এস,এম রাকিব রাফসান:
অর্থ সম্পদ জনবল প্রভাব প্রতিপত্তিহীন অসহায় এক দরিদ্র নারীর শেষ সম্বল বসতভিটা কেড়ে নিতে তৎপর একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ৩৬ বছর পর নানামুখী চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে চরম বিপর্যস্ত করে তুলেছে এ পরিবারটিকে। মাত্র ৩শতক জমি হাতাতে না পেরে প্রকাশ্য দিবালকে অসহায় এ পরিবারটির উপর হামলা চালিয়ে মারপিট ও বসতবাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
জানা যায়, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের ঝাঁপা গ্রামে রোহিতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলী ৩৬ বছর পূর্বে ১৭৪ নং ঝাঁপা মৌজা থেকে একই ইউনিয়নের কোমলপুর গ্রামের ছিদ্দিক মোড়লের নিকট থেকে ৩শতক জমি ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত ওই জমি ছিদ্দিক মোড়ল রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে টাকা নিয়ে কৌশলে বিদেশে পাড়ি জমায়। এদিকে জমি ক্রয়ের পর থেকে চেয়ারম্যানের পরিবার দীর্ঘ ৩যুগ ধরে সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে।
সম্প্রতি ছিদ্দিক মোড়ল দেশে ফিরে আসলে অসহায় পরিবারটি তাকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তুু জমির মালিক বিক্রিত জমি লিখে না দিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করে। একপর্যায় ছিদ্দিক মোড়ল বিক্রিত ওই জমি তার স্ত্রী হাজিরা বেগমের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন। এরপর ছিদ্দিকসহ তার পরিবার অসহায় এ পরিবারটির উচ্ছেদের জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। ষড়যন্ত্রের একপর্যায় গত ১০ নভেম্বর দুপুর ২টার সময় সাবেক চেয়ারম্যার আনছার আলীর পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে আনছার আলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত মারাত্মক অসুস্থ্য স্ত্রী ও এক বাক প্রতিবন্ধিসহ ২ কন্যাকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। সেই সাথে বাড়ির প্রাচীর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেযওয়া হয়। এঘটনায় আনছার আলীর মেয়ে লাকি আফরান বাদি হয়ে গত ১১ নভেম্বর মনিরামপুর থানায় ৫জনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ নভেম্বর ঝাঁপা পুলিশ ফাঁড়িতে উভয়পক্ষকে নিয়ে এক শালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এব্যাপারে অসহায় আনছার আলীর অসুস্থ্য স্ত্রী রিজিয়া বেগম জানান, তার কোন পুত্র সন্তান নেই, আছে দুইজন মেয়ে তার মধ্যে একজন বাকপ্রতিবন্ধি। ৩৬ বছর পূর্বে তার স্বামী কোমলপুর গ্রামের ছিদ্দিক মোড়লের কাছ থেকে ৩শতক জমি ক্রয় করেন। জমির টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ করার পর জমির মালিক জমি লিখে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে বিদেশ পালিয়ে যায়। বিদেশ থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসলে তাকে জমি লিখে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। জমি আজ না কাল লিখে দেবে বলে ছিদ্দিক তার সাথে নানা তালবাহানা শুরু করে।
এরই মধ্যে গত ১০ নভেম্বর দুপুরে ছিদ্দিকসহ তার পরিবারের লোকজন হঠাৎ তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং তিনিসহ তার বাকপ্রতিবন্ধি কন্যা সাথী খাতুন ও লাকি আফরানকে বেধড়ক মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করার পাশাপাশি বাড়িটি ভাংচুর করে। তবে ঘটনাস্থলে ঝাঁপা পুলিশ ফাঁড়ির এক দারোগার উপস্থিতিতে ভাংচুর ও মারপিটের ঘটনা ঘটলেও তিনি কোন কথা বলেননি বলে জানান রিজিয়া বেগম।
রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলী সরদার জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। এরই মধ্যে ৩৬বছর পূর্বে কোমলপুর গ্রামের ছিদ্দিক মোড়ল তার ৩শতক বিক্রি করেন। টাকা নিয়ে তিনি জমিও মাপজোপ করে দেন। এরপর যেদিন জমি রেজিষ্ট্রি করতে হবে তার একদিন পূর্বে তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। এই অবস্থায় আমার পরিবার সেখানে বসবাস করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে ছিদ্দিক বা তার পরিবারের সাথে বহুবার যোগাযোগ করা হয়েছে। সবাই বলেছে ছিদ্দিক বিদেশ থেকে আসলেই জমি রেজিষ্ট্রি করে দিবে। অথচ বিদেশ থেকে আসার পরও জমি রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে উল্টো আমার পরিবারকে মারপিটসহ জমি থেকে উচ্ছেদ করার পায়তারা চালাচ্ছে।
কথা হয় অভিযুক্ত জমির মালিক ছিদ্দিক মোড়লের ছেলে মাসুদ মোড়লের সাথে তিনি জানান, সম্প্রতি তার বাবা দেশে ফিরে এসে মায়ের নামে বাবার সকল জমি লিখে দিয়েছেন। এখন ওই সম্পত্তির মালিক তার মা। ফলে মায়ের জমিতে কারও অবৈধভাবে থাকার কোন অধিকার নেই। আর এই জন্য গত ১১ নভেম্বর উচ্ছেদ করতে গিয়েছিলাম। তার বাবা যদি কারও কাছে জমি বিক্রি করে থাকেন তাহলে ক্রেতারা কাগজপত্র দেখালে তাদের কোন দাবি থাকবেনা বলে জানান মাসুদ মোড়ল।
এব্যাপারে কথা হয় ঝাঁপা বাজার কমিটির সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সাথে তিনি জানান, ছিদ্দিক মোড়ল ৩৬ বছর পূর্বে রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলী সরদারের নিকট ৩শতক জমি বিক্রয় করেন। বিক্রিত ওই জমি লিখে না দিয়ে কৌশলে তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। এরমধ্যে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশে ফিরেই জমি লিখে দেবেন বলে আনছার আলীর পরিবারকে জানান। অথচ দেশে ফিরে ছিদ্দিক বিক্রিত ওই জমি অসহায় এ পরিবারটির নামে লিখে না দিয়ে তাদেরকে একেরপর এক হয়রানী করছে।
এব্যাপারে ঝাঁপা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সঞ্জয় কুমার জানান, বিষয়টি নিয়ে গত ১২ নভেম্বর বিকালে ঝাঁপা পুলিশ ফাঁড়িতে শালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিসে ছিদ্দিক মোড়ল জমি বিক্রি করে আনছার আলীর নিকট থেকে টাকা নিয়েছে এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তবে মিমাংসার জন্য উভয় পক্ষ এক সপ্তাহের সময় নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি মিমাংসা না হয় তাহলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।