মোঃ বুলবুল হোসেন
রনির কথা শুনে সুমনের মনটা খারাপ হয়ে গেছে। সত্যি সে নিজেও তো একবার মনে থেকে ব্যাপারটা জানতে চাইনি। মেয়েটা ওকে এতটা ভালোবাসে। সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু। সুমন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত। রনি ঠ্যালা দিয়ে বলল, আরে এত কি ভাবছিস? শোননা খবরটা দেখেছিস। পুরো দেহ রয়েছে অথচ শুধু মাথা গায়েব। এ কিরকম হত্যা ভাই। এরই মধ্য সুমন বলল, দিলি তো আমার স্বপ্নটা ভেঙে । রনি ঐ রূপের রানী দেখ কি সুন্দর না। নতুন হয়েছে দোকানটা কত সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়। একদিন যেতে হবে।"বৃষ্টি রেগে বলল, আমি এত গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলছি আর তুই পুতুল নিয়ে পরে আছিস। ছেলেমানুষ পুতুল দিয়ে কি করবি। সুমন হেসে বলল,আসলে পুতুলগুলো এত জীবন্ত যে দেখে মনের আশ মেটেনা। আচ্ছা বল কি বলছিস।"বৃষ্টি বলল,গত এক সপ্তাহ ধরে খবরগুলো বের হচ্ছে। তুই কি দেখিসনি?"সুমন হেসে বলল,দেখবো না কেন?রফিকের সঙ্গে কথাও হয়েছে। কিন্তু সব যদি আমরা করবো পুলিশ কি করবে?ওদেরকেও কিছু করতে দে।তাছাড়া সারাদিন অন্যের পিছনে ছুটে যাবো। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নেই। এটা নিয়ে কেউ ভাবে? এই যে আমি অসুস্থ ছিলাম কজন দেখতে এসেছে। এই যে তুই এত ঝামেলায় ছিলি একবার আমায় বলেছিস?আমি তদন্তের স্বার্থ থেকে বেরিয়ে তোর একবার খোঁজ নিয়েছি। অথচ কত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো তোর জীবনে।
বৃষ্টি অবাক হয়ে বলল, আমার জীবনে?
ওমা আমার জীবনে আবার কি ঘটলো?"
সুমন বলল, ন্যাকামি রাখ। রনি সব বলেছে আমায়। আমাকে একবার বলতে পারলি না। বৃষ্টি হেসে বলল,ও ছাড় ওসব তুই তো অসুস্থ ছিলি। কারো কথা তোর তখন সহ্য হচ্ছিল না। তাই তোকে জ্বালাইনি। তাছাড়া জানতাম সবাই ভুল বুঝলেও তুই ভুল বুঝবি না।"সুমন হেসে বলল,সবজানা আমার। এরই মধ্যে শফিকের বাবা এসে হাজির হলো,রনি চা এনে ওদের দিল। শফিক বলল,বাবা অনেক তথ্য জোগাড় করেছে।"শফিকের বাবা বলল, নির্জন জায়গায় একদম অন্ধকার যেখানে সেখানে অ্যাটাক হচ্ছে। ওরা বুঝে শুনে এমন লোককে অ্যাটাক করছে যে বাঁধা দিতে অক্ষম।রফিক বলল,
ও আচ্ছা শোন তোর বদলে আমি যাবো। দেখি আমি কতদূর কি শিখেছি। তোর চিন্তা নেই। তুই শুধু গার্ড করবি আমায়। সুমন বলল,
"যদি সাইকো কিলার হয়। কোনো মোটিভ নেই। কখনও দেখা যায় এরা নিজেদের আনন্দে খুন করছে কখনও দেখা যায় এরা একজনের থেকে বেশি রেকর্ড করার জন্য খুন করছে। ধর তুই একশো জনকে খুন করেছিস। ঠিক তোর প্যার্টানে আমাকে একশো একটা খুন করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু কেউ দেয়না। এরা নিজেরাই নিয়ে নেয়। শামছুল কাকা এসে বলল
