Thursday, November 6, 2025

রোজা রাখলে সারা বছর রোগমুক্তির প্রমাণ

Date:

Share post:

মুহাঃ মোশাররফ হোসেনঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই রোজার প্রতিদান দেব। সব ইবাদতই তো আল্লাহর জন্য, তাহলে রোজাকে আল্লাহ কেন বললেন ‘রোজা আমার জন্য’? আসলে অন্য সব ইবাদত করার পাশাপাশি তা দর্শনের সুযোগ ও মনোভাব থাকে, যেমন—নামাজ, হজ, জাকাত ইত্যাদি। কিন্তু রোজা আল্লাহ এবং বান্দা ছাড়া প্রদর্শনের বা জাহির করার কোনো সুযোগই থাকে না।

আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যই আমাদের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের মূল নিয়ামক। এই আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম উপায় হলো রোজা। দিনে রকমারি খাবারের প্রাচুর্য্য থাকার পরও বান্দা তা মুখে তোলে না। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে গেলেও পানি পান থেকে বিরত থাকে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে খাওয়া হয় না।

এদের উদ্দেশে হাদিসে বলা আছে, যে আল্লাহ ও তার রসুলের (স.) আনুগত্য করে, সে-ই সফলকাম। বান্দা যেহেতু শুধু আল্লাহর হুকুম পালন এবং সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, তাই আল্লাহ তাআলা নিজ হাতেই তার পুরস্কার দেবেন। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদারের জন্য রয়েছে দৈহিক ও মানসিক উত্কর্ষ সাধন, আত্মিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতিসহ অশেষ কল্যাণ ও উপকার লাভ করার সুযোগ। রোজা মানুষকে সংযমী ও শুদ্ধ করে এবং অশ্লীল-মন্দ থেকে বিরত রাখে।

আর সে জন্যই প্রত্যেক মুমিন মুসলমান, সুস্থ অথবা রোগাক্রান্ত, সবাই রোজা রাখতে চান এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চান। তবে রমজানে রোগীরা প্রায়ই রোজা রাখবেন কি রাখবেন না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। অবশ্য কী কী অবস্থায় রোজা রাখা যাবে বা যাবে না, তার সুস্পষ্ট বিধান শরিয়তে আছে। আবার সুনির্দিষ্ট কারণে রোজা না রাখতে পারলে তার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণস্বরূপ কাজা, কাফফারা, ফিদায়া বা বদলি রোজা রাখার সুস্পষ্ট ব্যবস্থাও আছে।

কিন্তু তার পরও রোজা পালনে যে আনন্দ, অনুভূতি, আত্মিক পরিতৃপ্তি, এর সঙ্গে সংযম, কুপ্রবৃত্তি দমন, লোভ-লালসা, হিংসা, প্রতিহিংসা ইত্যাদি ত্যাগ করার যে আলোকোজ্জ্বল আমেজ-অনুভূতির চর্চা হয়, তা রমজানের রোজা ছাড়া অন্য কোনোভাবে লাভ করা যায় না। তাই রোগাক্রান্ত অবস্থায়ও অনেকেই রোজা রাখতে চান। অনেকে এমনো বলেন, মরি মরব, বাঁচি বাঁচব, তবু রোজা ছাড়ব না। আসলে রোজাদারের দৃঢ়তা আর মনোবল অবশ্যই রোজা রাখতে সহায়ক হয়।

রমজানে বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিতে ভুগছেন, তাদের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে রোজা রাখা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও রোজা রাখতে তারা প্রবল আগ্রহী। তারা যদি চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজার মাসের জন্য ওষুধ সেবনবিধি ঠিক করে নিতে পারেন, তবে সহজেই রোজা রাখতে পারেন। এতে রোজা ভাঙার বা রোজা থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না।

