মণিরামপুর প্রতিনিধি:
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বাকোশপোল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক মাদকসেবিসহ ৩টি নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ৪র্থ শ্রেণির ৩টি পদের নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলী গাজীর বিরুদ্ধে। গত ১০জুলাই মণিরামপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অনেকটা চুপিসারে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী নিয়োগ প্রার্থীসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, উপজেলার সদর (মনিরামপুর) ইউনিয়নের বাকোশপোল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির সৃষ্ট ও শুন্যপদে অফিস সহায়ক ও ল্যাব সহকারী পদে ২০২২ইং সালের নভেম্বর মাসে এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) পদে দৈনিক স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অফিস সহায়ক পদে ১৩জন, ল্যাব সহকারী পদে ৪জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) পদে ৬জনসহ ৩টি পদে মোট ২৯জন প্রার্থী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাইয়ে অফিস সহায়ক পদে ৩টি আবেদন বাতিল হয়। এতে করে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা হয় ২৬জন। পরবর্তীতে প্রতিটি পদে মোটা অঙ্কের ডোনেশনের চুক্তি শেষে পছন্দের প্রার্থী চুড়ান্ত করে গত ৭ জুলাই বোর্ডের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত দিনের আগেই বাছাইকৃত প্রার্থীরা সভাপতির প্রতিনিধির কাছে উৎকোচের টাকা হস্তান্তর না করায়-বোর্ড করতে অস্বীকৃতি জানায় সভাপতি ইয়াকুব আলী গাজাী। ফলে চাকুরী প্রত্যাশিরা দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন উপায়ে টাকা যোগাড় করে সভাপতির চাহিদা মাফিক তার প্রতিনিধি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের কাছে পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। চুক্তি মাফিক টাকা হাতে পাবার সাথে-সাথেই অনেকটা চুপিসারে ১০ জুলাই মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করা করা হয়। কিন্তু গোপনে সভাপতির সিলেকশন ও সিলেকশনকৃত প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি ফাঁস হলে নিয়োগ বোর্ডে অফিস সহায়ক পদে হাজির হয় দুই ডামী প্রার্থীসহ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থী উজ্জল চন্দ্র দাস। অপরদিকে ল্যাব সহকারী পদে তিন ডামী প্রার্থীসহ নিয়োগপ্রাপ্ত মেহেদী হাসান এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) পদে দুই ডামী প্রার্থীসহ নিয়োগপ্রাপ্ত হেনা পারভীন।
পরিছন্নতাকর্মী (আয়া) পদে চাকুরী প্রত্যাশি এক সন্তানের জননী স্বামী পরিত্যাক্তা জলি আক্তারের পিতা মোকছেদ আলী বলেন, ‘আমার কাছে সভাপতি ইয়াকুব আলী গাজী ৯লক্ষ টাকা দাবী করেছিল, আমি সেটা দিতেও চেয়েছিলাম কিন্তু অন্য প্রার্থীর কাছ থেকে আরও বেশি টাকা নিয়ে তাকেই চাকুরী দিয়েছে।’
চাকুরী প্রত্যাশি শ্যামল দেবনাথ বলেন, ‘আমাকে দরখাস্ত করতে বলে সুকৌশালে আবার তা বাতিল করে দিয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য জানান, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার পূর্বেই স্কুলের সভাপতি পরিস্কার জানিয়ে দেন, দাবীকৃত টাকার এক অংশও কম হলেও চাকুরী হবে না। তবে কত টাকা নেয়া হয়েছে এ খরব সভাপতি ও তার প্রতিনিধি ছাড়া কেই জানে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘বলা হয়েছিল স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু সভাপতি ৩ পদে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত মাদকসেবীসহ গত ১০ জুলাই অতি গোপনীয়তার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।’
নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘সভাপতির নির্দেশক্রমে আমি নিয়োগবোর্ডের কার্যাদি সম্পন্ন করেছি। নিয়োগ প্রাপ্তদের কাছ থেকে কত টাকা নেয়া হয়েছে আমি সেটা জানিনা।
মুঠোফোনে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলী গাজী গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখতে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার তিনি বলেন, অর্ধকোটি নয়-নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২৫ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা হাতে আছে। এ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।