মোঃ এমদাদ মাগুরা প্রতিনিধিঃ
সারাদেশে একযোগে আগামী ১৮জুন ২০২৩ জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পালিত হবে। মাগুরা জেলায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে মাগুরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে অবহিতকরণ ও কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৫ জুন বৃহস্পতিবার সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মাগুরার সিভিল সার্জন ডাঃ শহিদুল্লাহ দেওয়ান।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার শহিদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, শিশুদের রাতকানা, হাম, দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া, মারাত্মক অপুষ্টি থেকে রক্ষা করতে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন পালন করছে সরকার। এ দিবসে ৬-১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে ১টি নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও ১২-৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে ১টি করে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠতে সরকারের এ কার্যক্রম সফল করতে হবে। কোন শিশু যেন এ কার্যক্রমের আওতায় বহির্ভূত না থাকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা ভ্যাক্সিনেশন এর ক্ষেত্রে মাগুরা জেলা সারাদেশে রোল মডেল। ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন এর ক্ষেত্রেও এই অর্জন আমরা ধরে রাখতে চাই।
সভায় জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন কার্যক্রম বিষয়ে সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করা হয়। ভিটামিন এ খাওয়ানোর গুরুত্বারোপ করে জানানো হয়, ভিটামিন ‘এ’ দেহের স্বাভাবিক বৃৃদ্ধিতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। জন্মের পর পরই নবজাতককে শালদুধসহ মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করুন। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস (১৮০ দিন) শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো। পানি, মধু, চিনি বা মিসরির পানি ইত্যাদি খাওয়ানো যাবে না। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমান মত ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা) ও উদ্ভিজ খাবার (হলুদ ফলমূল ও রঙিন শাক-সব্জি) খেতে দিন। জেরোফথ্যালামিয়া (রাতকানা ও বিটট্স স্পট), দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া, হাম ও মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
সভায় জানানো হয়, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৬-১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এ ক্যাম্পেইনে ৬-১১ মাস বয়সী ১২৬৪২ জন ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ১০৫৪৭২ জন শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাগুরা জেলাতে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন সুষ্ঠু ও সফলভাবে বাস্তবায়নে ৯৩৯টি কেন্দ্রে ১৫৫৭জন স্বেচ্ছাসেবী ও ৩০১ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্র সকাল ৮টা হতে ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা, মাইকিং, মসজিদে জুম্মার নামাজের পূর্বে মসজিদের ইমাম/খতিবের মাধ্যমে মুসল্লিদের অবহিতকরণ এবং অন্যান্য উপাসনালনের মাধ্যমেও একই বার্তা প্রেরণ করা হচ্ছে।
সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মো: জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মাগুরা জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান, তথ্য অফিসার পাভেল দাস, মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক মোঃ আলী আশরাফ। ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার দেবপ্রিয়া।
সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধীজন, স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।