
এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ
সরকারি সমস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মস্থলে যোগদান সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষিত গেজেট মোতাবেক প্রত্যেক দপ্তরের প্রধান থেকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে দৈনিক কার্যদিবসের সকাল ৯টায়(নয়) অফিসে যোগদানের নির্দেশনা আছে! ৯টায় শুরু হয়ে দুপুরে নামাজ ও খাওয়ার জন্য ১ঘন্টার বিরতী দিয়ে অফিস চলবে একটানা বিকাল ৫টা(পাঁচ) পর্যন্ত।
দপ্তর ভিত্তিক সরকারি সেবা অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া শতভাগ নিশ্চিত হতে প্রতিটি দপ্তরের অফিস কক্ষ সহ প্রশাসনিক এরিয়াতে ৩য় পক্ষ কেউ অর্থাৎ সেবাদান ও গ্রহীতার মধ্যস্থাকারী (দালাল) প্রবেশ নিষিদ্ধ সহ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া আছে।
এ সমস্ত নিয়মনীতি না মেনে অসুস্থ্য সেবাদানে যে সমস্ত দপ্তর চলছে,তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে আজকের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন! সরেজমিনে পাওয়া তথ্য মোতাবেক,মণিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সঠিক সময় আসেন না অফিসে,আবার কেউ কেউ বিকাল ৪টার আগেও অফিস ত্যাগ করেন।দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেবা গ্রহীতারা ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ইচ্ছা মত অফিস করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
মঙ্গলবার (১৯ শে আগষ্ঠ) সকালে ধারনকৃত ভিডিওর তথ্যের সময়নুযায়ী ঘড়ির কাটায় সকাল ১০টা বেজে ১০ মিনিট! মণিরামপুর সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে গেলে নিচতলায় সার্টিফিকেট সহকারি মোঃ আলমগীর হোসেনের কক্ষের দরজা বন্ধ। ২য় তলার ৩টি রুমের ৪জন কর্মকর্তা নাই ৪জন।তবে ভূমি অফিসের ভিতরে ঢুকেই গেটের শুরুতেই ১টি দালাল চক্র তাদের কাজ করে চলেছে।
তথ্য আছে, পৌরসভার দূর্গাপুর গ্রামের জৈনক আবু বক্কর সহ ২/৩ জন ব্যাক্তি(৩য়) বিভিন্ন ধরনের ভূমি সেবা দ্রুত করে দেবার কথা বলে অফিসিয়াল কর্মকর্তাদের হাত করে প্রতিনিয়ত সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে মোটা বানিজ্য করে নিচ্ছে। যার দায়ভার পুরটাই পড়ছে সহকারি কমিশনার ভূমি নিয়াজ মাখদূমের উপর।
তথ্য মোতাবেক,নিচতলায় এক রুমে সার্টিফিকেট সহকারি মোঃ আলমগীর হোসেন ও সায়রাত সহকারি সুমন কুমার চৌধুরীর চেয়ার বরাদ্ধ তবে মঙ্গলবার ঐ ঘরটার দরজা বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
২য় তলায় সার্ভেয়ার মোঃ তহুরুল ইসলাম সেবা দেন সেটাও তালা বদ্ধ।
২য় তলায় আরেক সায়রাত সহকারি আঃ গফফার ও আয়শা খাতুনের রুম খোলা তাকলেও সেবা নিতে আসা লোকজন ছাড়া পাওয়া যায়নি কাউকে। এই ২জন কর্মকর্তার কাছে সেবা নিতে আসারাও জানিয়েছে ক্ষোভ।তারা জানান,সকালে এসেছি এখনো অফিসের কর্মকর্তাদের কাউকে চেয়ারে পায়নি।এদিকে সহকারি কমিশনার ভূমির সার্টিফিকেট সহকারির কার্যালয়ের ভিতরের ফটকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন ভূমি সেবা সহায়তায় জরুরী প্রয়োজনে কল করতে যে মোবাইল নং সম্বলিত প্রচারিত নোটিশ হতে নেওয়া মোঃ আলমগীর হোসেনের নাম্বারটিতে একাধিক বার কল দেওয়ার চেষ্টা করলেও সংযোগ ছাড়ায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফোন কল ব্যার্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সেবা গ্রহীতারা।তথ্য আছে,১৯শে আগস্টের আগের কর্মদিবসে(১৮ই আগষ্ট) মোঃ আলমগীর হোসেন বিকাল ৪টার আগেই অফিস ত্যাগ করেন।
ভূমি সেবা আইনে গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তার ফোন কলে না পাওয়াটাও এক ধরনের বড় অপরাধের শামিল বলে এক সিনিয়র আইনজীবী মন্তব্যে বলেছেন,উচ্চমানের সেবা কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ড নেহাতি দায়সারা ছাড়া আর কিছুইনা।
উল্লেখ্য,মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্ম দিবসের ১ঘন্টা অতিবাহিত হলেও মণিরামপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইচ্ছা মতো অফিস যাতায়ত,খামখেয়ালীপনা,স্বক্রিয় দালাল চক্রের আনাগোনা সহ বেহাল দশার অভিযোগ কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাওয়ার পর অনুসন্ধানেও তার সত্যতার দৃশ্য ফুটে উঠেছে এই প্রতিবেদনে।
এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার ভূমি কার্যালয়ের সার্টিফিকেট সহকারি মোঃ আলমগীর হোসেনের সাথে কথা বলতে গেলে নিজের অপরাধকে ছাপিয়ে অফিস কক্ষতেই এ প্রতিবেদকের সাথে উচ্চস্বরে বিভিন্ন ধরনের অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্ত এবং খিটখিটে মেজাজ প্রদর্শনে লোকসমাগমের অফিস কক্ষ স্তব্ধ হয়ে যায়।মোঃ আলমগীর হোসেনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের মতো বাকি অনুপস্থিত কর্মকর্তা সুমন কুমার চৌধুরীর বাড়িতে পানি উঠাতে কেশবপুর হতে আসতে দেরী হয়েছে,সার্ভেয়ার মোঃ তহুরুল ইসলামের বাসা হতে আসতে বেশি সময় লাগে!এমন করে ভিন্ন ভিন্ন সব বাহানার কথা জানিয়েছে বাকি অফিসারেরা।
পরবর্তীতে মণিরামপুর সহকারি কমিশনার ভূমি নিয়াজ মাখদূম’কে অবগত করা হলে তিনি জানান,দালাল চক্রের সাথে সম্পৃক্ততার সন্দেহজনক কয়েক জনকে নিজস্ব প্রয়োজন ব্যাতীত আমাদের প্রশাসনিক এরিয়াতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।