। তখন সাগরেগে গিয়ে বলল হ্যাঁ তুমি খাবার দেওনি আমার মেয়েটাকে না খেয়ে আছে আর তোমার সাথে আমার কথা ছিল। আমার মেয়েকে ভালো করে যত্ন নিবে। নিজের মেয়ের মত মানুষ করবে । কই তুমি তার কোনটাই করছো না ।
রানী কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেন না। দূরে তাকিয়ে দেখে বাবার এমন বকা দিতে দেখে বৃষ্টি হাসতেছে। তখন রানী বলল, এই ব্যাপার বুঝতে পারছি তাহলে বৃষ্টি মিথ্যা কথা বলেছে।এ বিষয় নিয়ে আর কিছু বলল না। সাগর বলল পরবর্তী যেন এ ধরনের কোন সমস্যা না হয়। রানী মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ ঠিক আছে। পরদিন সকালবেলায় সাগর রানী বৃষ্টি হাটতে যাবে। তারা সবাই মিলে রওনা দিল। হাটতেছে আর গল্প করতেছে ।এমন সময় রানী খেয়াল করল বৃষ্টি রাস্তার মাঝখানে হাটতেছে। অপর সাইটে থেকে একটি গাড়ি তার দিকে আসতেছে। রানী দৌড়ে গিয়ে জীবনের মায়া না করে বৃষ্টিকে বাঁচিয়ে দেয়। রানী আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দ্রুত রানী কে হাসপাতালে নেওয়া হয়। রানীর এমন আচরণ দেখে বৃষ্টি কেঁদে ফেলে । বলে আমার জন্য আমার মা মরতে বসেছে আর বাবাকে বলতে থাকে। বাবা আমি তোমাকে এতদিন যা বলেছি মার সম্পর্কে সব মিথ্যা কথা। মা আমাকে নিয়ম মিত আমার খেয়াল রাখছে ।আমি তোমার কাছে মিথ্যে কথা বলেছি। আমি মার কাছে যাবো উনার কাছে মাফ চাবো। আমাকে মার কাছে নিয়ে যাও ।এর মধ্যে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। এসে বলে বিপদমুক্ত জ্ঞান ফিরেছে । রোগীর সাথে আপনার কথা বলতে পারবেন। দ্রুত রুমে গিয়ে বৃষ্টি তার মাকে বলে, মা আমাকে মাফ করে দাও। আর কখনো এরকম করবো না। আমার কারনে তোমার এই অবস্থা হয়েছে। আর তখন রানী বলতে থাকে । সত্যি আমি বৃষ্টির মা হতে পেরেছি।