Wednesday, July 2, 2025

গীত গান ও জ্ঞান অথই নূরুল আমিন

Date:

Share post:

হারুনুর রশিদ হাবিবুল্লাহ্:

মানুষ তার অফুরন্ত আবেগ ও অনুরাগ দিয়ে নিজের হৃদয়ের প্রকাশ বৃত্তি বিকাশ ও বিস্তারে যেমন অতিশয় উদ্বুদ্ধ তেমনি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান। তার সত্যতা উপলব্দি করতে গেলেই আজকের দৃশ্যমান এ সভ্য জগতের যা কিছু উদ্ভাবন ও উৎপাদন আদর্শ ও সৌন্দৰ্য্য স্নিগ্ধ, শিল্প কলা, চারু কারু সবই মানব চেতনা প্রসূত স্বস্ফূর্ত ভাবে উৎসাহিত। তাইতো আমাদের পূর্ব পুরুষ জৈনিক কবি উক্তি করে গেছেন যে, “শোনরে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।”

আজকে এই চলমান মানব বিশ্বের বিস্ময় বাউল সম্রাট শ্রদ্ধেয় লালন শাহ ফকিরের ঐকান্তিক দৃষ্টিতে লিখে ছিলেন, “মনের ভাব প্রকাশিতে, ভাষার জন্য এ জগতে।” সুতরাং ভাষা প্রকৃতিগত ভাবে মানব চেতনা উৎসারিত বিজ্ঞানের এক অভিনব অবদান। যার গুরুত্ব আমরা নিতান্ত সহজে পরিলক্ষিত করতে পারি। তবে এ কথা সত্যি যে, ভাষা সৃষ্টির অন্তরালে যত রহস্যই থাকনা কেন অতীত কালের মানুষের হাজার হাজার বছরের উদ্ধাবনী চেতনা অক্লান্ত গবেষণা লব্ধ অভিজ্ঞতা বাস্তব রুপায়িত এ বিষয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ আছে বলে আমার মনে কোন রকম ধারনার জন্ম হয় না।

প্রকৃতি নিসৃত মধুর মধুর প্রনায়াম স্বর-ঋতু বা ধ্বনি সকল পরিকল্পিত ভাবে সু-শৃঙ্খল ও অতি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে মানানসই মনোন্নয়ন মনোভাব প্রকাশিত বাণীর প্রকৃত রূপই ভাষা বলে বিবেচিত।

মানব বিশ্বে ভৌগোলিক অসমতার কারণে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে অবস্থিত মানুষের ভাষা ভিন্ন-ভিন্নতার।এ ব্যাপারে আমরা সবাই একমত পোষণ করবো, বলে আমি আশামত প্রকাশ করছি। দৃষ্টান্ত স্বরুপ বলা যায় যেমন বাংলা ইংরেজী, হিন্দী, আরবী, ফার্সী , পস্তু, নাগরী, গুজরাটী ইত্যাদি ইত্যাদি ।

তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, ভাষা এ বিশ্বের যত হাজার প্রকার হোক না কেন, লক্ষ ও উদ্দেশ্য মূলে একই। ভাষার শুরুতে দৃষ্টি দিলে প্রাথমিক অবস্থায় ভাষার অবস্থান ছিল হয়তো বা মুখে মুখে। যাকে সাধারণত কথ্য ভাষা বলা হয়ে থাকে। অতপর ধীরে ধীরে আলোচনা পর্যালোচনা ক্রম উন্নতির ফলে আক্ষরিক সৌন্দর্য্য তৈরী হয় এবং পরে বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে শব্দ গঠনের পর মনোভাব প্রকাশ মান অর্থবহ বাণী স্বরুপ অলংকৃত হয়, শব্দ সাজিয়ে-গুছিয়ে। সে সব বাণী ধীরে ধীরে আজ আমাদের কাছে এসে আমাদেরকে ধন্য করেছে বলতে হবে।

শ্রদ্ধেয় পাঠক ও পাঠিকাগণ: ভাষার ইতিবৃত্ত উদঘাটন করার কিন্তু আমার মুল বিষয় বস্তু নয়। মানব বিশ্বের সংগীত শিল্পের অবদান উপস্থাপন করতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে যতটুকু অতীত ঐতিহ্য না টানলেই নয়। তাই কিছু লিখতে প্রবৃত্ত হয়েছি মাত্র।

এতে যদি কারো মধ্যে পীড়ার উদ্রেক হয়ে থাকে তিনি যেন আমাকে নিজ গুণে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন। আমার মনে হয় আমাদের পূর্ব পুরুষদের পদাংক অনুসরণ করেই ভাষা তথা বাণী অংকনের সৌন্দর্য্য গতি অক্ষুন্ন রেখেই উনবিংশ শতাব্দীর শেষের ভাগে পৌঁছাতে পেরেছি। দৃষ্টান্ত মূলক আমাদের পূর্ব পুরুষ গণ উপহার দিয়ে গেছেন। তাই তো চলার পথের একমাত্র পাথেয় অবলম্বন। ভারতীয় সিন্ধু, আর্য ও বুদ্ধ সভ্যতার কথা ভাবতে গেলেই চোখের নামনে ভাস্কর হয়ে ফুটে উঠে
বেদ বেদান্ত ত্রিপিটক ইত্যাদি প্রাচীন মহামহীম গ্রন্থাদি।

