রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৪ সালে একটা নির্বাচন হয়েছিল, সেটি কি মার্কা নির্বাচন হয়েছিল সবাই জানে। ১৫৩ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। রংপুরের মানুষও ভোট দিতে পারেনি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট সব হয়ে গিয়েছিল। যে সরকারের আমলে পরপর দুটো নির্বাচন ডাকাতি হয়ে যায়, চুরি হয়ে যায়, জনগণ ভোট দিতে পারে না সেই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করা যায় না।শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা এগারোটায় রংপুর নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের রোড মার্চের উদ্বোধনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার ১ দফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল রংপুর থেকে দিনাজপুর অভিমুখে তারুণ্যের রোড মার্চ আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু বিএনপি নয় সারা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। বাম গণতান্ত্রিক জোট আমাদের সঙ্গে নেই কিন্তু তারাও ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন না।আওয়ামী লীগ জনগণকে মিথ্যা বোঝানোর চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, এই সরকার ভোট দিতে চেয়ে ভোট দেয় নাই এবং মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। অথচ আমাদের এই দেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য। দেশনেত্রীকে তারা (আওয়ামী লীগ) আটক করে রেখেছে।মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে তারুণ্যের এই রোড মার্চ শুরু হলো। এই রোড মার্চ শেষ হবে যেদিন আমরা এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব। আমাদের দাবি খুব পরিষ্কার, আপনি (শেখ হাসিনা) এখনই পদত্যাগ করেন। আপনাকে এই দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সংসদ বিলুপ্ত করেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। কারণ আপনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে না।তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন অধীনে নির্বাচন হবে জনগণ অংশগ্রহণ করবে। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিয়ে পার্লামেন্ট তৈরি করবে, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি তাহলে আমরা নির্বাচিত হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব।বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আটক করে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছিল। এখন তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ, ডাক্তাররা সবাই খুব চিন্তিত। এই সরকারের কাছে তার পরিবার এবং আমরা বারবার তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। কারণ ডাক্তাররা বলেছেন এখানে তার চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ তাদের আর নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত পনেরো বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি এই সরকার কলাকৌশল করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুচিন্তিতভাবে এই বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করবার কাজ করে যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষ আজকে অসহায় অতিষ্ট হয়ে গেছে। চাল, তেল, লবণসহ সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।রংপুর থেকে তারুণ্যের রোড মার্চ শুরু করা প্রসঙ্গ মির্জা ফখরুল বলেন, রংপুরের একটা বিরাট ঐতিহ্য আছে। সেই ঐতিহ্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ঐতিহ্য। এই রংপুরে ব্রিটিশ আমলে কৃষকদের বিপ্লবের মধ্যদিয়ে তেভাগা আন্দোলন হয়েছিল।
এরআগে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান। 'জাগছে তারুণ্য জাগছে দেশ, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ' স্লোগানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।এ ছাড়াও রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু,রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নুরুন্নবী চৌধুরী মিলন, সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম লেলিন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জহির আলম নয়ন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নুর হাসান সুমনসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষকদল, তাঁতী দল, মহিলা দল ওলামা দল এবং জাসাসের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।সকাল ১০টায় জাসাস শিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে তারুণের রোড মার্চের প্রথম পর্ব শুরু হয়। পরে পথসভা শেষে গাড়িবহরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের রোড মার্চ রংপুর থেকে দিনাজপুর অভিমুখে যাত্রা করে। পথিমধ্যে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভা করবে।