Wednesday, February 5, 2025

বুলবুল হোসেনের লেখা গল্প মধুপুর শালবন

Date:

Share post:

মোঃ বুলবুল হোসেন:

সবুজ পৃথিবী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ মাহমুদ। তিনি দেশের বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠন করেছেন সবুজ পৃথিবীর। শহীদ মাহমুদ সবুজ পৃথিবীর পক্ষ থেকে এক লক্ষ বৃক্ষ রোপণ করেছেন, দেশের সকল উপজেলার কমিটির মাধ্যমে। এক লক্ষ বৃক্ষরোপন করেছেন দেশ এবং দেশের বাহিরে। সবুজ পৃথিবী সাথে সুনামধন্য ব্যক্তিবর্গ প্রশাসনও একত্রে কাজ করেছেন। শহীদ মাহমুদ ময়মনসিংহে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। সেখানে দশ হাজার তালগাছের চারা রোপন করবেন পরিকল্পনা করেন। শহীদ মাহমুদের বন্ধু স্বাধীন এর সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নেন। এদিকে তাল গাছের চারা আগেই ময়মনসিংহ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সেলিম রেজা ভাইয়ের মাধ্যমে। ময়মনসিংহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কয়েক জন উপজেলার সভাপতিদের নিয়ে তার সফর সঙ্গী করলেন। মাইক্রোবাস নিয়ে সকালবেলায় ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হলো।

সবাই বেশ আনন্দ আছে। নানান ধরনের গল্প আড্ডায় মেতেছে ।গাড়িটা বেশ কিছু দূর যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে ওপর পাশ থেকে একটি দূরপাল্লার বাস এসে মেইন রোডে উঠতে ছিল। এমন সময় আমাদের গাড়ির চালক ঢোকার মুহূর্তে গাড়ি এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা সবাই বলার পর গাড়িটা স্লো করা হলো। দূরপাল্লার বাস টি চলে গেল। সবাই ভয়ে ছিলাম এই বুঝি প্রাণ পাখি চলে গেল । যাই হোক এ যাত্রায় আমরা সবাই বেঁচে গেলাম। তারপর আবার গল্প করা শুরু হলো রাস্তার দু’পাশেই সবুজ শ্যামল পরিবেশ দেখতে খারাপ লাগতেছিল না । এর মধ্যে নবীন ভাই বলে উঠলো আমরা মধুপুর গিয়ে মিষ্টি ফল আনারস খাবো। এর মধ্যে শহিদ ভাই বলল, এখন তো আশ্বিন মাস মিষ্টি আনারস পাওয়া যাবে না। তবে যতটা সম্ভব ভালো করে দেখে নিতে পারলে মিষ্টি হবে। তবে সিজনের ফলের মত মিষ্টি হবে না।

শহীদ ভাই বলল আমাদের মধুপুর উপজেলার সভাপতি শহিদুল ভাই আছে । তাহলে উনার সাথে দেখা করে মিষ্টি ফল খাওয়া যাবে । উনি ওই এলাকায় বসবাস করছেন ছোট থেকে আমাদের চাইতে ভালো চিনবেন ফল। মধুপুর উপজেলা সভাপতি শহীদুল ভাই সাথে আমরা সবাই দেখা করলাম শহিদুল ভাই একজন ভালো মনের মানুষ । লোকটা দেখতে লম্বা গাল ভর্তি দাড়ি, কথার মাঝে হাসি লেগে থাকে। সবাই শহিদুল ভাইয়ের সাথে গল্প করা শুরু করে দিলাম । এরই মধ্যে মোঃ বুলবুল হোসেন বলে উঠলো দাদাভাই আনারস খাবো শহিদুল ভাইয়ের উদ্দেশ্যে করে বলল, শহিদুল ভাই বলল বাজারে তো প্রচুর আনারস উঠেছে ঠিক আছে তোমরা দাড়াও আমি আনারসের ব্যবস্থা করছি। শহিদুল ভাই একজন লোক ডেকে তিনটা ভালো আনারস নিয়ে আসলো। আনারস কাঁচামরিচ, লেবু দিয়ে ভর্তা করে। আমাদের সামনেও উপস্থিত করা হলো সবাই কে প্লেটে দেওয়া হল। আমার প্লেটেই বেশি দেওয়া হয়। ও আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই আমি মোঃ বুলবুল হোসেন সবুজ পৃথিবী কালিহাতী উপজেলা সভাপতি। সবার চাইতে আমি বেশি খেয়ে ফেললাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে শহিদুল ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। আবার ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। কারণ আমাদের ওইখানে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। বিকাল বেলায় সময় দেওয়া হয়েছে । কিন্তু ওখানে যাওয়ার পর একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে । যার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অন্তত এক দেড় ঘন্টা আগে আমাদেরকে পৌঁছাতে হবে। তাই শহীদ মাহমুদ ভাই বলল সামনে আমাদের দ্রুত যেতে হবে। এর মাঝে শহীদ মাহমুদ এর বউ শারমিন আলম বলল, সামনে শালবন বাগানে বানর দেখা যায়। ওরা রাস্তার সাইডে বসে থাকে। লোকজন যা কিছু খাবার দিয়ে যায় সেগুলো খেয়ে এদের দিন চলে যায়। শারমিন ভাবি বলল রাস্তা থেকে আমাদের কিছু খাবার কিনতে হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর কয়েকটি দোকান সামনে পেলাম । ভাবির কথা মত দোকান থেকে কিছু রুটি কিনে নিয়ে আসলাম। বানরগুলোকে খেতে দেব বলে। এরই মধ্যে শহীদ মাহমুদ ভাই বলল আমাদের মধুপুর বনটা কেটে উজার করে ফেলা হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশেই গাছ লাগানোর নাম করে আনারসের চাষ হচ্ছে।

