বুলবুল হোসেন, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ পৃথিবী কালিহাতী উপজেলা শাখার উদ্যোগে টাংগাইল জেলায় কালিহাতি উপজেলার বাংড়া ইউনিয়ন এর পাথালিয়া হতে দেওতলা রাস্তার দুপাশ দিয়ে তাল গাছ রোপণ করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়, বিশেষত বজ্রপাত থেকে রক্ষায় গত ১৯/০৭/২০২৩ ইং তারিখ বুধবার বাংড়া ইউনিয়নের পাথালিয়া বাজার পাকা রাস্তা হতে দেওতলা পর্যন্ত (২ কি.মি.) রাস্তার দু’পাশ দিয়ে তাল গাছ রোপণ করা হয়। উক্ত কর্মসূচির শুভ উদ্বোধণ করেন কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল হুসেইন, সন্মানিত অতিথি ছিলেন সবুজ পৃথিবীর প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সহিদ মাহমুদ, কালিহাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সেহাব উদ্দিন, বাংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম শফি, সবুজ পৃথিবী কালিহাতী উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ বুলবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাদ্দাম, সহ সভাপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মোঃ সুমন মিয়া, পাথালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক মোঃ সোহেল রানা, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ আল আমিন, বাংড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহীন মিয়া, উপ সহকারী কৃষি অফিসার রীনা রানী দে এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন বলেন তাল গাছ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গাছ। লম্বা কাণ্ড ও তার আগায় সুন্দরভাবে এক গুচ্ছ পাতার সমারোহে সুশোভিত তাল গাছ দেখতে অপূর্ব লাগে। নারিকেল, খেজুর, সুপারির মতো তাল একই ‘পামী’ পরিবারভুক্ত। এ উদ্ভিদ এক দল বীজ পত্র দলীয় এবং এ গাছের শিকড় গুচ্ছ মূল বিশিষ্ট। তাল গাছের শিকড় মাটির বেশি গভীরে পৌঁছে না তবে শতাধিক গুচ্ছ মূল চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা (ঝড়, সাইক্লোন) থেকে গাছকে রক্ষা ও ভূমির ক্ষয় রোধ করে। বয়স্ক গাছ ৬০-৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের আগায় ৩৫-৫০টা শক্ত পাতা থাকে। পাতার আগা সূচালো হওয়ায় বজ্রপাত রোধক গাছ হিসেবে এ ফলের আবাদ অতি জনপ্রিয়। একই কারণে বজ্রপাতের কবল থেকে প্রাণিকুলকে রক্ষা করার জন্য ও গাছের বহুবিধ ব্যবহার সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তাল ফল সম্প্রসারণে অনেক দেশেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সহীদ মাহমুদ বলেন কাঁচা-পাকা তাল ও গাছের প্রতিটা অঙ্গ জনজীবনে অতি গুরুত্ব বহন করে। বয়স্ক গাছের (৫০ বছর ও তার ঊর্ধ্ব) কাণ্ডের টিম্বারভ্যালু খুব বেশি। গ্রাম-গঞ্জে টিনের বা সেমিপাকা বাড়ি তৈরিতে এ গাছের শক্ত দীর্ঘস্থায়ী কাঠের ব্যবহার জনপ্রিয়তা খুব বেশি। কাঁচাঘর তৈরিতে খড়ের বিকল্প হিসেবে দরিদ্র পরিবারবর্গ তালের পাতাকে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে বর্ষায় প্লাবণে তালের কাণ্ড দিয়ে ডিঙি বানিয়ে অনেকে পানি পথ পারাপার হয়। জ্বালানি হিসেবেও তালের পাতা ও ডগা ব্যবহার করার প্রচলন গ্রামগঞ্জে বেশি। প্রাচীন কালে যখন কাগজের ব্যবহার প্রচলন ছিল না তখন লেখাপড়ার কাজে কাগজের বিকল্প হিসেবে তাল পাতা ব্যবহার করা হত। তাল পাতা দিয়ে নানা প্রকার হাত পাখা তৈরি করা হয়। গরমকালে এ পাখার ব্যবহার খুব বেশি। তাল পাতা দিয়ে রঙবেরঙের পাখা তৈরি ও বিপণনের মাধ্যমে বাড়তি উপার্জনের কাজে মূলত মহিলারা নিয়োজিত আছে।
মোঃ বুলবুল হোসেন বলেন, তাল অতি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। সব ধরনের ফলে দেহের জন্য উপযোগী বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ হলেও তালে এর বহির্ভূত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদন রয়েছে। অন্য ফলের তুলনায় এ ফলে ক্যালসিয়াম, লৌহ, আঁশ ও ক্যালোরির উপস্থিতি অনেক বেশি। বয়স্কদের জন্য এ ফলের উৎস থেকে সহজেই হজমযোগ্য পর্যাপ্ত আঁশ প্রাপ্তিতে অতি গুরুত্ব বহন করে। আখের গুড়ের চেয়ে তালের গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেলসের উপস্থিতি বেশি। তালের রস আমাশয় নিরাময়, মূত্রের প্রবাহ বৃদ্ধিকারক এবং পেটের পীড়া/প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে সহায়ক। এ ফলের রস সেবনে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে, ক্লান্তি দূর করে, দেহে শক্তি জোগায় এবং অনিদ্রা দূর করে। তালের রস থেকে তৈরি মিসরি সর্দি-কাশি নিবারণে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
সবুজ পৃথিবী কালিহাতি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাদ্দাম বলেন তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ‘ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না’ বলে প্রবাদও রয়েছে। আর এই তাল গাছই এখন অন্য রকম উপকারে আসছে মানুষের। করছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি রোপণের জন্য ২০১৭ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কাবিখা-টিআর প্রকল্পের আওতায় তালগাছের চারা-আঁটি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বর্ষা ও সারা বছরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ পৃথিবী।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তাল গাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক। তালগাছের পাশাপাশি নারকেল গাছ, সুপারি গাছের মতো উচ্চতা সম্পন্ন গাছ বজ্রপাত নিরোধে বেশ কার্যকর। প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। সবুজ পৃথিবীর উদ্যোগে সেটাই চেষ্টা করা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। তালগাছ লাগানোর পাশাপাশি নারকেল গাছ, সুপারি গাছ লাগানোর উদ্যোগকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।