Thursday, January 23, 2025

ভালোবাসা দিবস

Date:

Share post:

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ

ভালোবাসা একটি মানবিক ও আবেগকেন্দ্রিক অনুভূতি যা বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশও হতে পারে। ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়।

আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়। বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিষ্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়-স্বজন,মা-বাবা,ভাই-বোনসহ বাড়িতে কোনো পোষ্য প্রাণীর প্রতিও হতে পারে।

ভালোবাসার মত একটি সর্বজনীন ধারণাকে আবেগপ্রবণ , কল্পনাপ্রবণ কিংবা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ভালোবাসা এসব ভাগে ভাগ না করে ভালোবাসাকে শারীরিক আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিন্যাস করা যেতে পারে। সাধারণ মতে, ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। অধিকাংশ প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা, নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত।ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা অপেক্ষাকৃত গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে।

আর বর্তমান সময় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের হৃদয়ে ভালবাসা দিবসের সুবাতাস বইতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখে রোজ ডে দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে প্রোপোজ ডে, চকোলেট ডে, টেডি ডে, প্রমিজ ডে, হাগ ডে, কিস ডে এবং সর্বশেষ হল বহু প্রতীক্ষিত ভ্যালেন্টাইনস ডে। টানা এক সপ্তাহের ধারাবাহিক প্রেম পর্ব।

দিনটির নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে। পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় পাতায় খুঁজি তাহলে দেখি তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের বাসিন্দা, পুরোহিত ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের স্মরণে উদযাপিত হয়েছিল এই দিনটি। যিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারকও। পাশাপাশি তিনি রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বিবাহের অনুষ্ঠানও করতেন। দ্বিতীয় ক্লদিয়াস, একজন রোমান সম্রাট, যিনি বিশ্বাস করতেন যে, অবিবাহিত সৈন্যরা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি দক্ষ, তাই তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি একটি আইন তৈরি করেন যাতে বলা ছিল, সেনাবাহিনীতে চাকরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবে না। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যখন এই আইন সম্পর্কে জানতে পারেন তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই আইনটি অন্যায়। তাই যে সকল সৈন্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান তাঁদের জন্য গোপনে বিবাহের কাজ চালিয়ে যান তিনি। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য লোকেদের মধ্যেও ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু, খুব তাড়াতাড়িই দ্বিতীয় ক্লদিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার আদেশ দেন। যিনি প্রেমের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্বীকার করে সেখানকার মানুষেরা তাঁকে একটা দিন উৎসর্গ করার কথা ভাবে। আর সেটাই হল এই ভ্যালেন্টাইনডে বা ভালোবাসা দিবস।

আরও একটি গল্প বহুল প্রচলিত আছে তাহলো-সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ধর্ম প্রচারের মামলায় অভিযুক্ত করে কারাবাসে পাঠানো হয়। কারাবাসে থাকার সময় তাঁর চিকিৎসার জাদুতে একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি তিনি ফিরিয়ে দেন। এরপরেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েটির পরিবারসহ অনেকেই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং মেয়েটির সঙ্গে ভ্যালেন্টাইনের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।

সেখানকার রাজার কানে এই খবর পৌঁছোনো মাত্রই, আইনকে অমান্য করে ধর্ম প্রচারের অপরাধের জন্য ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লেখেন, যাতে চিঠির শেষে লেখা ছিল ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’ অর্থাৎ “তোমার ভ্যালেন্টাইনের থেকে”। সেই থেকে মানুষ তাঁর এই নামটিকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। পরে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন।
ভালোবাসা দিবসের এই ইতিহাস রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে পালিত হয়ে আসছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্বটি হলএকজন রোমান ধর্মযাজকের সম্মানের জন্য এই দিনটির উদযাপন।

ভালবাসার যেমন জাত-পাত-ধর্ম থাকে না তেমনি ভালোবাসা দিবস পালনের ক্ষেত্রে দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী ও দেশকালের বিভেদ ঘুচিয়ে পাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইনডে তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশেও বর্তমানে এই দিবস পালনের ক্ষেত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” নামে এটি পালিত হয়। বাংলাদেশে সর্বশেষ সংস্কারকৃত বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে বসন্ত উৎসব তথা পহেলা ফাল্গুন উদযাপিত হয় এবং একই দিন ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় বিধায় অনেকের কাছেই এই দিবসটি বেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এই দিনটি বাংলাদেশের অধুনা তরুণ সমাজ আরও ভিন্ন উপায়ে উদ্‌যাপন করতে উৎসাহিত হয়।

বাংলাদেশে যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং সম্পাদক শফিক রহমানের হাত ধরে ১৯৯৩ সালে প্রথম ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন এবং যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর নিকট ভালোবাসা দিবসের কথা তুলে ধরেন। আর তাই বাংলাদেশে তাকে ভালোবাসা দিবসের জনক বলা হয়।
এই দিনে, বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ প্রেমিক প্রেমিকা, বন্ধু বান্ধবী, স্ত্রী এবং স্বামী, মা এবং সন্তান, ছাত্র এবং শিক্ষক ফুল, চকলেট, কার্ড এবং অন্যান্য জিনিস আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রসমুহ কানায় কানায় পূর্ণ থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

শ্রীপুরে পানিতে ডুবে শি’শুর ম’র্মা’ন্তিক মৃ’ত্যু

মোঃ এমদাদ, মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার তখলপুর মধ্যপাড়ার তৈনুর বিশ্বাসের ১১ বছরের ছেলে এবং মরহুম আব্দুল হাই বিশ্বাসের...

পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুয়ারে সরকার চালু 

কলকাতা থেকে নিউজ দাতা মনোয়ার ইমামঃ  তৃনমূল দলের সুপ্রিমো ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ উত্তর বঙ্গের আলিপুরদুয়ার...

গোদাগাড়ীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মোঃ মাসুদ আলম, ব্যুরো চিফ, রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।...

রৌমারী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনার শীর্ষে মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু

লিটন সরকার রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে বিশেষ এক জরিপে একধাপ এগিয়ে রয়েছেন ৮০...