"কত বছর আর ডিউটি হলো তোর শফিক। আমার মতো বয়েসে এসে অবসর নিলে বুঝতে পারবি পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে মানুষ। আমি কত ঘটনার যে সাক্ষী। একবার এক বাবা তার সন্তানের হৃৎপিণ্ড খেয়েছিল তাও কাঁচা। কেন জানিস,শুধুমাত্র পৌরুষতো ধরে রাখবে বলে আজীবন। কোন তান্ত্রিক তাকে এই বিধান দিয়েছিল। ভাবতে পারিস অশিক্ষা আর কুসংস্কার মানুষকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছিল লোকটাকে নিজে হাতে খুন করি।"শফিক বলল,এখানে তো শিশু নয় বরং যথেষ্ট সুস্থ, স্বাভাবিক, সুঠাম লোকজনের মাথা উপড়ে ফেলা হচ্ছে। আবার শুধু যে পুরুষ তাও নয় পুরুষ, স্ত্রী উভয়ের। তবে সুখবর এখনও পর্যন্ত কোনো বাচ্চার মাথা উপড়ে ফেলা হয়নি। "সুমন বলল,দেখ যদি তদন্ত করে কিছু জানা যায় আমাকে জানাস। রনি কে বলিস সে আমাকে সব বলে দেবে। সত্যি বলতে আমার এখন এসব নিয়ে ঘাঁটার কোন ইচ্ছা নেই।
রনি হেসে বলল, রনি সঙ্গে থাকতে তোর মন খারাপ। চল তার চেয়ে ঘুরে আসি। মোম পুতুলের ঐ শোরুমে যাওয়া যাক। রফিক ওখান থেকে সবার জন্য পুতুল কিনে এনেছে। খুব প্রশংসা করছিল। ওরা সবাই মিলে মিশে চলল শোরুমে। রফিক কালকেই ঘুরে এসেছে তাই ও গেলোনা। এই তো আষাঢ় মাস শেষ হতে চলল। কিন্তু বৃষ্টি এখনও ঢোকেনি শহরে। কি ভ্যাপসা গরম। আকাশে যেন শরতের সাদা মেঘ। রাস্তায় লোকজন বেশ কমে এসেছে। অফিস টাইম অনেকক্ষণ চলে গেছে। তাই ভিড়টা কম। শফিক একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। কালো কাঁচ তুলে এসি চালিয়ে গান শুনছে ওরা। লন্ডনের পর্যটনশিল্প ও অর্থনীতিতে মাদাম তুসো জাদুঘর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধুমাত্র মোম দিয়ে গঠিত জাদুঘরটিতে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত ও রাজকীয় ব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্র তারকা, তারকা খেলোয়াড় থেকে শুরু করে খ্যাতনামা খুনী ব্যক্তিদের মূর্তিও সযত্নে রক্ষিত আছে।সুমন ফোনটা খুলে ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলল,একদম ঠিক বলেছিস। এই দেখ আরোও কি লেখা।পলাশ বলল,আরে তোরা হঠাৎ মোমপুতুল নিয়ে পরলি কেন?এখন এগুলো কোনো ব্যাপার নয়। আমাদের ছোটবেলায় কত স্কুলে করতে দিয়েছে। করিসনি তোরা। তাছাড়া এখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন মরে গেলে কি সুন্দর মূর্তি করে বাড়িতে রেখে দেয়। দেখবি স্যোশাল মিডিয়ায় ছবি দেয়। একদম পুরো জীবন্ত। মনে হবে মানুষটা সত্যি বসে আছে। "রনি হেসে বলল, কার মূর্তি বানাবি আমার। উফফ ট্রু লাভ একদম। দেখ জিজ্ঞেস করে যদি বানায় আমি তো আজকেই অর্ডার দিয়ে যাবো। সবাই রনির কথায় হেসে উঠলো।
কথা বলতে বলতে ওরা চলে এসেছে। বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে খোলামেলা একটা বাগানবাড়ি। ওর মধ্যেই এই শোরুম। ছোট বড় সব রকমের মোমপুতুল পাওয়া যায়। বেশিদিন খোলেনি। কিন্তু এর মধ্যেই বেশ নাম করে নিয়েছে। সত্যি পুতুলগুলো এত সুন্দর আর জীবন্ত লাগে যে যারা নিয়ে যায় তারা নিজেরা তো আসেই অন্যান্য বন্ধুদের ও নিয়ে আসে।
শোরুমের বাইরে একটা ঘন্টি লাগানো সেটা বাজাতেই ভেতর থেকে এটা আওয়াজ এলো,
"ভেতরে আসুন।
ওরা ভেতরে প্রবেশ করতেই একদম থ হয়ে গেলো।।পুতুল কাকে বলে। জীবজন্তু থেকে গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ কি নেই। সব জীবন্ত যেন আর সব মোম দিয়ে তৈরী। ওরা এদিকে ওদিকে ঘুরে দেখতে লাগলো।