মোঃ ওয়াজেদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:
যশোর সদরের সতীঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে ঘটে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া সাংবাদিক পুত্রকে দিনভর অফিস রুমের বাইরে বসিয়ে রাখলেন প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বুধবার সতীঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীরা ছাত্র ও দৈনিক কল্যাণ’র সাংবাদিক ওয়াজেদ আলীর পুত্র আবু হুরাইরা জয়’কে ব্যঙ্গ – বিদ্রুপ করাকে কেন্দ্র করে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে সহপাঠীদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানতে পেরে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন এবং টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিবেন মর্মে হুমকি দেন।
প্রতিদিনের ন্যায় গতকাল রবিবার ওই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে গেলে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন তার স্কুল ব্যাগ কেড়ে রেখে অফিস কক্ষের বাইরে দিনভর বসিয়ে রাখেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা সাংবাদিক ওয়াজেদ আলী ঘটনাটি জানতে পেরে বিদ্যালয়ে গিয়ে ছেলের ভুল স্বীকার করে তাকে ক্লাস করতে দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের নিকট আকুতি জানান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তার কথায় কর্ণপাত করেনি। তিনি বিদ্যালয় থেকে টিসি নিয়ে পার্শ্ববর্তী কুয়াদা বা রাজারহাটে ভর্তি করানোর কথা বলে সাংবাদিক ওয়াজেদ আলীকে মুচলেকা দিতে বলেন। কিন্তু মুচলেকা না দিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিকট ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অত্র বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্র। গত বুধবার আমাদের ক্লাসে আমাকে নিয়ে সহপাঠীরা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলে আমি তাদের প্রতিবাদ করি। তাতে ডাঃ আব্দুল আজিজের পুতনি (ছেলের মেয়ে) তার দাদাকে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন। তিনি বিদ্যালয়ে আসলে প্রধান শিক্ষক আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় আজিজ ডাক্তার প্রধান শিক্ষককে টিসি দিয়ে আমাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিতে বলেন। ওইদিন প্রধান শিক্ষক আমাকে শাস্তি দেন, আমি ক্লাস শেষে বাড়ি চলে আসি।
আমি গত রবিবার বিদ্যালয়ে আসলে প্রধান শিক্ষক ক্লাস থেকে আমার বাগ এনে লাইব্রেরিতে রেখে অফিসের সামনে একটি বেঞ্চে সারাদিন বসিয়ে রাখে। আমি প্রধান শিক্ষকের নিকট বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ চাইলে তিনি ব্যাগ দেননি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো আমার ছেলে বিদ্যালয়ে আসে। গত বুধবারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে আমার ছেলের নামে একটি অভিযোগ দেন এবং আমাকে রবিবার দেখা করতে বলেন। যথা রীতি আমার ছেলে বিদ্যালয়ে আসলে প্রধান শিক্ষক তাকে ক্লাস করতে না দিয়ে ব্যাগ আটকে রেখে অফিসকক্ষের বাইরে বসিয়ে রাখে। আমি খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষককে অনুনয় বিনয় করি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমার কথায় কোন দাম দেয়নি।
শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে না দেওয়ার ঘটনায় বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য তবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘটনাটি জানি না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা অন্য কোন শিক্ষক আমাদের কিছু জানায়নি। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পিতা আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে জানালে আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি শুনি। তিনি আমাকে জানান, ওই শিক্ষার্থী একটু দুষ্টু প্রকৃতির। সে বিদ্যালয়ে তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটি করেছে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষককে মৌখিকভাবে জানালে, তিনি ওই শিক্ষার্থীকে টিসি দেওয়ার প্রস্তাব করে ক্লাসে ঢুকতে দেননি।
অপর এক অভিভাবক সদস্য আমজাদ হোসেন’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য এবং ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী আমার ভাতিজা। বিদ্যালয়ে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা জানি না। আমি ঘটনাটি শুনেছি, শুনেই প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। আমরা চাই এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হোক, বাচ্চাটি পড়াশোনা করুক। সে যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তাকে আদর ভালবাসা দিয়ে বুঝিয়ে সুষ্ঠু পথে ফেরত আমার চেষ্টা করা উচিত। আমরা সবাই মিলে সেই চেষ্টাই করবো।
ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নিতে তার অফিস কক্ষে গেলে তিনি বক্তব্য না দিয়ে তার অফিস কক্ষ থেকে বাইরে চলে যান। এমনকি ৭ম শ্রেণীর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নিতে চাইলে তাতেও তিনি বাধা প্রদান করেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম’র সাথে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে তারা জানান, ঘটনাটি আমরা জানি না। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমরা বিষয়টি যাচাই বাছাই পূর্বক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।