Sunday, July 13, 2025

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত ও আমল

Date:

Share post:

বুলবুল হোসেন ঃ

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মহিমান্বিত রজনী বা লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য সম্ভাব্য যে পাঁচটি বেজোড় রাতের উল্লেখ্য করেছেন তার মধ্যে সাতাশের রাতটি অন্যতম। মুসলমানদের কাছে শবে কদর অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত।
‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’ অর্থ রাত আর আরবি ‘লাইলাতুল’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শবে বরাত’ ও শবে বরাতের হাদিসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহদের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে। লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে তার কোনোই অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদিস ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর লাইলাতুল কদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এই রাত রমজানের কোন তারিখে? রাসূলুল্লাহ সা: একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে- হযরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের কোন বেজোড় রাতে খোঁজ করো।

হযরত আবু বকর রা: ও হযরত আবব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিস থেকেও এই একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য কোনো কোনো ইসলামী মনীষী নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যামে রমজানের ২৭ তারিখের রাতে (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবে কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা: এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি; বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন।

মহিমান্বিত এ রাতকে মহান আল্লাহ রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লুকিয়ে রেখেছেন। বান্দা বিনিদ্র রজনী কাটাবে, সবর করবে এর মধ্যে খুঁজে পাবে সম্মানিত রাত, পাবে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত; ফেরেশতার অদৃশ্য মোলাকাতে সিক্ত হবে তার হৃদয়, আপন প্রভুর ভালোবাসায় হবে সে উদ্বেলিত। এ যেন দীর্ঘ বিরহের পর আপনজনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। এ দীর্ঘ প্রতিক্ষার কষ্ট-বিরহের মাধ্যমে রব তার বান্দাকে আরো আপন করে নেন। কাজেই শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতে মশগুল হতে হবে। প্রতিটি রাতকেই লাইলাতুল কদর মনে করতে হবে। তা হলে লাইলাতুল কদর আল্লাহর মেহেরবানিতে হাতছাড়া হবে না ইনশাআল্লাহ। রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোই ( অর্থাৎ ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ শে রোজার দিবাগত রাত ) হলো শেষ দশকের বেজোড় রাত।

এটা খুবই কৌতুহলপূর্ণ/আকর্ষনীয় যে, কিভাবে হযরত ইবনে আব্বাস হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি ২৭তম রাত্রিকে কদরের রাত বলে মতামত দেন। তিনি বলেন, লাইলাতুল কদর ৯টি অক্ষর নিয়ে গঠিত [লাম, ইয়া, লাম, তা, আলিফ, লাম, কাফ, দাল, রা=৯টি অক্ষর]
এবং তিনি মনে করতেন যে সূরা কদরে তিন বার লাইলাতুল কদর শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং ৯ x৩ =২৭। তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে মতামত দেন যে, লাইলাতুল কদর বা শবে কদর এর রাত্রিটি ২৭শে রমজান।তিনি আরো বলেন এই সূরা কদরে ৩০ টি শব্দ আছে (ঠিক যেমন ৩০টি রোজা) কিন্তু ২৭ মত শব্দ হলো هِيَ হিয়া [যার অর্থ এটি] আয়াত নং ৫ এ। তিনি বলেন ”হিয়াবা” যার দ্বারা বোঝায় যে- অত্র শব্দটি ৩০টি শব্দের মধ্যে ২৭ তম শব্দ, ঠিক যেমন ভাবে ৩০টি রমজানের মধ্যে ২৭ তম রাত হল কদরের রাত।

তবে হাদিস শরিফে উল্লেখ পাওয়া যায় আবহাওয়া ঝলমলে একটি প্রশান্তির রাত হবে সেদিন। এই রাতটি হবে খুবই শান্ত ও শান্তিময়। এই রাত শেষে সকালটি হবে প্রশান্তির। এ রাতে প্রত্যেক বস্তুকে সেজদারত অবস্থায় দেখা যাবে। প্রতিটি স্থান হবে বেহেস্তী আলোয় আলোকিত।
সবচেয়ে সুস্পষ্ট নিদর্শন হচ্ছে, এই রাতের ইবাদত অন্তরে তৃপ্তি জোগাবে। এটি ভাগ্য বা মহিমান্বিত রজনী যা দোয়া কবুলের রাত। এ রাতেই আল্লাহ আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন; তুমি বলবে, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন’। (ইবনে মাজাহ শরিফ)

এ রাতের আর একটি গুরুত্ব হলো- এ পবিত্র রাতেই কুরআন নাজিল হয়েছে। আর এই কুরআনের সাথেই মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ জন্য কদরের আর একটি অর্থ হলো ভাগ্য। তা হলে লাইলাতুল কদরের অর্থ হয় ভাগ্যরজনী।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত রাত হাজার মাস থেকে উত্তম ও কল্যাণময় (কুরআন)। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে (কুরআন)। এ রাতে ফেরেশতা নাজিল হয় এবং আবেদ বান্দাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)। এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয় (কুরাআন)। এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাদের জন্য অনবরত ফেরেশতারা দোয়া করেন (কোরআন)।
গুনাহ মাফ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্র’তিবাদে বি’ক্ষোভ

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ যশোরে চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও গণপিটুনিসহ নানা অপরাধের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (১২...

খাগড়াছড়ি,গুইমারা উপজেলা মারমা ঐক্য পরিষদ অফিস উদ্বোধন করেন

খাগড়াছড়ি, প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলা গুইমারা উপজেলায় মারমা সম্প্রদায়ে বিশ্বস্ত সংগঠন বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে অফিস...

নড়াইলে আইডিইবি’র নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মামুন সম্পাদক সালাম

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলে ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর নব নির্বাচিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১২...

সাধারণ মানুষের ও মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আজ লালবাজার অভিযান প্রদেশ কংগ্রেসের

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ বৈকালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এর পশ্চিম বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস এর সভাপতি শ্রী...