মোঃ বুলবুল হোসেন:
আমাদের আঙিনায় বাবুই পাখির বাসা । বাসাটি বেশ বহুদিন তা প্রায় দু'ই বৎসর যদিও এরা আমার নিজের পোষা কোন পাখী নয়। তবুও আমার কাছে মনে হতো এরা যেনা আমার পোষ্য পাখী এরা আমাদেরই আপনজন। এদের দেখলে মনের মাঝে একটা আনন্দ অনুভব হতো। খেতে দিলে আমার হাতে এসে খাবার খেতো।
সব সময় একেবারে কাছাকাছি থাকে । আনাগোনা করে আমাকে দেখে কখনো ভয় পায় না। সে কখনো সরে যায় না, ইদানিং কিছুদিন হলো ওদের সংসারে দুটি ফুটফুটে বাচ্চা হয়েছে । বেশ চমৎকার লাগে পুরুষ বাবুই ও তার সাথী মিলে প্রায় সময়ই বাহির থেকে ভিবিন্ন খাবার এনে তাদের বাচ্চাদের খাওয়ায় ।আমি সকাল,দুপুর বিকাল আমার বাড়ি রাঙিন বসে দেখি যা আমায় মুগ্ধ করে। ওদের গানের সুরে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। গত কাল আমি বাহিরে গিয়ে ছিলাম। বাড়ী ফিরেই নারিকেল গাছের দিকে তাকাই দেখি বাবুই পাখি দুটি ব্যাপক চেঁচামিচি অনুভবে তাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই।
সেই কি কান্না যে কোন মা তার বাচ্চাকে কোল থেকে হারিয়েছে অথবা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে । তাদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে গিয়েছে। তার পর নারিকেল গাছের গোড়ায় গিয়ে দেখি। সত্যিই তার বাসা থেকে কে যেন তাদের বুকের ধন ছিনিয়ে নিয়েছে । যা দেখে আমি ব্যাপক কষ্ট পেলাম এবং ভাবতে লাগলাম। কে এমন কাজ করতে পারে । তারপর হঠাৎ আমার খেয়াল হলো আমার পাশের বাড়ীর এক দুষ্ট ছেলে আমাকে বেশ কয়েকদিন আমাকে বলেছে । আমাকে বাচ্চা দুটো দিবেন আমি নিবো। তাকে আমি অনেক দিন বুঝিয়েছি । আর বলেছি বাবা এটা দেওয়া যাবে না। তোর মার কাছ থেকে তোকে কেউ যদি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তোর কেমন লাগবে, তোর মা বাবার'ই কেমন লগবে একটু ভাবতো । আমার কথা শুনে সে কিছু দিন থেমে ছিল। এগুলো তুই নিস না বাবা এগুলো নিলে আল্লাহ অনেক পাপ দেয়।
আমার সন্দেহ হতে লাগলো। সে হয়তো এই কাজ করতে পারে, তার নেশা ছিল পাখির বাচ্চা ধরে পালন করা। পরে বহুখোঁজাখুঁজির পর সন্ধান পেলাম সেই ছেলের। আর কাজটি এই ছেলে করেছে। সেই ছেলেটিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলার পর তার কাছ থেকে বাবুই পাখির বাচ্চা নিয়ে আসি । সেই বাবুই ছানা বাবুই পাখির বাসায় ফিরিয়ে দেই । মুহুর্তের মধ্যেই বাবুই পাখির কান্না থেমে আনন্দে রুপ নিলে । বাচ্চা দুটি কে পেয়ে বাবুই পাখি দুটি একদম শান্ত হয়ে গেল। আমিও খুশী হলাম তাদের সন্তানকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে ।
পশু পাখী,মানুষ যাই হোক সন্তান হারানোর কি বেদনা তা একমাত্র সেই বাবা মা জানে, যারা সন্তান হারিয়েছে।