Tuesday, October 14, 2025

আয়া দিয়ে প্রসূতির ডেলিভারি, নবজাতকের মৃত্যু

Date:

Share post:

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ

পটুয়াখালীর মহিপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রসব করাতে গিয়ে আয়ার হাতে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে মহিপুর থানা সদরের কেয়ার মডেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসকের দায়িত্ব নেয়া ওই আয়া নিজেই প্রসূতির ডায়াগনসিস রিপোর্ট পর্যালোচনা করে স্বাভাবিক ডেলিভারির আশ্বাসও দিয়েছেন। একই সাথে ডাক্তার না ডেকে নিজেই সনাতনি পদ্ধতিতে ডেলিভারি করতে গিয়ে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রসূতির স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে মহিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই আয়া পারভিন এবং নার্স মানসুরাকে থানায় নেওয়া হয়।

 

মহিপুর থানা পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, মহিপুর থানা সদর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের আনোয়ারের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী সন্তান সম্ভাবা শারমিন বেগমকে (৩৩) বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন। এসময় পারভিন নামে ওই আয়া অপারেশনথিয়েটারে নিয়ে ডেলিভারি করান। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মানসুরা (৩০) আসার আগেই নবজাতক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর ডাক্তারকে ফোন করা হলে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছে নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। মৃত নবজাতকের বাবা আনোয়ার বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে সন্তানের পর এই ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে সন্তানের আশায় তৃতীয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেই আশা অনুযায়ী ছেলে সন্তান হলেও আয়া আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই।’ অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবার ঘোষণা থাকলেও ওই সময় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। প্রসূতি শারমিন, তার স্বামী আনোয়ার ও তার স্বজনরা জানান, এভাবে আর যেন কোনো মা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সন্তান হারা না হন। তাদের দাবি এ হাসপাতালে এর আগেও ডেলিভারি করার সময় দু’টি নবজাতক মারা যায়।

 

হাসপাতালের আয়া পারভিন ও নার্স মানসুরা জানান, প্রসূতির ডায়াগনসিস রিপোর্ট অনুযায়ী নরমাল ডেলিভারি হবার কথা, হয়েছেও তাই। এজন্য তারা ডাক্তারকে ডাকেননি। তবে ডাক্তার ছাড়া কিভাবে এমন ঝুঁকি নিলেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ পপি সুর জানান, হাসপাতাল থেকে তাকে নরমাল ডেলিভারি হবার কথা জানালে ফোনে তিনি নার্সকে পরামর্শ দিয়েছেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি এসে দেখেন বাচ্চা মৃত। হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী নরমাল ডেলিভারি হবার কথা ছিলো বলে ডাক্তার ডাকা হয়নি। তার দাবি রোগী হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই বাড়িতে বসে স্থানীয়ভাবে ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

 

এছাড়া নবজাতকের গলায় নাড়ি পেঁচানো ছিলো। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, নার্স ও আয়ার বক্তব্য পরস্পর বিরোধী। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ডাক্তারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই রয়েছে। বাস্তবে এক দুইজন চিকিৎসক রয়েছে। তাও অনিয়মিত। নার্স-আয়াদের দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা। এ বিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

‎মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ সমন্বিত উদ্যোগ,প্রতিরোধ করি দূর্যোগ! এ প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়নে সারা দেশের ন্যায় যশোরের মণিরামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস...

আজ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল বিজয়া সম্মেলনী

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিষ্ণুপুর এর আমতলায় জেলা...

রৌমারীতে ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানব’বন্ধন

লিটন সরকার রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : রৌমারী উপজেলার বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস চলাকালিন সময়ে মানববন্ধন করানোর...

বগুড়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়া সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকায় “বারুইপাড়া সোনালী উন্নয়ন সংঘ”-এর উদ্যোগে “বৃক্ষ বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার...