ডেস্ক রিপোর্টঃ
জলে এবং স্থলে যাহা কিছু ঘটে সব-কিছুই মানুষের কৃত-কর্মের ফল (পবিত্র আল-কুর-আন সুরা আর-রুম: ৪১, সুরা আশ শুরা: ৩০)।
তারই ধারাবাহিতায় ভালো নেই সারা পৃথিবী এবং দেশের মানুষ। একদিকে তীব্র রোদ আর প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সারা পৃথিবীর মানুষ। এই তীব্র গরমে ঘর থেকে বাহির হতে পারছেনা আর বাহির হইলেও অনেক লোক হিটস্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায়, অনলাইনে খবর ভেসে বেড়াচ্ছে খুন, ধর্ষণ, অন্যায়, অত্যাচার। প্রকাশ্যে অশ্লীলতা, অমানবিকতা, অন্যায় অত্যাচার, দুর্নীতির নিত্য খবর ভেসে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণ হারাচ্ছে। দুর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হচ্ছে সন্তান আর মা-বাবা দিশেহারা হচ্ছে সন্তান হারিয়ে।
দেশসহ সারা পৃথিবীটা ছেয়ে গেছে অন্যায় অবিচারে, ছেলে নেশার টাকা না পেয়ে মারছে বাবা-মাকে আবার ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা ছেলেকে মেরে ফেলার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। মাদকের টাকার জন্য ছেলে মা-বাবাকে খুন করছে এমন ঘটনাও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়াতে। কি অমানবিক ও নির্মম ভাবতেও ঘৃণা হয় এসব দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারা পৃথিবীটা পাপে জর্জরিত। সত্যি কি তাহলে এই পৃথিবীটা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে?
মহান আল্লাহ তা-আলা আমাদের এই কৃত-কর্মের জন্য না-খোশ হয়ে মাঝেমধ্যে দুর্যোগের কবলে ফেলেন যাতে করে কিয়ামতের যে কঠিন ভয়াবহ শাস্তি সেটা একটু হলেও মানুষ যাতে অনুধাবন করতে পারে। বিভিন্ন আলেম উলামারা জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে বলেছেন পৃথিবীতে মানুষ যখন অন্যায় অত্যাচার বেশি করবে তখন জাহান্নামের সামান্য হাওয়া দুনিয়াই ছেড়ে দিবেন যাতে করে তারা অনুধাবন করতে পারে।
পবিত্র আল-কোরআন ও হাদিসে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের সামান্য কিছু বিবরণ দেয়া হলো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে।
(সুরা মা-আরিজঃ ১৫-১৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের চামড়া ও পেটের ভেতর যা আছে তা বিগলিত করা হবে, (সুরা হজঃ ১৯-২০)।
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা আমার আয়াত প্রত্যাখ্যান করে, আমি তাদের অগ্নিতে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখনই এর স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করতে পারে। ’ (সুরা নিসা : ৫৬)।
অন্যদিকে হাদিসে এসেছে দুনিয়ার আগুন থেকে জাহান্নামের আগুনের তেজ ৭০ গুন বেশি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: «نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ: «فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا» “তোমাদের দুনিয়ার আগুন, জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, এটা কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বলেন: এর সাথে আরো ৬৯ গুন যোগ করা হবে এবং প্রত্যেকটির গুণ এ আগুনের মতো।” (বুখারি, ৩২৬৫ ও মুসলিম, ২৮৪৩)।
আমরা জাহান্নামের সামান্য এই একগুন আগুন সহ্য করতে পারছিনা অথচ এর চেয়ে আরো ৬৯ মতান্তরে ৭০গুন আগুন কেমনে সহ্য করিবো!
মহান আল্লাহর সৃষ্টির আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে সব থেকে বেশি জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা মানুষকে দান করেছেন। স্বাধীনতা দিয়েছেন, ভালো মন্দ পরখ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। দুনিয়া এবং আখেরাতের সম্পর্কে প্রতিটি মানুষ জানেন এবং বোঝেন, তারপরও মানুষ মন যা চায় তাই করে!
