মোঃ বুলবুল হোসেনের লেখা গল্প “ইচ্ছা শক্তি”

লেখক: Champa Biswas
প্রকাশ: 1 year ago

মোঃ বুলবুল হোসেন:

সুমন বরাবরই দৌড় প্রতিযোগিতা কখনো দ্বিতীয় হয়নি। সব সময় প্রথম হয়ে আসছে, তার প্রশংসা তার বন্ধুদের মুখে তার স্যারদের মুখে প্রশংসা শুনতে সুমনের ভালই লাগে । এবারও স্কুলের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে সুমনকে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তাই স্কুলের স্যার সুমনকে নিয়ে মাঝে মাঝে অনুশীলন করান। একদিন অনুশীলন করতে গিয়ে সুমন হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়। সাথে সাথে সুমনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সবকিছু পরীক্ষা করে ডাক্তার বলে সুমনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি চোখের ব্যবস্থা করতে হবে ।তাছাড়া সুমন দেখতে পারবেনা। সুমনের বাবা-মা অনেক কান্নাকাটি করতে থাকে। সুমনের বাবা বলতে থাকে আমার ছেলেটার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। এমন খবর শোনার পর তার বন্ধুরা কেউ তার পাশে থাকলো না। সবাইকে একে একে সুমনকে ছেড়ে চলে গেল। স্বার্থপর দুনিয়াতে আপন বলতে তার বাবা মা ছাড়া আর কেউ রইল না। সুমনের চাচাতো বোন সুমি সুমনকে অনেক ভালোবাসে ।মুখ ফুটে বলতে পারে না ।সুমনও তা বুঝত। সুমি, সুমনের বাবা মাকে বলল, কাকা আপনি আমার একটি চোখ সুমনকে দিয়ে দেন ।তাহলে সুমন আগের মতো দেখতে পাবে । কাকা বলল না সুমি এটা হয় না ও যেমন আমার ছেলে তুমিও আমার মেয়ে ।আমার ভাইয়ের মেয়ে মানে আমার মেয়ে। তাই তোমার চোখ নেওয়া যাইবে না। সুমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে ।এমন সময় সুমির বাবা-মা এসে বলে, দেখ সুমন তো আমার ছেলে মত। সুমি যেহেতু দিতে চাইছে দুটি চোখ তো না একটি চোখ দিবে । তাহলে দুজনেই ভালো দেখতে পারবে। সুমনের বাবা বলল, আচ্ছা ভাই তুমি বলছো আমি আগে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখি। ওদের কাছে চোখ পাওয়া যায় কিনা। সুমির বাবা বলল, ঠিক আছে তোর যেটা ভালো মনে হয় কর । তখন সুমির বাবা সুমিকে বলল, সুমি তুই সুমনের খেয়াল রাখিস সুমনের যখন যেটা লাগে এনে দিস। বুঝতেইতো পারছিস সুমন দেখতে পারতেছে না। তার সেবা করার জন্য একজন লোক দরকার, সুমি এরকম সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। পরদিন সুমনের বাবা হাসপাতালে খোঁজ নিতে যায়। কোন চোখ পাওয়া যায় কি না।

ডাক্তারের সাথে কথা বলতেই, ডাক্তার বলল সামনের চক্ষু হাসপাতালে চোখ পাওয়া যায়। আমার বন্ধু কে ফোন করে দেখি । ফোন করাতেই ওপাশ থেকে বলল হাসপাতালে চোখ আছে। সে দুটি চোখ তোমাকে দেওয়া যায়। সুমনের বাবা বলল ডাক্তার সাহেব যত টাকা লাগে আমি দেব কিন্তু সুমনের দুটি চোখ ভালো করে দেন। এমন অবস্থায় ডাক্তার দুটি চোখ সংগ্রহ করে। সুমনের অপারেশন করানো হয়। অপারেশন করার পর চোখ খুলে দিলে সুমান সবাইকে দেখে পেয়ে খুশি হল।সুমনের বাবা বলল সুমন তুই জানিস সুমি তোর জন্য চোখ দিতে চেয়েছিল। বাবা আমি সব শুনেছি সুমি আমাকে অনেক ভালোবাসে যার কারণে সে তার একটি চোখ আমাকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাবা সুমির চোখ লাগে নাই আল্লাহর রহমতে চোখের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এজন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করি। বাবা এবার আমি আস্তে আস্তে প্র্যাকটিস করবো তারপর আবার আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করব। ডাক্তার বলছে সাবধানে কাজ করবে। এক বছর যাবত সুমন যখন অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিল এর মধ্যে কোন বন্ধু খোঁজ নেইনি । সুমি সব সময় সুমনকে সাহসযোগিয়েছে । তার পাশে থেকেছে এক বছর পরে যখন স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হল। বাৎসরিক অনুষ্ঠানে সুমনকে দেখে সবাই অবাক স্যারেরা বলল কি ব্যাপার সুমন তোমার না চোখের সমস্যা হইছিল। সুমন সালাম দিয়ে বলল স্যার আল্লাহর রহমতে আমার চোখ ভালো হয়েছে। আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাই । সুমনকে সুযোগ দেওয়া হল সুমন দৌড় প্রতিযোগিতায় এবারও প্রথম হলো। প্রথম পুরস্কার নিয়ে সুমন, সুমির গলায় দিয়ে দিল। আর বলল, আমার এই সুস্থ হওয়ার পিছনে সম্পূর্ণ আমার চাচাতো বোন সুমির প্রেরণা। সুমির ইচ্ছা সাহস সবকিছুর কারনে আজকে আমি আবার পুনরায় দৌড় শুরু করতে পেরেছি। তাই এই পুরস্কার সুমির। সবাই সুমিকে অভিনন্দন জানালো আর প্রথম হওয়ার পর থেকে এবার তার পাশে বন্ধুর অভাব নেই। হাতে তালি দেওয়ার লোকের কমতি নেই। যার সাথে জীবনে কোনদিন কথা কথা হয় নাই। সেও একবার তাকে দেখে কথা বলে। সুমন বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে বলবে কিছু। তখন তার বাবা বলল সুমন তোকে একটা কথা বলব, আমরা ঠিক করেছি সুমির সাথে তোর বিয়ে দিবো। কারণ তোকে সুনির চাইতে কেউ বেশি ভালবাসতে পারে না। সুমান বললো তোমরা যেটা ভালো মনে কর।

error: Content is protected !!