Thursday, March 13, 2025

সাম্প্রতিক পরিবেশ বিপর্যয় ও করণীয় প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত 

Date:

Share post:

আহমেদ হানিফঃ

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাম্প্রতিক পরিবেশ বিপর্যয় ও করণীয়:প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম শীর্ষক সেমিনার।গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট সম্মেলন কক্ষে দুইটি অধিবেশনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর মু. সিকান্দার খান ও সঞ্চালনায় ছিলেন শ. ম. বখতিয়ার আর দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী ও সঞ্চালনায় ছিলেন প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া।উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর নুর মো. তালুকদার, সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা),কেন্দ্রীয় কমিটি।উক্ত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মো. খালেকুজ্জামান,সহ-সভাপতি,বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা)ও বৈশ্বিক সমন্বয়ক,বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন),ইউনিভার্সিটি অব পেন্সিলভেনিয়া,ইউএসএ,প্রফেসর ড. শহীদুল ইসলাম,চেয়ারম্যান,ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জহিরুল আলম,প্রধান নির্বাহী, ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ),মো. আলমগীর কবির, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা),কেন্দ্রীয় কমিটি। সেমিনারে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম।সেমিনারে টেকসই পরিবেশ বান্ধব নগরায়নে গুণমান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া, নগর চিন্তাবিদ,তিনি বলেন,টেকসই পরিবেশবান্ধব নগরায়নের উপর নগর জীবনের গতিশীলতা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায্যতা, দূষণমুক্ত পরিবেশ, সমতা ও সুখ জড়িত।বহুমাত্রিক বিষয় সমন্বয় করে পরিকল্পনা করতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটা শক্তিশালী গুণমান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান যে প্রতিষ্ঠানে থাকবে যথার্থ জ্ঞান ও দূরদৃস্টি সম্পন্ন অভিজ্ঞ জনবল।বিদ্যমান নগরায়নের দায়িত্বে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তারা এ ধরনের গুণমান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান নয়। তাই তারা জনগণের ও সমাজের বিদ্যমান চাহিদা কী এবং ভবিষ্যতে সমস্যা কী হতে পারে তা অনুধাবন করতে অক্ষম। সর্বপরি নগর গতিশীলতায় সৃস্টি হচ্ছে অচলায়তন। সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় গুণমান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বির্ণিমানের বিকল্প নেই।পাহাড় নিধন,বন উজাড় ও বনভূমি জবরদখলে পরিবেশ বিপর্যয় ও করণীয় শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রফেসর(অব.) ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।তিনি বলেন,সরকারি বা বেসরকারি যেই মালিক হউক না কেন পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেই শুধুমাত্র চট্টগ্রামকে একটি পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে স্থায়ী বিধি নিষেধ আরোপ। যারা পাহাড় কাটার সহিত জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান; ভবিষ্যতে স্থাপনাসমুহ করার সময় পাহাড় না কেটে ভূমির সহিত সামঞ্জস্যপুর্ন ডিজাইন প্রনয়ন করার মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।উপযোগী গাছপালা লাগানোর মাধ্যমে বাঁধের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা ও সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির প্রাথমিক প্রতিরোধ হিসাবে উপকূলীয় বাঁধের সার্বক্ষনিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘন ঘন ও তীব্র ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সাইক্লোনসহ পরিবেশ বিপর্যয় থেকে চট্টগ্রামের বিমান বন্দর, ইপিজেড, বন্দর ও স্থানীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূল বরাবর প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাঁধের বাইরে বন বাগান সৃজন করতে হবে।দখল-দূষণে চট্টগ্রামের নদী জলাবদ্ধতায় প্রভাব শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন,প্রফেসর ড.মো. মনজুরুল কিবরীয়া, সভাপতি, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।তিনি বলেন,কর্ণফুলি নদীর পানি দুষন বন্ধে করণীয় দেশি প্রযুক্তিতে কম খরচে বর্জ্য শোধনের পদ্ধতি উদ্ভাবন।বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেসরকারী খাতকে উৎসাহ প্রদান।