Thursday, July 17, 2025

রৌমারীতে এলডিডিপি প্রকল্পে অর্থ হরিলুট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

Date:

Share post:

লিটন সরকার রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সরকারি অর্থায়নে ছাগল ও ভেড়ার পরিবেশ বান্ধব সেড নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। এলডিডিপি প্রকল্পের অর্থ হরিলুট, ছাগল ও মুরগির ঘর নির্মানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

 

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজেই এসব কাজ করেন। সরেজমিনে গিয়ে উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য।অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে কাজগুলো উপকারভোগীদের সম্পাদন করার জন্য ব্যাংক হিসাবে টাকা দেয়া হয়েছিল,সেই টাকা কৌশলে প্রকল্পের দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা তিনি নিজেই সেড নির্মাণ শুরু করেন। এলডিডিপি প্রকল্পের অর্থ হরিলুট ও নানা অনিয়মে উপকারভোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) কর্তৃক উপজেলা পর্যায়ে গঠিত প্রডিউসার গ্রুপে (পিজি) সদস্যদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্টের আওতায় ছাগল ও ভেড়ার পরিবেশ বান্ধব সেড (ঘর) নির্মাণের জন্য এলডিডিপি অর্থ বছর ২০২২-২০২৩ এ বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ঘর গুলো এতটাই নি¤œমানের নির্মাণ করা হয়েছে যে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খচর হয়েছে মাত্র। বাকি টাকা আত্মাসাৎ করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম হাবিবুর রহমান ও প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদন্নবী মিলন। এদিকে উপকারভোগীদের কাছ থেকে কাগজ পত্র নিয়ে ব্যাংকে একাউন্ট খুলে দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

 

পওে একাউন্টে টাকা আসলে চেকে সই করে প্রাণিসম্পদ কর্মককর্তা ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা গুলো নেন। যেখানে উপকারভোগীরা এই টাকা দিয়ে তারা নিজেরাই কাজ করার কথা ছিল।প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ঘর নির্মাণের লক্ষ্যে পিজি সদস্যদের সঙ্গে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন ওই প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এমন কি স্ট্যাম্পের টাকাও উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এমনকি ঘরের সাইন্ড বোর্ড এর জন্য প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে ২ শত থেকে ৩ শত টাকা নেওয়া হয়। প্রকৃত ব্যয়ের সঙ্গে এসব ঘর নির্মাণ খরচের হিসাব কিংবা নেই কোনো ভাইচার। তবে ১৩১ টি ঘর সকল ঘরের চিত্র একই। জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর বামনেরচর ৩৬ টি, জিগ্নীকান্দী ৩৩ টি, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চরধনতল ২৮ টি ও হরিণধরা গ্রামে ৩৫ টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প এলডিডিপির সহযোগীতায় বাস্তবায়ন করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল রৌমারী।প্রতিটি সেড নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৪ টি ঘরের জন্য ২০ হাজার টাকা করে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। বাকি ৯৭ টি ঘরের জন্য ২৫ হাজার করে ২৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এই দিয়ে মোট রৌমারী উপজেলায় ১৩১ টি ঘরের জন্য সর্বমোট ৩১ লক্ষ্য ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। অ্যাকাউন্ট-পে এই চেকের টাকা মালিক ছাড়া প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষে উত্তোলন সম্ভব না।

 

অথচ উপকারভোগী সদস্যদের কাছ থেকে চেক সই করে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা তার লোক দিয়ে এসব টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে রেখে তিনি নিজেই ঠিকাদার সেজে এসব ঘরের কাজ করেন। অপর দিকে ইসলামী ব্যাংক রৌমারী শাখার পিজি সদস্যদের নামীয় অ্যাকাউন্টে এ টাকা দেয়া হয় মন্ত্রনালয় থেকে। সদস্যদের ম্যানেজ করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম হাবিবুর রহমান ও প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদুন্নবী মিলন দুই জন মিলে কৌশলে টাকাগুলো নিজেদের আয়ত্তে নেন। প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী নিজেরা সেড তৈরি করে দেবেন এমন প্রতিশ্রুতিতে সদস্যদের টাকা দিতে বাধ্য করেন। তারা নিম্নমানের কাঠ, টিন, কনক্রিটের খাম দিয়ে নির্মাণকাজ করে কোনো মতে বুঝিয়ে দেন। কয়দিন যেতে না যেতে এসব ঘর গুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এদিকে সেড ঘরের মেঝো পাকা করার কথা থাকলেও তা না করে অফিসের পক্ষ থেকে পাকা করার জন্য সদস্যদের সাড়ে পাচ হাজার করে টাকা চাপের মুখে পড়ে দেন ভুক্তভোগীদের। এমন অনিয়মের আভাস পেয়ে এক সদস্য টাকা উত্তোলন করে তিনি নিজেই কাজ করেন।রৌমারী সদর ইউনিয়নের চরবামনেরচর গ্রামের পিজি কমিটির সভাপতি ও সদস্য হোসনে আরা বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমাদের কাছ থেকে কাগজ পত্র নিয়ে তারাই ব্যাংকে একাউন্ট খুলে দিয়ে টাকা আসলে চেকে সই করে টাকা উত্তোলন করেন। পরে যে ঘর নির্মাণ করে দেন তা একে বারেই নিম্নমানের। একাধিক সদস্যদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ঘরের পর্দা ও মুশরী দেওয়ার কথা তার কোনো খবর নেই।

 

এব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ সম্পসারণ কর্মকর্তা মাহমুদন্নবী মিলন জানান, দেখা শুনার দ্বায়িত্বে ছিলাম এর বেশি কিছু জানিনা। আমাদের বড় স্যারের নির্দেশেনায় কাজ করেছি। তবে সেড নির্মাণের অনিয়মের বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তোর পাওয়া যায়নি।রৌমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, সদস্যদের দ্বায়িত্ব দিলে এসব ঘরের কাজ ভালো ভাবে হবেনা তাই আমরা নিজেরাই করেছি। এলডিডিপি প্রকল্পের হরিলুট এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভিন্ন কথা বলে জানান যে, কোনো কাজ একশত পারসেন হয়না।

 

এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি ঠিকাদার সেজে কাজ করেন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ভিন্ন কৌশলে পাশ কাটিয়ে যান।কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো মোনাক্কা আলীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সেড নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকলে লেখেন আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

নড়াইলে জেলা জামায়াতের সাথে প্রেসক্লাবের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইল প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদ (২০২৫-২৭) কে সংবর্ধনা ও জেলা জামাতের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত...

সতীঘাটা পা’গলা কুকুরের কা’মড়ে প্র’তিবন্ধীস’হ র’ক্তাক্ত জ’খম শি’কার – ২

মোঃ ওয়াজেদ আলী ,স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলা রামনগর ইউনিয়নের সতীঘাটা কামালপুর গ্রামের আব্দুল হানিফ এর মেয়ে প্রতিবন্ধী নুরুজাহান...

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ও ষ’ড়যন্ত্রের প্র’তিবাদে বি’ক্ষোভ মিছিল

খাগড়াছড়ি, প্রতিনিধি: সারাদেশে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ষড়যন্ত্র ভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা প্রতিবাদ ও খাগড়াছড়ি স্বেচ্ছাসেবক...

তিস্তা ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে পরিবেশ উপদেষ্ট

মোঃ আবু শাহান সেলিম মিয়া, রংপুর।। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দুই...