মণিরামপুরে মাদক ব্যবসার প্রতিবাদকারীর উপর হামলা, বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ, নারীসহ আহত ৫

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

মণিরামপুর প্রতিনিধি:

মণিরামপুরেন পল্লীতে মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে প্রতিবাদকারী ২ যুবকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুরসহ লুটপাটের অভিযোগ। এসময় সন্ত্রাসীদের মারপিটে আহত হয় নারীসহ অন্তত: ৫ জন। এ ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কাজিয়াড়া গ্রামে। ঘটনার পর পুলিশ আসলেও তারা চলে যাবার সাথে-সাথে সন্ত্রাসীরা এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে পুনরায় মহড়া দেয়। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কাউকে আটক করেনি।
পুলিশ ও স্থানীয়দেও মারফত জানাযায়, উপজেলার কাজিয়াড়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট এলাকায় গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে আসছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ কয়েকবার আটক হয় মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হোতা আসাদুজ্জামান। আসাদের নামে থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করেন কাজিয়াড়া গ্রামের কামাল মোল্যার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম ও মশিয়ার রহমানের ছেলে সুমন হোসেন। এ নিয়ে গত ২৫ জুন সকালে সুমনের সাথে মাদক ব্যবসায়ী আসাদের ঝগড়া হয়। অভিযোগ রয়েছে এ ঝগড়াকে কেন্দ্র করে বিকেলে আসাদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সুমনের ওপর হামলা চালিয়ে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সুমনকে তারা ফেলে রেখে চলে যায়। পরে এলাকাবাসী সুমনকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করেন। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম দুই পক্ষকে নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে এলাকায় সালিশী বৈঠকের ঘোষনা দেন। ফলে আসাদ বিভিন্ন এলাকার মাদকসেবীসহ সন্ত্রাসীদের জড়ো করে ওই সভায় যোগদানের জন্য। ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম জানান, বিষয়টি আচ করতে পেরে তিনি মঙ্গলবারের সভা স্থগিত করেন।
অভিযোগ রয়েছে মঙ্গলবার রাত সাতটার দিকে মাদক বিক্রেতা আসাদের নেতৃত্বে মিন্টু, রমজানসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০/৩৫ জন যুবক লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে প্রথমে হামলা চালায় তৌহিদুল ইসলামের বাড়িতে। এ সময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তৌহিদের পাকাঘরের কয়েকটি জানালার গøাস ভাংচুর করে। পরে তারা ঘরে উঠে আসবাপত্র ভাংচুরসহ তছনছ করে। অবশ্য এ সময় তৌহিদুল ইসলাম বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় তৌহিদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য তাদের বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তৌহিদুলের বাড়িতে বেড়াতে আসা শ্বশুর খবির মোল্যাকে মারপিট করে। এছাড়া মারপিট করা হয় তৌহিদুলের স্ত্রী খাদিজা বেগম, ছেলে মাসুম বিল্লাহ ও জেসমিন নামে অপর এক গৃহবধুকে। তৌহিদুলের স্ত্রী ও শ্বশুর অভিযোগ করেন সন্ত্রাসীরা ঘরের আলমারিতে থাকা ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ও স্বর্নালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তিতে সন্ত্রাসীরা একই গ্রামে অবস্থিত সুমনের বাড়িতে হামলা করে। এসময় অবশ্য সুমনের কাঁচা বাড়িতে ছিলেন তার বৃদ্ধা দাদী ফুলকুমারী। অভিযোগ রয়েছে সুমনকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা সুমনের দাদিকে ঘর থেকে বের কের দেয়। এক পর্যায়ে চলে যাবার সময় তারা ঘরের চালের কয়েকটি টিন ভাংচুর করে। তৌহিদুল ইসলাম ও সুমন হোসেন জানান, তাদের বাড়িতে হামলার সময় সহযোগীতা চেয়ে স্থানীয় ফাড়িতে বার বার খবর (ফোন) দেওয়া হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিক এগিয়ে আসেনি। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে রাত সাড়ে আটটার দিকে ফাড়ি থেকে পুলিশ সদস্যরা তাদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু তার আগেই সন্ত্রসীরা চলে যায়। তবে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে আসাদুজ্জামান জানান, তৌহিদ এবং সুমন নিজেরা পরিকিল্পীতভাবে ঘরভাংচুর করে তাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে। তবে মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসাদুজ্জামান পাল্টা অভিযোগ করেন, মাদকের মূল হোতা তৌহিদ, সুমন, সাগর ও আজিজ। তবে তিনি জানান, সম্প্রতি তৌহিদ এবং সুমন পরিকল্পিতভাবে ডিবি পুলিশ দিয়ে তাকে হয়রানি করেন। দূর্বাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ার মাজহার জানান, মূলত মাদক কারবারী নিয়ে আসাদ এবং তৌহিদুলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। তবে বিষয়টি মিমাংশার জন্য তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে দু’একের মধ্যে বসাবসি করবেন। নেহালপুর ফাড়ির ইনচার্জ এসআই এমরান জানান, হামলার খবর পাবার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগটি তদন্ত করে পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

error: Content is protected !!