সারাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

ডেস্ক রিপোর্টঃ

বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এখন আর কোন বিশেষ সংবাদ নয়। এটি এখন নিয়মিত সংবাদে পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ। দিনে দিনে এদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে যেনো এটাই স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গত দুই মাস আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম আরেক দফা বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকার কারণেই দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত।

কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, গত দুই মাস আগে চাউলের দাম প্রকারভেদে মণ প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। আগে মোটা চাউল ছিল মণ প্রতি ১৭৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১৭৫০ টাকা থেকে প্রায় ২০০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সরু চাউল অর্থাৎ বাঁশমতি চাউল মণ ৩৭৫০ টাকা থেকে ৪৮০০ টাকায় মিনিকেট ২৫০০টাকা থেকে বর্তমান ২৬০০টাক বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবজি সরবরাহ সন্তোষজনক হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু সবজি দাম বেড়েছে। মাছের সরবরাহও ভালো তবে দাম অনেক বেশি। গত দুই সপ্তাহ থেকে সয়াবিন তেলের দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গিয়েছে।

গত সপ্তাহেও যেখানে ১৬৪ টাকা দরে লিটার বিক্রি হতো এখন প্রতি লিটার ১৯৬ টাকা দরে ক্রয় করতে হচ্ছে। সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি হালি ৬ টাকা, মাংস ডালসহ অন্যান্য জিনিসের দাম স্থিতিশীল হলেও গুড়ো দুধ ও চিনির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ আগে চিনির দাম ৯৫টাক কেজি ছিলো তাহা বর্তমানে ১৪২টাকা ক্রয় করতে হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে দেশের অর্থনীতিবিদগণ খুবই শঙ্কিত। তারা ইতোমধ্যে কয়েকটি কারণ উদ্ঘাটন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম এবং প্রধান কারণ আমাদের দুর্বল ও ভঙ্গুর অর্থনীতি। স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ফলে আমাদের অবকাঠামো বলতে কিছুই ছিলো না। ঐ সময়ে দেখা দেয় চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা।

ফলে দেখা যায় মজুতদারী, কালোবাজারী, ব্যাপকহারে মুদ্রাস্ফীতি। ফলশ্রুতিতে জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়ে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারই সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি। এরপর আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আমাদের নিত্য সহচর।

দেশের লক্ষ লক্ষ টন খাদ্যশস্য অতিরিক্ত পানিতে কিংবা পানির সংকটের কারণে নিয়ন্ত্রণের অভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। গত দুই বছর পূর্বে (২০২০-২০২১) ঘটে যাওয়া করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সর্বোপরি আছে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব।

দেশের অর্থনীতি যেহেতু পরনির্ভরশীল তাই বিশ্বের দ্রব্যমূল্যের উঠা- নামার উপরে দেশীয় দ্রব্যমূল্যের হৃাস বৃদ্ধি ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশ সহ বাংলাদেশে ও জৈব জ্বালানীর সংকট দেখা দেওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাগলা ঘোড়ার মতো লাফিয়ে চলছে।

এটা চরম সত্য যে দেশের কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্যের উন্নতি না হলে জিনিসের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে না। এ ব্যাপারে কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎপাদন সহজ ও ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচুর পরিমাণে জৈব সার কমমূল্যে সরবরাহ করতে হবে। ব্যবসায়ী পুঁজিপতি, আমলা, ও জিনিসপত্রের সরবরাহকারীদের উপর কঠোর নজর রাখতে হবে।

প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাঁচা জিনিসপত্রের উৎপাদন ব্যবস্থার উপর সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে উৎপাদনকারীরা উৎপাদনের উৎসাহ পায় এবং পাশা-পাশি ন্যায্যমূল্যও যাতে পায়। দেশে আপদকালীন সময়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হওয়ার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। মুদ্রাস্ফীতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। সর্বোপরি চাহিদার যোগান ঠিক রাখার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যেভাবে জিনিসের দাম বেড়েছে তার সঠিক প্রতিরোধ আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও যথাসম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এজন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন তাহলো সব নাগরিককে সৎ, আদর্শ দেশপ্রেমিক হতে হবে। দেশকে ভালবাসতে হবে এবং উৎপাদন বাড়িয়ে নিজস্ব দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে।

এম,এম,এইচ / নিউজবিডিজার্নালিস্ট ২৪

সংবাদটি সবাই সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন।

error: Content is protected !!