রোজা, রোগ ও আপনার স্বাস্থ্যঃ
রোজা রাখার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মণ্য করা নয় বরং শরীরকে সামান্য কিছু কষ্ট দিয়ে দৈহিক ও আত্মীক উত্কর্ষ সাধন। শুধু তাই নয়, অনেক রোগের বেলায় রোজায় ক্ষতি না হয়ে বরং বহু রোগব্যাধির প্রতিরোধক এবং আরোগ্যমূলক চিকিত্সালাভে সহায়ক হয়। রোজায় স্বাস্থ্যের সমস্যার চেয়ে বরং স্বাস্থ্যের উপকারই বেশি হয়।

ডায়াবেটিক রোগীঃ
রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ। ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানা রকম উপকার পেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আর রোজা রাখা হতে পারে এক অন্যতম উপায়। এতে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ ও সুন্দরভাবে করা যায়। যারা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎসাব্যবস্থা।

যারা ইনসুলিন নেন বা মুখে অন্য ওষুধ খান, তাদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। তবে ডাক্তারের নির্দেশমতো ইনসুলিন বা মুখে খাওয়ার ওষুধ সমন্বয় করে নিতে হবে। শুধু রক্তের গ্লুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা ডায়াবেটিক রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।

রক্তের কোলেস্টেরলঃ
যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, রোজা তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। রোজা ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়াতে এবং মন্দ কোলেস্টেরল (এল ডি এল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত ওজনঃ
যাদের ওজন অতিরিক্ত, তাদের ক্ষেত্রে রোজা ওজন কমানোর জন্য এক সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ। ওজন কমে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায় যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, বাতের ব্যথা, অস্টিও আরথ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি। আবার ওজন কমাতে পারলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে আসে।

হৃদেরাগী এবং উচ্চ রক্তচাপঃ
রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে যারা হূদেরাগে অথবা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য রোজা অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীরের, বিশেষ করে রক্তনালির চর্বি হ্রাস পায়, রক্তনালির এথেরোসেক্লরোসিস কমাতে সাহায্য করে, যা হূদেরাগের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডাক্তারদের নির্দেশমতো ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।

পেপটিক আলসারঃ
একসময় ধারণা ছিল, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না। তাদের ঘনঘন খেতে হবে, অনেকক্ষণ পেট খালী রাখা যাবে না। অনেকে মনে করেন, রোজা পেপটিক আলসারের ক্ষতি করে এবং অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ঠিক নয়। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার ফলে অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায়। তাই সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং সঠিক খাবার দিয়ে সাহরি ও ইফতার করলে রোজা বরং আলসারের উপশম করে, অনেক সময় আলসার ভালো হয়ে যায়। এছাড়া রোজা গ্যাস্ট্রাইটিস, আইবিএস ইত্যাদি রোগেও উপকারী। প্রয়োজনে গ্যাস্ট্রিক-আলসারের ওষুধ রাতে একবার বা দুবার ব্যবহার করা যায়।

শ্বাসকষ্ট বা এজমা রোগীঃ
যারা এইসব রোগে ভোগেন, তাদেরও রোজা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। রোজায় এ ধরনের রোগ সাধারণত বাড়ে না, বরং চিন্তামুক্ত থাকায় এবং আল্লাহর প্রতি সারাদেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মণিরামপুরে অবৈ’ধযানে কে’ড়ে নি’লো ২টি তা’জা প্রা”ন এলাকায় শো”কের ছা”য়া

এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ মনিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর এলাকার রনজিত দাস যিনি পেশায় একজন কলেজ শিক্ষক ও তার স্ত্রী...

নড়াইলে সদরে ৭ লক্ষ টাকার ন”কল বীজ ধংশ ব্যবসায়ীকে  জ”রিমানা

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল সদর উপজেলায় বিপুল পরিমাণ ভেজাল বীজ জব্দ ও ধংশ করা হয়েছে। এ ঘটনায়...

যশোরে মির্জা ফখরুল ইসলামের আগমনে মণিরামপুরে শুভেচ্ছা মিছিল-ও লিফলেট বিতরণ

এম ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: ৬ই নভেম্বর, যশোর টাউনহল ময়দানে, সাবেক মন্ত্রী, ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত...

বগুড়া সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে আনন্দ মিছিল

রিপন বগুড়া প্রতিনিধি ঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ সদর আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান মনোনীত হওয়ায় মঙ্গলবার...