Tuesday, October 14, 2025

আজ মহাষ্টমী- দুর্গাপূজার স”মাপ্তি লগ্ন শুরু

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাসঃ

অষ্টমী পূজা হলো দুর্গা পূজার একটি গুরুত্ব পূর্ণ অংশ। অষ্টমীর দিনে অনেক মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে দেবী দুর্গাকে নিজের মনের ইচ্ছা জানায়। এই দিন চামুন্ডা রূপে যেমন দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় তেমনি কুমারী রূপেও পূজা করা হয়। একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা।

এবছর মহাষ্টমী তিথি শুরু- ১৩ আশ্বিন, ইংরেজী ৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার )পূর্বাহ্ন ৯টা ৫৮ মিনিট এবং শেষ- দিবা – ২টা ১৪ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে ।

তন্ত্রশাস্ত্রমতে, কুমারী পূজা হলো ষোলো বছরের অনধিক অরজঃস্বলা কুমারী মেয়েকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা। বিশেষত দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন।

এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।বৃহদ্ধর্মপুরাণ মতে, দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন। তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে অভিহিত করা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী মন্দিরে আরাধ্যা দেবী কুমারী রূপেই পূজিতা হন। যেহেতু কুমারী পূজা তান্ত্রিক মতবাদের প্রতিফলন তাই ভারতের সব শক্তিপীঠেই কুমারী পূজা হয়ে থাকে।
কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। এক বছরের কন্যা সন্ধ্যা, দুই বছরে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছ’বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুঞ্জিকা, ন’বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালক্ষ্মী, চৌদ্দ বছরে পঠিনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অম্বিকা নামে অভিহিতা হয়। তন্ত্র মতে, কন্যা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত তারা দেবীরূপে পূজিত হতে পারে। আরও বলা হয় যে, একটি কুমারী কন্যাকে খাওয়ানোর অর্থ বিশ্বভুবনকে খাওয়ানো।

সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ষোলো বছরের কম বয়স্কা কোনো কুমারী বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করার রীতি আছে।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর, স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে প্রথম কুমারী পূজার সূচনা করেন।
কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো- নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে বর্ণিত আছে, এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন।
অন্যদিকে হিন্দু শাস্ত্রে নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে বসাতে এবং দেবীর কুমারী রূপের আরাধনা করতেই এই পুজোর বিধান দেওয়া হয়েছে। মনের অন্তরের পশুত্বকে সংযত রেখে নারীকে সম্মান জানানোই কুমারী পুজোর প্রধান ও মূল লক্ষ্য।

দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা । দুর্গাপূজার অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে ৪৮ মিনিট এই পূজা হয়ে থাকে। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট নিয়ে মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৩ আশ্বিন মঙ্গলবার সন্ধে ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে সন্ধে ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত চলবে সন্ধি পুজো। ৬টা ৩১ মিনিটে সন্ধি পুজোর বলিদান ও সন্ধি পুজো সমাপন। আবার গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকামতে ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৩ আশ্বিন দুপুর ১টা ৪৪ মিনিটে সন্ধি পুজোর বলিদান ও দুপুর ২টো ৮ মিনিটের মধ্যে সন্ধি পুজো সমাপন।

অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সন্ধিপুজোর আয়োজন করা হয়। এই সময়ে মা দুর্গা চামুণ্ডা রূপে পূজিত হন। কারণ, এই সেই বিশেষ ক্ষণ যখন দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন । চণ্ড ও মুণ্ড ছিলেন অসুরের দুই বন্ধু। মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ চলার সময়, চণ্ড ও মুণ্ড ষুদ্ধের চুক্তি ভেঙে পেছন দিক থেকে দেবীকে আক্রমণ করেছিলেন। তাতেই দেবী রেগে গিয়ে চণ্ড ও মুণ্ডের মুণ্ড কেটে নেন। সন্ধিপুজোর মাহেন্দ্রক্ষণেই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন।দুষ্টের দমন ও অশুভ শক্তির বিনাশকাল বলে সন্ধিপুজোর এই সময়টাকে অত্যন্ত শুভক্ষণ বলে মনে করা হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন নিয়ম জড়িয়ে রয়েছে।

