Wednesday, November 5, 2025

মণিরামপুরে গৃহবধূ হাত-পা মুখ বেঁধে নির্যাতন

Date:

Share post:

মনিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধিঃ

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলামের একমাত্র কন্যা,মোছাঃ লিজা খাতুন এর সাথে একই গ্রামের আঃ সামাদ সরদারের ছেলে মোঃ মুস্তাক আহমেদ (লিম)-এর পারিবারিক ভাবে ৭ বছর পুর্বে বিয়ে হয়। বিবাহের কিছু দিন যেতে না যেতেই শশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিয়ে আসতে বলে স্বামী মুস্তাক আহমেদ লিম। কয়েক দফায় টাকা এনে দেয় লিজা।এর মাঝে তাদের কোল জুড়ে এক কন্যা সন্তান জন্ম নেই। তার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে যায় স্বামী মুস্তাক আহমেদ লিম। শাশুড়ীর ব্যবহার যেনো সিনেমার দরজাল ভিলেন নারীকেউ হার মানায়। ছেলে কে উসকিয়ে দিয়ে যৌতুকের দাবিতে লিজার উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
এভাবে সিনেমা স্টাইলে লিজা খাতুনের স্বামী শ্বশুর, শাশুড়ির অমানুষিক নির্যাতন চলতে থাকে।এভাবে ৭ টি বছর স্বামী শশুর শাশুড়ী ভাল ব্যবহার করবে এমন আশায় ধৈর্য ধরে সংসার করতে থাকে। কিন্তু তবুও হয়নি কেনো ফয়দা, টাকার লোভে একের পর এক চলতে থাকে যৌতুক দাবি।টাকা সময় মতো না নিয়ে আসতে পারলে মারপিট করে ফেলে রাখা হয় লিজা কে। লোভী শশুর শাশুড়ী, স্বামী মিলে মেরে বেহুঁশ করে রাখে যৌতুক লোভী স্বামী।
গত শনিবার ১৭ আগস্ট যৌতুকের টাকা না নিয়ে আসাই শাশুড়ী শশুর, স্বামী মুস্তাক আহমেদ লিম সংঘবদ্ধ ভাবে লিজাকে মারপিট করে গুরুত্ব আহত করে। তিনি বর্তমানে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এমন নির্মম নির্যাতনের খবর পেয়ে লিজার কাছে ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলে তিনি ঘটনার বিবরণ দেই।আমি লিজা খাতুন দীর্ঘ ৭ বছর বিয়ে হলেও ৭টি মাস আমি শান্তিতে থাকতে পারি নাই। আমাকে খেতে না দিয়ে মারপিট করা হতো।আমি গরীব ঘরের সন্তান আমাকে প্রতিনিয়ত বাবার বাড়ি থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আসতে বলতো।টাকা পয়সা না নিয়ে আসলে মারপিট করতো। কিছু কিছু সময় হাত পা মুখ বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে মারতো। আমার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সব কিছু মেনে নিতাম। আমার সাথে সাতটি বছরের ভেতরে ৭ টা মাস ভালো ব্যবহার করেনি। প্রতিনিয়ত গালিগালাজ, মারপিট করতো।আমি সব সময় আতংকে থাকতাম।কিছু কিছু সময় মারপিট করে ফেলে রাখতো, আমি পানি চাইলেও পানি খেতে দিতো না। গলা টিপে ধরে রাখতো আমি নিশ্বাস নিতে পারতাম না। তখন আমার চোখ লাল হয়ে যেতে আমার গা হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসতো আমি মনে করতাম আমি মনে হয় মরে যাচ্ছি।এমনভাবে শরীরের আঘাত করে আমার হুঁশ থাকে না। বারবার আমাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলে। টাকা না আনতে পারলে মেরে ফেলা হবে আমাকে ও আমার সন্তান কে। এভাবে কান্নাকাটি করতে করতে
লিজা আরো বলেন, আমার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি প্রচুর অর্থলোভি এবং অসামাজিক। সামাজে কারোর সাথেই মিশে চলে না এমনকি আমাকেও কারোর বাড়ি যেতে দেয়না। আমাকে মারপিট করা কালিন আমার আকুতি মিনতি শুনে আশপাশের প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে আসলে তাদের কে গালিগালাজ করে শশুর শাশুড়ী, ও আমার স্বামী।
