
সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি:
নড়াইল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে।
১৪ ডিসেম্বর (শনিবার) সকালে নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়-এর সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান এর সভাপতিত্বে ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় আলোচনা সভায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, ছাত্র-প্রতিনিধি, ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সুধীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াতর মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরুর পর নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থী ১৪ ডিসেম্বর শোকাবহ দিনটি সম্পর্কে তাঁদের আত্মোপলব্ধি ও অনুভূতি চমৎকার শব্দচয়নে অত্যন্ত সাবলীলভাবে তুলে ধরেন।
পরে আজকের শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের অংশ হিসেবে এদেশের ইতিহাসের সকল শহিদের অমূল্য আত্মত্যাগকে স্মরণপূর্বক তাঁদের আত্মার শান্তি ও মুক্তির পাশাপাশি দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করে উক্ত সম্মেলন কক্ষে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
পরে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বাংলাদেশের ইতিহাসের সহস্রাধিক শহিদ বুদ্ধিজীবীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে উপস্থিত সকলের প্রতি দেশপ্রেম ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি
আগত কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তাদের মেধার যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে তোলার উপদেশ দেন।
সেই সাথে তাদেরকে বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাসসহ সকল বিষয়ে জ্ঞানার্জনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নিজ নিজ দেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপুল অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মেধাবীদেরকে আকৃষ্ট করছে। কাজেই অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে অবশ্যই মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করতে শিখতে হবে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাত্রি থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়েই এদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ নানান পেশা ও ক্ষেত্রের মেধাবী মানুষেরা নির্বিচারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন।
১৪ই ডিসেম্বরে আসন্ন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা অপশক্তিসমূহের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে সুনির্দিষ্টভাবে এদেশের বহু সংখ্যক শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক, গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশ ও জাতির এ অপূরণীয় ক্ষতি স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে আজও পূরণ হবার নয়। তবুও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের কর্মময় জীবন, নিরন্তর জ্ঞানার্জনের স্পৃহা, অকুণ্ঠ দেশপ্রেমের চেতনা, সদা অনুকরণীয় আদর্শ ও মানবতাবাদী জীবনদর্শন যেন আমরা এবং আমাদের তরুণ প্রজন্ম যথাযথভাবে ধারণ করতে পারি, সযত্নে লালন করতে পারি এমনটিই হোক আজকের শোকাবহ এ দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা। এবং আমরা যদি আমাদের চিন্তায় ও কর্মে দেশপ্রেম জাগ্রত করে যার যার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি, তবেই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের অমর স্মৃতির যথার্থ মূল্যায়ন সম্ভব।