রতন শর্মা,স্টাফ রিপোর্টার:-
ভাই কই যাইবেন? আশুলিয়া, জিরাবো, জামগড়া… ও আপা কই যাইবেন? নরসিংহপুর, নবীনগর, বাইপাইল’—মুক্তি রানী লেগুনাচালকের আসনে বসেই যাত্রীদের এভাবে ডাকতে থাকেন। কোনো কোনো যাত্রী নারী চালককে দেখে খানিকটা থমকে যান। আবার কেউ কেউ সরাসরি জানতে চান তিনিই লেগুনা চালাবেন কি না।
তবে নিয়মিত চলাচল করা যাত্রীরা দৃঢ় কণ্ঠেই বললেন, এই দিদি গাড়ি খুব ভালো চালান। ব্যস্ত সড়কে দক্ষ চালক না হলে তো গাড়ি চালাতে পারতেন না।
চালকের আসনে বসা মুক্তি রানীর গলায় ঝুলছে লেমিনেটিং করা ড্রাইভিং লাইসেন্স। বললেন, ‘যাত্রী খুঁইজ্যা আনা, যাত্রীর কাছ থেইক্যা ভাড়া তোলা সব আমিই করি।’
প্রায় এক বছর ধরে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় লেগুনা চালাচ্ছেন মুক্তি রানী। এর আগে গাড়ি চালানো ও লাইসেন্স পেতে লেগেছে দুই বছর। দিনে যাত্রীভেদে কোনো দিন ৫০০ টাকা আবার কখনো আরও কম বা বেশি টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন তিনি।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় স্কুলে গেলেও এসএসসি পর্যন্তও পড়তে পারেননি মুক্তি রানী। অভাবের কারণেই তাঁর বাবা সাভারে চলে এসেছিলেন। মাত্র ১২ বা ১৩ বছর বয়সে পোশাকশিল্প কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন, বয়স কম বলে কারখানায় বিদেশি ক্রেতারা এলে মুক্তি রানীকে লুকিয়ে রাখা হতো। কাজ করে দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন একসময়।
কিন্তু মুক্তি রানী বললেন, পোশাকশিল্পের কাজে গালাগালি শুনতেই হতো। পরিশ্রমও ছিল। এখন গালিগালাজের বালাই নেই। মন চাইলে লেগুনা নিয়ে বের হন, মন না চাইলে বের হন না।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুক্তি রানী সংসারের কাজ শেষ করে গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে তাঁর জীবনের গল্প শোনালেন। বললেন, এমনও অনেক দিন থাকে যখন লেগুনার ১০ থেকে ১২ জন যাত্রীর সবাই পুরুষ, আর চালকের আসনে তিনি একা নারী। বললেন, গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর থেকে তাঁর মাথায় থাকে যাত্রী, নিজের আর লেগুনার নিরাপত্তার কথা। মুক্তি রানী বললেন, ‘যাত্রীরে গাড়িতে উঠাইছি, নিরাপদে নামাইতে পারি তার চেষ্টা করি সব সময়। নিজের জানের কথাও ভাবতে হয়।
এ জীবন তো কখনো থেমে থাকে না, আর এই জীবনে চলার পথ সবার কাছে এতো সহজ হয়না। লেগুনার পর মুক্তি রানী চালাতে চান বাসও।