Sunday, July 13, 2025

হাওয়াই মিঠাই:বাংলার ঐতিহ্য

Date:

Share post:

রুবেল হোসেন,যশোরঃ

হাওয়াই মিঠাই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম এটি। এখনো এটি গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। একসময় ‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু, আধুনিকতার কারণে এটি এখন আর খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তা একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি।

হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই নিমিষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। বানানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখে দিয়ে খেতে হয় এটি। পেট ভরে না এ মিঠাইয়ে, তবে খেতে মিষ্টি। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু। দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা এই মিঠায়ে বেশি আনন্দ পায়। বড়রাও এর স্বাদ থেকে পিছিয়ে থাকেন না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই মিঠাইয়ের প্রত। যশোরের এক প্রবীন জানান, তিনি আজো ভুলতে পারেন না ‘হাওয়াই মিঠাই’র স্বাদ। এখনো গ্রামে গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে তিনি তা কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খান।

“এক পয়সা দিয়ে ‘হাওয়াই মিঠাই’ কিনে খাওয়ার” কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগে ছোটবেলায় যখন বাবা-কাকাদের সঙ্গে গ্রামের মেলায় যেতাম, তখন প্রথম বায়নাটি ছিলো ‘হাওয়াই মিঠাই’ খাওয়ার। আর হাতের কাছে পেয়েও যেতাম এটি।”যশোর মনিরামপুরের কাশপিুর গ্রামরে অজেত আলী জানান, “হাওয়াই মিঠাই ভালো জিনিস। খেতে অনেক মিষ্টি। পেট ভরে না, কিন্তু মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় আমরা সবাই খাই। শিশুরাও খায়। তবে শিশুরা বেশ মজা করেই খায়।”

একই গ্রামের শিশু আলাউদ্দিন বলে, “হাওয়াই মিঠাই খেতে অনেক মজা। আমাদের গ্রামে কেউ ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। মিঠাই কিনে খাই।”“একটা-দুইটায় মন ভরে না, আমি চার-পাঁচটা খাই,” লাজুক মুখে যোগ করে সে।শুধুমাত্র চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো ‘যাতা’য় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় ‘হাওয়াই মিঠাই’। একসময় লাল-গোলাপি-হলুদ-বেগুনি-সবুজসহ নানা রঙে তৈরি করা হতো এই মিঠাই। তবে এসব রঙে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় এখন আর রঙ ব্যবহার করা হয় না। শুধু চিনির সাদা রঙই হলো এ মিঠাইয়ের রঙ। বিশেষ করে গ্রামে মেলা বসলে দেখা মিলে ‘হাওয়াই মিঠাই’র। তবে প্রায় সারাবছরই গ্রামে-গ্রামে দেখা যায় ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রেতাদের।

যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রেতা প্রকাশ বর্মন জানান, তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করছেন। আগে সারা বছরই এ ব্যবসা করে সংসার চালাতেন কিন্তু, এখন বছরে তিন থেকে চার মাস তিনি এ ব্যবসা করতে পারেন। মাঝে-মধ্যে গ্রামে মেলা বসলে এই ব্যবসা করেন বলেও জানান তিনি।বলেন, “হাওয়াই মিঠাই একটি বিশুদ্ধ সামগ্রী, ভেজালমুক্ত হওয়ায় এটি খেতে শিশুদের কোনো ঝুঁকি নেই। শিশুরা আনন্দ সহকারে এটি খেতে পছন্দ করে আর আমরাও আনন্দের সঙ্গে তা বিক্রি করি।”

“শুধু শিশুরাই নয় বড়রাও আমার কাছ থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে খায়,” যোগ করেন এই খণ্ডকালীন বিক্রেতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

কচুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত

বিক্রম সাগর, রুপদিয়া প্রতিনিধি: যশোর সদর উপজেলার ১৩ নম্বর কচুয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কচুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণের শুভ...

যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্র’তিবাদে বি’ক্ষোভ

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ যশোরে চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও গণপিটুনিসহ নানা অপরাধের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (১২...

খাগড়াছড়ি,গুইমারা উপজেলা মারমা ঐক্য পরিষদ অফিস উদ্বোধন করেন

খাগড়াছড়ি, প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলা গুইমারা উপজেলায় মারমা সম্প্রদায়ে বিশ্বস্ত সংগঠন বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে অফিস...

নড়াইলে আইডিইবি’র নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মামুন সম্পাদক সালাম

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলে ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর নব নির্বাচিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১২...