রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী রৌমারীতে সীমান্ত যুদ্ধ দিবস

লেখক:
প্রকাশ: 2 years ago

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী রৌমারীতে সীমান্ত যুদ্ধ দিবস

লিটন সরকার,রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

ওয়াহিদ, কাদের, মাহফুজ শহীদদের-আমরা তোমায় ভুলি নাই’ এই শ্লোগানের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে সংঘর্ষের বর্ষপূর্তি ২৩ বছর উপলক্ষে সাবেক এমপি রুহুল আমিনের সহযোগীতায় এলাকাবাসির আয়োজনে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৯
টায় বড়াইবাড়ী দিবসে শহীদদের পুষ্প মাল্য অপর্ণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন সাবেক এমপি রুহুল আমিন, কলাবাড়ি বিবিসি উচ্চ বিদ্যালয়, বড়াইবাড়ি গ্রামবাসির পক্ষে, কুটিরচর স্কুল এন্ড কলেজ, বারবান্দা সুর্য্য সংঘ, বীরযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম লাল, শহীদ পরিবারের পক্ষে, বড়াইবাড়ি ব্যবসায়ীসহ এলাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। ২০০১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বড়াইবাড়ী গ্রামে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে নারকীয় তান্ডব চালায়। অকুতোভয় তৎকালিন বিডিআর ও গ্রামবাসীদের মিলিত প্রতিরোধে পিচপা হয় আগ্রাসনকারী বিএসএফ। নিহত হয় বাংলাদেশের তিন বীর বিডিআর ও আহত হয় ৫ জন বিডিআর জোয়ান। ভারতীয় পক্ষে নিহত হয় ১৬ ও আটক হয় ২ বিএসএফ সদস্য। সেই থেকে ঐতিহাসিক এই দিনটি পালিত হয় ‘বড়াইবাড়ী দিবস’ হিসেবে। এলাকাবাসির দাবী বিজিবি
ক্যাম্পের সামনে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, চলমান নির্মিত ব্রিজ ও রাস্তা তিন শহীদদের নামে নাম করণ ও ঐতিহাসিক দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানান।
পবিত্র মাহে রমজান মাসের কারনে সিমিত পরিসরে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বড়াইবাড়ি, চুলিয়ারচর, বারবান্দা উদযাপন কমিটির আয়োজনে বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ ভাইচ চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার স্মৃতি, রাজিবপুর ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যক্ষ মোকলেছুর রহমান, শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিল, চরশৌলমারী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কে.এম ফজলুল হক মন্ডল, রাজিবপুর উপজেলার মহনগঞ্জ ইউনিয় আওয়ামী লীগ
সাধারণ সম্পাদক অবঃ বিডিআর আজিজুর রহমান, যুদ্ধে আহত বিডিআর হাবিলদার আব্দুল গণি, সিপাহি হাবিবুর রহমান, নিহত ওয়াহিদুজ্জামান এর ছেলে দেলোয়ার ওয়াহিদ ও শহীদ সিপাহি আব্দুল কাদেরের সহধর্মিণী প্রমূখ।
উল্লেখ্য যে, ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোর রাতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশী সীমান্তে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালায় ও বাড়ি-ঘর নির্বিচারে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিন হামলার দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল বিডিআর-জনতা। আর সেই
প্রতিরোধে বিএসএফ এর ১৬ জনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় এবং ২ জন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বিডি আরের নিকট আটক হয়। শহীদ হয়েছিল ৩৩ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের সিপাহী আঃ কাদের।
এছাড়াও আহত হয় বিডিআর এর হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ন্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহি হাবিবুর রহমান ও সিপাহি জাহিদুর নবী । বিএসএফ এর তান্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯ টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমান ছিল ৭২ লক্ষ টাকা।
কাটেনি সীমান্তের আতংক। গ্রামের মানুষ এখনও দুঃসহ স্মৃতিতে হঠাৎ রাতে আতকে উঠে। শেষ হয়নি তাদের দুঃখের দিন।

error: Content is protected !!