যে অমর কীর্তি সভ্য জগতের মানুষের জীবন দর্শন হিসেবে শ্রদ্ধার সমাদৃত যা গ্রহণ করে মানুষ আজ ধন্য ও কৃতার্থ হয়েছে বলতে হবে।

আমার দৃষ্টিতে সুপ্রাচীন লিপি ও গ্রন্থ সমষ্টি বিভিন্ন শিরোনামে সনাক্ত ক্ষদ্রবৃত্ত বাণী সমুহের সিংহ ভাগই গীত ধর্মী। ছন্দ, মাগে তাল ও লয়ের সমতায় অলংকৃত। প্রকাশ থাকে যে, আধুনিক বিশ্বের মহাজ্ঞান গর্ব ফুরকান গ্রন্থ অ্যারাবিয়ান
বর্ণনাকারীদের মতে প্রসন্ধি সাত জন সুরকারের সুরে পঠিত ও আবৃতি হয়ে থাকে। আরবিতে সুরকারকে কারী বলে সম্মানিত করা হয়ে থাকে সুতরাং ফুরকান গীতি ধর্মী না হলে সুর বা লেহান করা কখনই সম্ভব হতো বলে আমার মনে হয়।

সত্যি কথা বললে, গীত অর্থ জ্ঞানজ। আমরা সাধারণ চলতি কথায় জ্ঞানকে গান বলে থাকি। বিজ্ঞ প্রযুক্তি অবদানকৃত গীত বা গান উপযোগী নানা প্রকার উপকরণ বা যন্ত্রাদি যেমন সেতার, এসরাজ, বাঁশী, বেহালা, সরোদ,অর্গান, ব্যবলা বাঁশী, হারমোনিয়াম, একতারা, দোতরা, ঢোল, তবলা ‘ইত্যাদি সংযোগে গীতি বা সংগীতে উন্নিত হয়েছে।

এক্ষেত্রে আমি ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কয়েকজন সুরকার গীতিকারের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। যেমন, পশ্চিম বিশ্বের ইমরুল কায়েস, মহা কবি শেখ সাদী, ওমর খৈয়াম, হালি, হাফিজ, গালিব, ময়েন উদ্দিন চিশতী রুমী, আল্লামা ইকবাল পাশ্চত্য বিশ্বে শেলি, কীটস, হোমার, গ্যাটে, আলেক জান্ডার প্রমুখ ভারত ও বাংলাদেশের দিকে লক্ষ‍্য দিলে দেখা যায়, ব্যাদ ব্যাস, বাল্মিকী, বুদ্ধ দেব শ্রীকৃষ্ণ, জয়দেব চন্ডিদাস, মহা কবি কালিদাস, মীরা রাই। লালন শাহ্ ফকির, হাছন রাজা, ডিএল রায় অতুল প্রসাদ। রাম প্রসাদ, বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ। এ কথা আমি জোর দাবির সুরে বলতে চাই যে। গীত থেকেই সংগীত আর গীত অর্থ জ্ঞান। জ্ঞানকে চলতি কথায় গান বলা হয়ে থাকে।

তাতে কারো আপত্তি থাকার কথাতো নয়, বরং সুধীজন মাত্র এ ব্যাপারে সাধুবাদ জানাবে বলে আমি একান্ত প্রত্যাশী প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, উপরের লেখা অধিকাংশই ইতিহাস থেকে সংগৃহিত, সংগ্রহ সাজাতে কোথাও যদি কোন রকম ভুলের কোরসত থাকে, লেখা জনিত ত্রুটি মার্জনীয়।

এই ভ্রমনকৃত পৃথিবীতে আমরা সবাই ক্ষনিকের মেহমান, আসুন সুন্দর মন নিয়ে বাস করি। হিংসা, বিদ্বেষ, পরিহার করে সুন্দর সমাজকে আরো আলোকিত করি। এই প্রত্যাশায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

কুয়াদা স্কুল অ্যান্ড কলেজে গভীর রাতে ভা’ঙচুর ও তছ’নছ

বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুয়াদা স্কুল অ্যান্ড কলেজে গভীর...

রাঙ্গামাটির দীঘলছড়িতে আলো ছড়াচ্ছে রাইংখ্য রাজ গুরু অংগ্ৰবংশ উচ্চ বিদ্যালয়

নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে উঠেছে শিক্ষার আলোঘর খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দীঘলছড়ি বিলাছড়ি এলাকায় ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাইংখ্য রাজ...

ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে পথ নি’রাপত্তা সপ্তাহ

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম: আজ সকালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শুরু...

নড়াইলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দিবসসমূহ পালনে সভা হয়েছে। ১ জুলাই (মঙ্গলবার)...