প্রায় চালার মধ্যে কিছুসংখ্য বাগান গাছ, নিচে আনারসের চাষ, পেপের চাষ করা হচ্ছে । আর ধ্বংস করা হচ্ছে আমাদের গাছ। বাগানের ভিতর ফলের গাছ নেই বললেই চলে । আর ফলের গাছগুলো যদি এই বনে থাকত । তাহলে আমাদের এই বনের সম্পদ পশুপাখি গুলো বেঁচে থাকতো। তারা রাস্তা এসে মানুষের কাছ থেকে খাবার নিত না। এরই মধ্যে শহীদ ভাই পরিকল্পনা করছে যে বাগানের ভিতরে কিছু ফল গাছের চারা রোপন করবে । যাতে পশুগুলো খেতে পারে, এ ব্যাপারে এলাকার কিছু লোকজনের সাথে কথা বলবে, বানর গুলো কি ফল খায় । কথা বলে চারা রোপণ করবে । শহীদ ভাই আরো বলেন আমাদের এই মধুপুরের শালবন যদি রক্ষা করতে চাই। তাহলে সরকারের পাশাপাশি আমরা যারা এলাকার লোকজন আছি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর মধ্যে ভাবি বলে উঠলো ওই যে সামনে বানর দেখা যাচ্ছে। চলো আমরা তাদের খাবারগুলো দিয়ে আসি। ড্রাইভার গাড়িটা এক পাশে থামিয়ে দিল ।

আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে পাউরুটি বানর গুলোকে দিতে থাকি। এত সুন্দর ভাবে হাত থেকে নিয়ে নেয় মনে হয় এরা বাড়ির কোন পোষা পাখি । বনের পাখি সবসময় উগ্র মেজাজি হয়। কিন্তু এরা কখনো উগ্র মেজাজি কোন কিছু দেখা যায় না। খাবারগুলো সুন্দরভাবে তারা খেয়ে নিচ্ছে। আমি কয়েকটি বানরকে রুটি খেতে দিয়েছি। একটি রুটির টুকরা বানরের নিচে পড়ে গেছে। তারপর সে আমার পাশেই ছিল একদম নিকটে। আমি যেই তার কাছ থেকে পড়ার টুকরা নিতে যাবো অমনি সে আমাকে একটা থাপ্পড় মেরেছে। হাতের মধ্যে যদিও আমার একটু কেটে গেছে। তাতে আমার কোন কিছু মনে হয়নি । কারণ তারা তো বনের পাখি পোষা পাখি নয়। বাকি সব সুন্দরভাবেই হয়েছে আমাদের। তাদের কে রুটি দেওয়া শেষ করে আমরা আবার গাড়িতে উঠে পড়ি। কিছুদূর যাওয়ার পর ভাবি বলল হাতে স্যাভলন দেওয়া দরকার তা না হলে ইনফেকশন হতে পারে। গাড়ি থেকে নেমে সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে ওয়ান টাইম লাগিয়ে দেওয়া হল। হালকা একটু আঁচর লেগেছিল যার কারনে ওয়ান টাইমে কাজ হয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

মগরাহাট কলেজে শুরু আগুনের পরশমনি – ২০২৫

মনোয়ার ইমাম, কলকাতা মগরাহাট কলেজে শুরু হলো বাৎসরিক অনুষ্ঠান "আগুনের পরশমনি - ২০২৫"। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে উপস্থিত ছিলেন বিধায়িকা...

কালীগঞ্জে ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

হুমায়ুন কবির কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলীর  খুড়ারবাজারের ত্রিমোহনি থেকে ত্বত্তিপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৪...

নড়াইল থেকে নি’খোঁ’জ হওয়া নারীর  ম/রদে’হ উ’দ্ধা’র

সাজ্জাদ তুহিন নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল থেকে গত চারদিন আগে নিখোঁজ হওয়া সুরাইয়া শারমিন (৩০) নামে এক গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার...

বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন শুরু কলকাতায় বিনিয়োগের আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

নিউজ দাতা মনোয়ার ইমাম, কলকাতা: এফআইসিসিআই (FICCI) ও সিআইআই (CII)-এর যৌথ উদ্যোগে আজ থেকে কলকাতার নিউটাউনে শুরু হয়েছে বিশ্ব...