বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্বর্ণা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

লেখক:
প্রকাশ: 1 year ago

স্টাফ রিপোর্টার:   রাজধানী’র পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২, ব্লক-সি, রোড নং-২, বাসা নং-৭ এর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ‘ফাতেমা তুজ জোহরা’ স্বর্ণা’র (২৭) নির্মম ও বর্বর হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে আজ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর-২৩) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মানববন্ধন’ কর্মসূচী পালন করেছেন নিহতের অসহায় মা, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ‘ফাতেমা তুজ জোহরা ওরফে স্বর্ণা’র নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক আসামীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার আইনে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সহ আসামীদের কঠোর শাস্তি দাবী করছেন নিহতের সহপাঠী, স্বজন ও এলাকাবাসী। একই সাথে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে পিবিআইতে তদন্ত চায় নিহতের পরিবার।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৭ই আগস্ট-২০২৩ রাত ১০.৩০ ঘটিকায় আসামী জিসান হাওলাদার (২১) পিতা-মৃত সিরাজ হাওলাদার এবং আসামী’র সহযোগী নাইমুল ইসলাম (২৫), পিতা-আবুল কালাম সহ অজ্ঞাতনামা দুই/তিনজন ‘ফাতেমা তুজ জোহরা’ ওরফে স্বর্ণা’কে (২৭) গুরুতর জখম অবস্থায় নিজ বাসার নিচ তলার গ্যারেজে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। নিকটাত্মীয়দের সহযোগীতায় মুমূর্ষ অবস্থায় স্বর্ণা’কে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাহারা উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ মর্মে নিহত স্বর্ণা’র মা শেলী সুলতানা জিসান হাং এবং তাহার একান্ত সহোযোগী নাইমুল ইসলাম সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে চাইলে এস.আই আলাউদ্দিন (বিপি-৭৯০০০২২২৬৯) মামলাটি নিতে গড়িমসি করেন এবং সদ্য সন্তানহারা জ্ঞানশূন্যহীন একজন মায়ের নিকট হইতে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর গ্রহণ করিয়া বলেন , তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এজাহারটি সংশোধন করেছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর অফিসার ইনচার্জ মুহা.মাহফুজুর রহমান মিয়া (বিপি-৭৬৯৯০০৯১৭৮) মামলাটি গ্রহণ করিবে। অথচ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বা পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন ব্যতিত সাজানো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় স্বর্ণা হত্যাকান্ডের মূল আসামী জিসান হাওলাদার’কে।

নিহত স্বর্ণা’র মা বলেন, কেবলমাত্র আসামী জিসান হাওলাদার,আসামীর সহযোগী নাইমুল ইসলাম এবং আসামীগণের আত্মীয়-স্বজনের বয়ান অনুযায়ী একটি কল্পিত এজাহার কম্পোজ করিয়া সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো মামলায় মাদকাসক্ত জিসান’কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। উক্ত ঘটনার মূল আসামী খুনি জিসান হাওলাদার এবং তার একান্ত সহযোগী নাইমুল ইসলাম ব্যতীত প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নাই, নাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, এমনকি পল্লবী থানা পুলিশের কোন প্রকার তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াই ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩০৬ ধারায় (আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে) আসামী জিসান হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পল্লবী থানা পুলিশ এবং রহস্যজনকভাবে মামলাটির প্রধান সাক্ষী হিসাবে রাখা হয় আসামী নাইমুল ইসলাম’কে। (পল্লবী থানার এফ.আই.আর নং-৩৩, জি.আর নং-৬৪৫, তারিখ-০৯.০৮.২০২৩) কোন প্রকার তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া আসামী জিসান হাওলাদারের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়ের করায় আমি ও আমার পরিবার ভীষণভাবে আশাহত হই এবং ন্যায় বিচারের জন্য একাধিকবার থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রকার প্রতিকার পাইনি।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ কলেজ অব এ্যাভিয়েশনের মেধাবী শিক্ষার্থী এ্যারোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ‘ফাতেমা তুজ জোহরা’ ওরফে স্বর্ণা (২৭) ‘এনিম্যাল রেসকিউ বাংলাদেশ’ নামক অর্গানাইজেশন এর একজন বিশিষ্ট ‘রেসকিউয়ার’ প্রতিদিনের ন্যায় ভ্রাম্যমান কুকুর উদ্ধার, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বাহিরে যায়।রাতে বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে আসামী জিসান ফোনটি রিসিভ করে এবং আমাকে বলে যে, ‘স্বর্ণা অসুস্থ, সকালে বাসায় ফিরবে’ কথাটি শোনামাত্র স্বর্ণা’র মা শেলী সুলতানা অনুমান করেন যে, পূর্ব শত্রুতার জের হিসাবে আসামী জিসান এবং তার বাহিনী হয়তো স্বর্ণা’কে আটক করেছে। তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন শুনিয়া অপরাধী জিসান হাং ফোনের লাইন কেঁটে দিয়ে মুঠোফোনের সুইচ অফ করে দেয়। (নিহত স্বর্ণা’র সেই ফোনটি পুলিশ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি)

