উজ্জ্বল কুমার দাস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:
মহান ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পার হলেও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসায় গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার।সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির অবহেলা, অর্থের অভাব ও প্রশাসনিক তদারকি না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়নি। এতে করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা জেগে উঠছে না তেমনি ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসও জানতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিতে যায় দূরের কোনো শহীদ মিনারে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেটিও হয় না। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলো সারা বছর পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়। শহীদ মিনার নেই এরকম কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। আবার এর বিপরীত দিকেও আছে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আরাম আয়েশে ছুটি উপভোগ করে। যারা পালন করেন তারাও গুটিকয়েক ছাত্রছাত্রী নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে দায়িত্ব পালনে ইতি টানেন।
২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে তেমন কোনো আলোচনার ব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের প্রাথমিক পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী ২১ ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য ও ইতিহাস জানে না। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৫৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১টি মাদ্রাসা, ৮টি কলেজ ও ১৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। তবে ১২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। আর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে আর কতটিতে নেই তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। রবিবার উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে দেখা যায় , যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলিতে শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে বসে আছে।বেশির ভাগ শহীদ মিনার অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। প্রায় প্রতিটি শহীদ মিনার স্তম্ভ ধুলায় মলিন হয়ে আছে।আর কোনো কোনটিতে পলেস্তারাও খসে পড়ছে। এর মধ্যে বেশ ক’টা করুণ অবস্থায় রয়েছে। কোনো কোনটিতে শহীদ বেদীতে পর্যন্ত আগাছা ও জন্মেছে। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। তবে কোন শহীদ মিনারে নিরাপত্তা বেষ্টনি নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধিক কমান্ডার,সুশিল সমাজ ও অবিভাবকরা জানান, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য শহীদ মিনার বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। একুশের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। স্থানীয় ভাবেই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। কারণ, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার দেখে মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। তবে যে সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই আমরা সে সকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান আলী শেখ জানান, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা দরকার তবে যেগুলোতে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতগুলো প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে বা নেই তিনি তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও আইনজীবি এফ,এম,এ রাজ্জাক বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও
যেসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা যারা ভাষা সৈনিকদের সম্মান প্রদর্শনে অনিহা প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা গ্রহন করা উচিত।
পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, উপজেলার যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই পর্যায়ক্রমে সেইসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং প্রতিষ্টান প্রধানের আবেদনের ভিত্তিতে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।