নদী দূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও বেতার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপনের অনুমতি না দেয়া।চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইটিপি (কেপিএম, সিইউএফএল ইত্যাদি) ইনস্টল করতে বাধ্য করা।নগরীর ৭০টি খাল সিএস জরিপের ভিত্তিতে উদ্ধার করা এবং নদী কমিশনের তালিকা অনুযায়ী অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা।উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে জন সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।আয়ুষ্মান জীবন বায়ু দূষণের প্রভাব শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, মো. জাফর আলম,অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি,স্কুল অব ল’,চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি তিনি বলেন,বাংলাদেসে বায়ূ দূষণের প্রধান প্রধান কারণসমূহ হলো- শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষিকাজ, অবৈজ্ঞানিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে পোড়ানো, যথাযথ ব্যবস্থাপনায় ব্যতীত নির্মাণ কার্যক্রম, শিল্প এবং যানবাহন থেকে হেভি মেটাল লেড দূষণ, চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প হতে দূষণ ইত্যাদি। বায়ূ দূষণের ফলে মানুষের শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ূদূষণ জলাভূমিকেও প্রভাবিত করে এবং এসিড বৃষ্টিসহ জলবায়ূ পরিবর্তনে বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। সরকারি বিধিমালায় বায়ূদূষণ নিয়ন্ত্রণে মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরকে জাতীয় বায়ূমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, বায়ূদূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই পরিকল্পনাসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বায়ূদূষণ আশানুরূপ হারে হ্রাস ঘটবে বলে প্রত্যাশা।  জলাবদ্ধতার প্রকৃতি,কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রফেসর ড. মো. ইকবাল সারোয়ার,ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।তিনি বলেন,চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবেশের আলোচিত এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে নিম্নোক্ত উদ্যোগ সমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে: পূর্বের মাস্টার প্ল্যানের সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সমযোপযোগী আধুনিক বাস্তব সম্মত ড্রেনেজ ড্রেনেজ প্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে;দখলকৃত নালা-খাল উদ্ধার করে চট্টগ্রাম শহরের প্রকৃত ড্রেনেজ ডাটাবেজ প্রণয়ন করতে হবে।জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজনৈতিক ও সামাজিক একতা প্রয়োজন, এজন্য সঠিক পরিকল্পণা, দক্ষ ব্যবস্থাপণা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতার উপর দৃষ্টি দিতে হবে।  সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন,প্রফেসর ড. মো. খালেকুজ্জামান,প্রফেসর ড. শহীদুল ইসলাম,জহিরুল আলম,মো. আলমগীর কবির,স্থপতি জেরিনা হোসেন,প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী,প্রফেসর ড. মো. ইদ্রিস আলী,প্রফেসর ড.অলক পাল,প্রফেসর ড. শাহ আলম,প্রফেসর শহিদুল আমিন চৌধুরী প্রমুখ।প্রফেসর মু. সিকান্দার খান এর সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনারের সমাপ্ত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

অর্থসেল সম্পাদক সুমাইয়া শিকদার ইলার প’দত্যা’গ, তুললেন ২৭টি গু’রুতর অ’ভিযো’গ

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোর: যশোরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক পদত্যাগ করছেন...

বগুড়া শহর যুবদলের ৫টি ওয়ার্ডের যৌথ উদ্যোগে ইফতার বিতরণ

বগুড়া প্রতিনিধি, মোঃ রিপন ইসলাম: বুধবার বিকেলে বগুড়া শহর যুবদলের আওতাধীন ৫টি ওয়ার্ডের যৌথ উদ্যোগে মাটিডালী বিমান মোড়ে দুস্থ...

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আমার ভাবনা

মো. বেল্লাল হাওলাদার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। শান্তি, কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে এই পবিত্র মাসটি।...

ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ মণিরামপুর উপজেলা শাখার পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

আব্দুল্লাহ আল মামুন,যশোর: ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ মণিরামপুর উপজেলা শাখার পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ১২ই মার্চ জোহর...