নিহতের মা শেলী সুলতানা বলেন, ঘটনার দিন আসামী জিসান হাং এর সহযোগী নাইমুল ইসলাম স্বর্ণা’কে ফোন করে বলেন যে, ‘এনিম্যাল রেসকিউ বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যান ‘টিয়া চৌধুরী’ বলেছে, (অশালীন আচরণের দায়ে বহিষ্কৃত) জিসান হাওলাদারের নিকটে থাকা মূল্যবান ভ্যাকসিনগুলো স্বর্ণা’কে বুঝিয়ে দিতে।নকাজেই আপনি এসে ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে যান।নাইমুলের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী নিহত স্বর্ণা পল্লবী থানাধীন মিরপুর-৭ নাম্বার চলন্তিকার মোড়ে পৌঁছালে আসামী জিসান হাওলাদার এবং তার সহযোগীগণ তাহার উপরে চড়াও হয়।

আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্বর্ণা’কে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে এবং জোরপূর্বক অপহরণ করে শাহ্ আলী থানা এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যায়।পরবর্তীতে আসামীগণ রাতের অন্ধকারে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় স্বর্ণা’কে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলে সে রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বর্ণা মারা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার মেয়ে কিভাবে অসুস্থ হলো এবং কি কারণে মারা গেলো কেউ দেখে নাই বা বলতে পারে নাই। কেবলমাত্র আসামী জিসান এবং তাহার সহযোগী নাইমুল ইসলাম বলছে যে, আমার মেয়ে স্বর্ণা বিষাক্ত ভ্যাকসিন খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। (যে ভ্যাকসিন গুলো কেবলমাত্র জিসান হাওলাদারের নিকট মজুদ ছিলো)।

নিহতের মা বলেন, আপনারা তদন্ত করে দেখুন, কোনো কারণ ছাড়া উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রাপ্ত বয়স্ক একজন সমাজ সচেতন নারী কিভাবে আত্মহত্যা করতে পারে? আপনারা দেখুন, লাশের ছবিতে আমার মেয়ের চোখের পাশে থেতলে গেছে এবং মাথার পিছন সাইড সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের গভীর চিহ্ন রয়েছে। যাহা কোনো অবস্থাতেই আত্মহত্যার লক্ষণ হতে পারেনা। নিহতের মা শেলী সুলতানা সকল গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠন সহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মাানববন্ধনে জিসান হাওলাদার ও তার সহযোগী নাইমুল ইসলাম সহ সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন নিহত স্বর্ণা’র সহপাঠী, স্বজন ও এলাকাবাসী।উক্ত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ঈশা, মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কেন্দ্রর নির্বাহী পরিচালক শাহবাজ জামান ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মোসাম্মত ডলি।

জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ইশা বলেন আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই মামলা অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই তে দেয়া না হলে আগামী সাতদিন পর প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরের স্মারকলিপি প্রদান করা হইবে।

error: Content is protected !!