বিশেষ করে দেবীর পায়ে ১০৮টি লাল পদ্ম উৎসর্গ করা হয়। এর পাশাপাশি ১০৮টি প্রদীপও উৎসর্গ করতে হয়। কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুযায়ী, রাবণকে বধ করতে আশ্বিন মাসেই রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন। সেখানেও সন্ধিপুজোয় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ আছে, শিবভক্ত রাবণকে সুরক্ষা দিতেন পার্বতী। তাই ব্রহ্মা রামকে শিবের স্ত্রী পার্বতীকে পুজো করে তাকে তুষ্ট করতে পরামর্শ দেন। তাতে রাবণ-বধ সহজসাধ্য হবে। ব্রহ্মার পরামর্শে রাম শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের মহাপুজোর আয়োজন করেন।

১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে মহানবমী পুজোর পরিকল্পনা করেন রাম। হনুমান তাকে ১০৮টি পদ্ম এনে দেন। তার থেকে একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন মহামায়া । একটি পদ্ম না পেয়ে রাম নিজের একটি চোখ উপড়ে দুর্গাকে নিবেদন করতে গেলে, দেবী পার্বতী আবির্ভূত হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন।

এই পূজা সম্পন্ন হয় তান্ত্রিক মতে। এই পূজায় দেবীকে আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুনরাচমনীয়, । এছাড়াও পুংদেবতার তৈল, পৈতা, উত্তরীয় (চাদর), মালা, তাম্বূল (পান); স্ত্রীদেবতার শাঁখা, সিন্দুর, আয়না, চিরুনি, কাজল, আলতা এই ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়। এই সময় বলিকৃত পশুর স্মাংস-রুধি (মাংস ও রক্ত) এবং কারণ (মদ) দেবীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়।

যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয়, তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি

Previous article
খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা বলবৎ: জনজীবন স্থবির, দূর পাল্লার পরিবহন বাসগাড়ি গুলো ছেড়ে গেছে ক্যহলাচিং মারমা খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। স্থবির হয়ে আছে জনজীবন। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। একই অবস্থা জেলার গুইমারা উপজেলায়। উপজেলায় গতকাল সংঘর্ষের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।  তবে নিরাপত্তার কারনে যানবাহন ও মানুষের চলাচল সীমিত রয়েছে। সাধারণ মানুষের মাছে ভোগান্তি বেড়েছে, দোকান পাট বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ। শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও জোরদার রয়েছে । খাগড়াছড়ি চলমান সড়ক অবরোধ খাগড়াছড়ি-ঢাকা, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচলে শিথিল করেছে জুম্ম ছাত্র জনতা। আজ দুপুর ১২ টার পর থেকে অবরোধ খাগড়াছড়ি ঢাকা, খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম দূর পাল্লার রুটের পরিবহনগুলো ছেড়ে গেছে। মানুষের মাঝে কিছুতা স্বস্তি ফিরেছে। কয়েক দিন পরিবার থেকে দূরে থাকায় চিন্তিত ছিল আজ শিথিল করেছে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরছে। টুরিস্ট রোকেয়া বেগম বলেন ঢাকা থেকে আসছি, ঘুরার জন্য সাজেকে গেছি সাজেক থেকে ফেরার পথে অনেক কষ্ট হয়েছে অবরোধের কারণে, খাগড়াছড়িতে দুইদিন ধরে আটকায় আছি জুম্ম ছাত্র জনতা পর্যটকের জন্য আজ দুপুর ১২ঃ০০ টা থেকে শিথিল করেছে তাই আমি মনের আনন্দে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। আরেক যাত্রী চট্টগ্রাম থেকে আসছি, অবরোধের কারণে আমার মতো অনেক যাত্রী আছে ঠিকমতো টিকেট ও পাচ্ছি না। কোনো রকম শেষে টিকেট পেয়েছি, ভালো শিট পায়নি তারপরেও চলে যাবো। খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো: রোকন উদ্দিন বলেন, দুপুর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে শহরের কাউন্টার থেকে কোনো অসুবিধা নেই। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, ধর্ষণ বিষয়ে পুলিশ একজনকে আটক করে। আসামিকে ৬ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। জেলা সদরে হামলা, সংঘর্ষ ও ভাংচুরের প্রতিটি ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
Next article

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

‎মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ সমন্বিত উদ্যোগ,প্রতিরোধ করি দূর্যোগ! এ প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়নে সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস...

আজ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল বিজয়া সম্মেলনী

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিষ্ণুপুর এর আমতলায় জেলা...

রৌমারীতে ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানব’বন্ধন

লিটন সরকার রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : রৌমারী উপজেলার বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস চলাকালিন সময়ে মানববন্ধন করানোর...

বগুড়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়া সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকায় “বারুইপাড়া সোনালী উন্নয়ন সংঘ”-এর উদ্যোগে “বৃক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার...