বিএসএমএমইউর উপাচার্য নিজের প্রচারে বেসামাল

লেখক: mosharraf hossain
প্রকাশ: 7 months ago

নিজস্ব প্রতিনিধি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। যার সাথে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের
স্বপ্নদ্রষ্টা স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ। তাঁর ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টায় দেশের মানুষকে উন্নত সেবা ও
সাধারণ ও অসহায় মানুষ যাতে এই বিশ্ববিদ্যালয় অতি সহজে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মূলত এই বিশ্ববিদ্যালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে দিন দিন সুনাম-সুখ্যাতি ম্লান হচ্ছে।

তার মূল কারণ বিগত দুই মেয়াদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা উপাচার্য হচ্ছেন, উপাচার্যের ভার তারা ঠিকঠাক সামলাতে পারছেন না। উপাচার্য হয়েই তারা বেসামাল হয়ে পড়ছেন। আগের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শারফুদ্দিন আহমেদের নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে বাজারে ব্যাপক আলোচনা আছে। সেই কেলেঙ্কারির চেয়েও তিনি আত্মপ্রচারণায় মগ্ন ছিলেন। উপাচার্য থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনভাবে চিত্রায়ন করছিলেন যেন মনে হচ্ছিল ইউনিভার্সিটিটি পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় তার ছবি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোকে। ফলে সকলেই তার আত্মপ্রচারণায় রীতিমতো বিরক্ত হয়েছিল।

মেয়াদ শেষ করে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বিদায় নিয়েছেন। তিনি এক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে নানা রকম দুর্যোগের মধ্যে বিদায় নিয়েছেন। নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তিনি পবিত্র রমজান মাসে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নেচে কুঁদে, বৌ বাচ্চা নাতি-নাতনিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এটি নজিরবিহীন।

কোনো প্রতিষ্ঠানে কেউ যখন প্রধান হিসেবে অভিষিক্ত হন, তাঁর সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করা যেতেই পারে। এতে দোষের কিছু নয়। কিন্তু যেভাবে তাকে সংবর্ধনা জানানো হলো, তা কোনো মানদণ্ডেই স্বাভাবিক ছিল না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
শুধু দৃষ্টিকটুই না, অনেক ক্ষেত্রে তা ছিল বিবমিষার উদ্রেককারী। দেখা গেছে এক দল কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠান চত্বরে বাদ্যের তালে তালে বিদেশি ধাঁচে নাচছে, আর অনেকেই তা ভিডিও করছে। দৃশ্যটা যারা দেখেছেন, তারা বলেছেন হাসপাতাল হল নিরব এলাকা। এখানে অনেক রোগী অসুস্থ হয়ে আসে, বিভিন্ন কেবিনে অনেক মারাত্মক রোগী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসায় রয়েছে। সেখানে ব্যান্ড বাজিয়ে নাচ-গান, কোলাহলের চেয়ে অসভ্যতা আর কী হতে পারে! এতে শালীনতা বলতে কিছুই থাকলো না। অনেকেই মনে করেন যে, বেসামাল হওয়ার এটি প্রথম লক্ষণ। এরকম ন্যক্কারজনক ভাবে উপাচার্যের চেয়ারে বসা নিয়ে যখন সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনা তখন সেই সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক এখন আত্মপ্রচারণায় মগ্ন হয়েছেন।

গত ৩০ এপ্রিল ছিল বিএসএমএমইউর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আর সেই ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে যে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে সেটি নজিরবিহীন ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং উপাচার্যের আত্মপ্রচারণায় ভরপুর। ২৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ক্রোড়পত্রে যে মাস্টারহেড করা হয়েছে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বাদ দেওয়া হয়েছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৮ সালে ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজস্ব আগ্রহ এবং উদ্যোগের কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সৃষ্টি করেছিলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোড়পত্রের মাস্টারহেডে প্রধানমন্ত্রীর কোন ছবি নেই। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। প্রতিষ্ঠাতাকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানে ২৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মাস্টারহেডে জাতির পিতার ছবি, বিএসএমএমইউ ভবনের দুটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে নানা রকম আলোচনা হচ্ছে।

আরও মজার ব্যাপার হলো, এই ক্রোড়পত্রে উপাচার্য যদি বাণী দেন তাহলে সেখানে অন্য একজন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্বন্ধে লেখেন। এটাই রীতি রেওয়াজ। কিন্তু দীন মোহাম্মদ নূরুল হক আগের উপাচার্যের নীতি অনুসরণ করে নিজের প্রচারে বেসামাল হয়ে পড়েছেন। এই ক্রোড়পত্রে বাংলাদেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন, যেটি ক্রোড়পত্রের এক তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে আছে। এটি অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নূরুল হকের লেখা।

দীন মোহাম্মদ নূরুল হক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেননি। তার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোন রকম সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তার আগে তিনি ছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক। বাংলাদেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্পর্কে লেখার নৈতিক অধিকার কি তার আছে? উপাচার্য হলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা লিখতে হয়? নাকি তার লেখাটি অন্য কেউ লিখে দিয়েছে সেই প্রশ্ন অনেকের।

বাংলাদেশের প্রথম এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিশিষ্টজন আছেন, অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহর মত চিকিৎসক আছেন, কনক কান্তি বড়ুয়ার মত সাবেক উপাচার্য আছেন, আছেন প্রাণ গোপাল দত্তের মত ব্যক্তি যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু তাদেরকে না নিয়ে দীন মোহাম্মদ নূরুল হককে কেন ২৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে লিখতে হবে? সেটি যেমন প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, সেখানে তিনি শুধু লেখেননি আবার বাণীও দিয়েছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি ক্রোড়পত্র যেখানে উপাচার্য বাণীও দিচ্ছেন, আবার লিখছেনও। কোন ক্রোড়পত্রে যিনি বাণী দেন, তিনি নিবন্ধ লেখেন না। এই স্বাভাবিক রীতি এবং সৌজন্যতা ও শালীনতাটুকুও ভুলে গেছেন উপাচার্য। উপাচার্য হলে বোধহয় এমনই হয়, আত্মপ্রচারণায় মগ্ন হয়ে বেসামাল হতে হয়।

error: Content is protected !!