আমাকে মারপিট করলে বাঁচার জন্য যদি দৈড়ে আশপাশের প্রতিবেশীদের বাড়ির দিকে গেলে তাদের কে হুমকি দিয়ে আমাকে বের করে দিতে বলে।
লিজা আরো বলেন, আমার বাবা একজন গরীব, মানসিক ভারসাম্যহীন পতিবন্ধী এবং অসহায় মানুষ। আমার বাবা তার ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে চলে। আমার চাচারা বড়লোক আর এই বড়লোক দেখেই আমাকে লোভে পড়ে বিয়ে করে মুস্তাক আহমেদ লিম। মাঝে মাঝে তার নির্যাতনের সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছি কয়েকবার। কিন্তু আমার মেয়ের কথা ভেবে পারিনি। সুখে থাকার জন্য আমার বাবার বাড়ি থেকে কয়েক দফায় নগদ টাকা সাংসারিক মালামাল নিয়ে যাই এই শ্বশুর বাড়ি। কিন্তু তারা তাতেই খুশি হয়নি।
হঠাৎ গত ১৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে আবার টাকা আনতে বলে বাবার কাছে ফোন দিতে বলে, কিন্তু আমি আমার বাবাকে বলি নাই। এই কারনে পর দিন সকাল ১৭ই আগস্ট শুক্রবার সকাল অনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ির উপস্থিতেই আমার হাত-পা মুখ বেঁধে লোহার রড বা জাতীয় কিছু দিয়ে সমস্ত শরীরে আঘাত করে। সর্বশেষ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস হত্যা করার চেষ্টা করে। আমি হাত মাটির সাথে থাবড়ে থাকি, আমার জীবন চলে যাচ্ছে বুঝতে পারছি। তখনি একপর্যায়ে আমার গলা থেকে গামছা ছেড়ে দেয় আমি বেহুশ হয়ে পড়ি। প্রতিবেশীরা আমার বাবার বাড়িতে সংবাদ দিলে আমার বাবা চাচারা শুনে আমার শ্বশুর বাড়ি আসে। আমাকে বেহুশ দেখে ও মারপিটের আঘাত দেখে
আমার বাবা ও চাচারা প্রতিবাদ করলে। আমার স্বামী এবং শ্বশুর, শাশুড়ি আমার বাবা চাচাদের গালিগালাজ করে ও মারপিট করার হুমকি দেয়। পরিস্থিতি দেখে আমার বাবা চাচারা আমাকে নিয়ে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আমি একটা মেয়ের মা, আমার একটা ছোট মেয়ে আছে, এই মেয়ে নিয়ে এখন কোথায় যাব। আমি এই অমানুষিক নির্যাতনের বিচার দাবী করছি।আমার মতো এমন গরীব ঘরের মেয়ে যেনো কেউ এভাবে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার না হয়। এই নির্যাতনের চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। আমি আমার শশুর শাশুড়ী,ও আমার স্বামীর বিচার চাই, কেঁদে কেঁদে বেহুশ হয়ে পড়ে।এই ঘটনার বিষয়ে তার স্বামীর নিকট জানার জন্য ফোন করিলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

নড়াইলে সদরে ৭ লক্ষ টাকার ন”কল বীজ ধংশ ব্যবসায়ীকে  জ”রিমানা

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল সদর উপজেলায় বিপুল পরিমাণ ভেজাল বীজ জব্দ ও ধংশ করা হয়েছে। এ ঘটনায়...

যশোরে মির্জা ফখরুল ইসলামের আগমনে মণিরামপুরে শুভেচ্ছা মিছিল-ও লিফলেট বিতরণ

এম ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: ৬ই নভেম্বর, যশোর টাউনহল ময়দানে, সাবেক মন্ত্রী, ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত...

বগুড়া সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে আনন্দ মিছিল

রিপন বগুড়া প্রতিনিধি ঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ সদর আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান মনোনীত হওয়ায় মঙ্গলবার...

যশোরে স্বর্ণের বার’সহ যুবক আ”টক

সোহেল রানাঃ যশোরে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা ৩১৯.৪৮ গ্রাম ওজনের ৩টি স্বর্ণের বারসহ ওসমান গনি(৩০) নামে এক যুবককে...