শার্শায় দপ্তরিকাম নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও শীলতাহানির অভিযোগ

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

স্টাফ রিপোর্টারঃ

যশোরের শার্শায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীদেরকে জোর পূর্বক যৌন হয়রানি এবং শীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ ঘটনার বিষয়টি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিত করলে এ সংক্রান্ত সকল শিক্ষক এবং কমিটির সদস্যরা দু’দফায় জরুরি মিটিং-এ বসেন।

কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কমিটির সকলের স্বাক্ষর যুক্ত ফাঁকা রেজুলেশন করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে। কিন্তু অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের আপন ছোট ভাই হওয়ায় তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে বিষয়টি রেজুলেশন আকারে অবহিত না করে বরঞ্চ ভাইকে রক্ষা করতে অভিযোগকারি অভিভাবক ও উপরি মহলে দোড়ঝাঁপ শুরু করেন।

শিক্ষক ও কমিটির মাধ্যমে ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হতে পারেন বিষয়টি বুঝতে পেরে অভিভাবকগণ অভিযুক্তের সঠিক বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও থানা অফিসার ইনচার্জের নিকট ঘটনা সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পলাতক রয়েছেন।

অভিভাবকদের পৃথক লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার সাড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের উত্তাক্ত, জোরপূর্বক যৌন হয়রানি ও শীলতাহানি করে আসছেন ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী সুমন হোসেন (২৫)। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত ও তাদের সাথে অশ্বীল কথাবার্তা বলে আসছেন।

এতে ছাত্রীরা আপত্তি করলে তাদেরকে সুমন বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয়। এমনকি তাদের কে বলা হয় যদি তারা তাদের পরিবার ও অন্য কাউকে এ সম্পর্কে কিছু বলে তাহলে তার বড় ভাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম কে বলে পরীক্ষায় সকলকে ফেল করিয়ে দেয়া হবে।

বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের কোমলমতি শিশুদের এধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ইতিপূর্বেও দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী সুমন হোসেন এই ধরনের কাজ করেছেন। প্রধান শিক্ষক তার আপন ভাই হওয়ায় সে কাউকে তোয়াক্কা করে না। বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষক প্রভাব ঘাটিয়ে তার ভাই কে বার বার বাঁচিয়ে দেয়। এই জন্য সে বার বার এই ধরনের জঘন্য কাজ করে আসছে।

বুধবার লিখিত অভিযোগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে ভূক্তভোগি ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আটজন অভিভাবকগণ এই দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী সুমন হোসেন এর জঘন্য কাজের সঠিক বিচার এবং তাকে চাকরিচ্যুত ও তার বড় ভাই প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম কে সাড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র বদলি করার দাবি জানানো হয়। যাতে করে সাড়াতলা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

অভিযোগকারি অভিভাবক বাবুল ও শরীফসহ অনেকে জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে তাদের এক সন্তানের সাথে ঘটে যাওয়া একটি জঘন্য ঘটনার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ইতিপূর্বে বহু ছাত্রীর সাথে এমন কর্মকাণ্ড ঘটেছে সেটি প্রকাশ পায়। এ সম্পর্কে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানালে তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরঞ্চ এতে প্রধান শিক্ষক চরম ক্ষিপ্ত হন।

তিনি তার ভাইকে বাঁচাতে আমাদেরসহ আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে গেলে সকলকে উল্লেখিত বিষয়ে কাউকে কিছু যেন না বলা হয় তার জন্য নানা হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। এঅবস্থায় অভিযুক্ত সুমন ও তার ভাই প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক উপযুক্ত বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারি শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বলেন, ভূক্তভোগি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ ঘটনার বিষয়টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিত করলে এ সংক্রান্ত গত রবি ও সোমবার সকল শিক্ষক এবং কমিটির সদস্যরা দু’দফায় পৃথক ভাবে জরুরি মিটিং-এ বসেন।

কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সকলের স্বাক্ষর যুক্ত ফাঁকা রেজুলেশন করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ঘটনা লিখিত বর্ণনা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে। কিন্তু অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের আপন ছোট ভাই হওয়ায় তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত না করে বরঞ্চ ভাইকে রক্ষা করতে একটি মহলের সহযোগিতায় অভিযোগকারি অভিভাবক ও উপরি মহলে দোড়ঝাঁপ শুরু করেন।

সরেজমিনে ঘটনার তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী সুমন হোসেন ২০১২ সালে বিদ্যালয়ে আউটসোর্সিং হিসেবে নিয়োগ পাবার পর থেকে একেরপর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছেন। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ছাত্রীদের চাপ দিয়ে নানা কাজকর্ম করতে বাধ্য করা। মারপিট করা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকসহ এলাকাবাসি অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা। সর্বপরি তিনি বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী হয়েও ঠিকমত কাজকর্ম ও দায়িত্ব পালন না করে ইচ্ছমত তার বাইরে ব্যক্তিগত রুটি-বিস্কুট ব্যবসা করে আসছেন।

অভিযুক্ত সুমনের সাথে ঘটনার বিষয়ে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সহ সভাপতি শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

অভিযোগ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এসএম আকিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।

তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বুধবার থানায় লিখিত অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার গোড়পাড়া ক্যাম্প পুলিশের দারোগা ভূক্তভোগি শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে ঘটনা তদন্তে সরাসরি কথা বলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ভূক্তভোগি অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগের রিসিভ কপিতে তার স্বাক্ষরিত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিন ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা সহ তাকে অবহিত করার কথা বলা হয়।

এদিকে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী সুমন হোসেন কর্তৃক একাধিক জঘন্য ঘটনা ঘটায় এবং ঘটনা পরবর্তী শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা নিয়ে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসির মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় সকলেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনের প্রতি ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে।

error: Content is protected !!