লোভ-লালসা-কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার শয়তানি বুদ্ধি কিছু মানুষকে প্রতি মুহূর্তে প্ররোচিত করতে থাকে। মানুষকে যদি মহান আল্লাহ স্বাধীনতা না দিতেন তাহলে হয়ত এত অন্যায়, ব্যভিচার, খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ- লালসা, ফেৎনা-ফ্যাসাদ থাকতো না। নিষ্পাপ মানুষ নশ্বর পৃথিবীতে বসবাস করত আর আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকত।
মানুষের কৃতিকর্মে পৃথিবীর বাতাস ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে, যার ফলশ্রুতিতে যে গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাতে অচিরেই বিশ্ব ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে। পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটাবে সে পানিও প্রচন্ড রোদের তাপে গরম। তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বেঁকে যাচ্ছে রেলের পাত।
বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গরমের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাইরে বের হওয়া মানুষগুলোর কাছে দিনের বেলায় সব কিছুই ফুটন্ত কড়াইর মতো। শুধু মানুষ নয়, হাঁসফাঁস অবস্থা প্রাণ প্রকৃতিরও। অসহনীয় গরম আর অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন স্থানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করে বিশেষ মোনাজাত করা হচ্ছে। তারপরও বৃষ্টির আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস বলছে মে মাসের ২/৩ তারিখ থেকে ঝড় বৃষ্টিতে সম্ভাবনা রয়েছে। মহান আল্লাহ চাইলে এই অশান্ত অস্থির পৃথিবীকে রহমতের বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে মুছে দিতে পারেন।
অপরদিকে আমাদের বাংলাদেশে গাছ-গাছালি, নদ-নদী, খাল-বিল মহান আল্লাহর অনিন্দ্য সৃষ্টি। গাছের সঙ্গে মানুষের জীবন-প্রভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাণিদের বেঁচে থাকার জন্য গাছের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যিক। কারণ, সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকা বৃক্ষ প্রাণে শিহরণ জাগায়। শহরে কিংবা গ্রাম্য রাস্তায় রিকশা-ইজিবাইক, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানরিকশা নিয়ে বের হয়ে যারা ঘেমে একাকার হয়ে যায়, একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে থাকে।
ঝিরঝির হিমেল বাতাসে দেহ-মন জুড়িয়ে আসে। অথচ আমরা সেগুলো দিন দিন ধ্বংস করে দিয়েছি। যার ফলে, দেশে দিন দিন নদ-নদীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ভরাট করে সবুজ কর্তন করে গড়ে উঠেছে শহর। শহরের জলধরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মাঠ ও পার্কগুলো যেভাবে দখল হচ্ছে এতে সবুজের পাশাপাশি ওপেন স্পেস কমে যাচ্ছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ণ আরেক বড় সমস্যা। একটি বিল্ডিংয়ের ঘাগেসে আরেকটি বিল্ডিং, এতে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, সবুজ আর জলাধার নিধনের কারণে আমাদের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে না। ফলে প্রতিবছর তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হচ্ছে।
খবরে দেখলাম, তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন দেশের সচেতন নাগরিকরা গাছ লাগানোর পক্ষে ক্যাম্পেইন করছেন। ঠিক এই সময়েই দেশের নানা জেলায় কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। স্বয়ং বন বিভাগ মেতেছে এই ধ্বংসযজ্ঞে। এটা একটা অমানবিকতা। আবার তারাই স্লোগান দেয় 'গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান।' গাছ আমাদের ছায়া-অক্সিজেন দানসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা দেয়। পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়রোধে গাছের কোনো বিকল্প নাই। যত্রতত্র গাছ কাটা জনজীবনসহ পরিবেশের জন্য চরম হুমকি।
হে আল্লাহ তুমি আমাদের সকলকে বুঝার এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দাও। (আমিন)
এম,এম,হোসেন/নিউজ বিডি জার্নালিস্ট ২৪