সবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ছাবিনা, তার মতো সুন্দরী, শিক্ষিত মেয়েকে যে একদিন ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। সেই আবার পরকীয়ায় জড়িয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই পারেনি ছাবিনা। নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করেছে। তারপর আত্মহত্যার পথটাই বেছে নেবো বলে ভেবেছিল। কিন্তু আত্মহত্যা মহাপাপ তাই নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখে ছাবিনা।ভাগ্যিস রকি সবসময় ওর খোঁজ রাখতো। ছাবিনার স্বামী অনেক মার দূর করে ঘরে আটকে রেখেছিল ছাবিনা কে। ফোনে না পেয়ে সঠিক সময়ে ওদের বাড়ি আসে ছাবিনার বাবা। অনেক ডাকাডাকির পর প্রতিবেশির সাহায্যে দরজা ভেঙে দেখে বেহুঁশ ছাবিনা। ছাবিনার বাবা জানতো ছাবিনার স্বামী মেহেদী ছাবিনা কে পছন্দ করত না আগের মত। যাওয়ার সময় মেহেদী বলে গেছে ডিভোর্স দেবে । অবশেষে সুস্থ করে নিয়ে আসে ছাবিনার বাবা মা। তবুও মন থেকে ওই ফ্ল্যাটে যাওয়া মেনে নিতে পারছেনা। আর দোষ তো তার সে মেহেদী কে অন্ধ বিশ্বাস করেছিল। শিক্ষিত হয়ে চাকরি ছেড়ে মেহেদী উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছিল। আজ তার ফল পাচ্ছে।
ছাবিনার খালাতো ভাই রকি মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যায়। নানাভাবে ছাবিনা কে আনন্দে রাখার চেষ্টা করে। কোন উপায় না দেখতে পেয়ে, রকি তার মনের কথাটা ছাবিনা কে বলে দেয়। থাক তোর যদি আপত্তি থাকে তাহলে আমি কিছু বলবো না। আমি যা বললাম কথাটা ভেবে দেখিস । ওহে আমার একটা গ্রুপ আছে ফেসবুকে। কত লোক এখানে লেখা জমা দেয় পড়ে, নাচ, গান আবৃত্তি দেয়। তুই তো ভালো লিখতিস। আবার শুরু করনা, দেখবি ভালো লাগবে তোর। ছাবিনা হেসে বলে,ওসব অতীত রে।মেহেদী ছাড়ার পাত্র নয়। লিখবিনা যখন তখন পড়। গ্রুপটায় জয়েন কর।বাচ্চাদের নাচ, গান, আবৃত্তি দেখ মন ভালো হয়ে যাবে। রকির কথায় রাজি হয়ে, ধীরে ধীরে সত্যি কখন যে ছাবিনা ঐ পরিবারের অঙ্গ হয়ে উঠেছে জানেনা। রকি ধীরে ধীরে গ্রুপের দায়িত্ব ছাবিনার উপর ছেড়ে দিয়েছে। ছাবিনা নিজের সব ভুলে এই পরিবার, এই সংসারটাকেই আগলাতে ব্যস্ত। ছাবিনার এরকম ব্যবহার দেখে অনেক খুশি হয়ে যায় রকি। অবশেষে আবার লেখা শুরু করে ছাবিনা।
এর মধ্যে ছাবিনা ভাড়া বাড়িতে উঠেছে। বাবা বলেছিল তুমি আমাদের এখানেই থাকো। ছাবিনা বলল, না আমি ভাড়া বাসায় থাকব। কিছু না ভেবে ছাবিনার কথায় রাজি হল। নিজের কিছু গল্পের বই ছাপা হয়েছে। ছাবিনার একটা ডিপিএস ছিল। ডিপিএস এর টাকা তুলে সে নিজের লেখায় মন দিয়েছে। সবাই তার লেখার ভীষণ ভক্ত। বাস্তব জীবনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ছাবিনা। ছাবিনার গল্পগুলো সবাই গ্রহণ করতে শুরু করে ব্যাপক জনপ্রিয় অর্জন করেছে। ছাবিনা মতো অনেকেই সংসার আর দৈনন্দিন কাজে চাপে নিজের প্রতিভা ভুলেছিল। ছাবিনা আজ তাদের প্রেরণা জোগায়, সাহস জোগায়। বেঁচে থাকতে শেখায়। সাবিনা কে কিছুদিন আগে রকির বলা কথাগুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরবর্তীতে ছাবিনা রকিকে বিয়ে করে। তার আগে মেহেদী কে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। রকি সাবিনা কে পাগলের মতো ভালোবাসে। হ্যাঁ আজকের সেই ফেসবুক গ্রুপ এখন পরিবার। শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদের ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তির অক্সিজেন।একটা বন্ধন, একটা প্রশ্রয়। মন খোলা হাসির একটা উন্মুক্ত আকাশ। পরবর্তী খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মেহেদী কে মেয়েটা ছেড়ে চলে গেছে ছন্নছাড়া জীবন তার। কিন্তু ছাবিনা নিজের আকাশ খুঁজে পেয়েছে। এতদিন সে একটা ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিল। যে কিনা ভালবাসার মূল্যই দিতে জানে না। রাস্তায় মেহেদীর করুণ দশা দেখে ছাবিনা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আল্লাহ আপনি যা করেন সবই মঙ্গলের জন্য করেন। এখন সে তার এই সংসার, পরিবারকেই নিয়েই ব্যস্ত।