স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহানের বিরুদ্ধে দূনীতির সংবাদ দৈনিক, জাতীয় ও আঞ্চলিকসহ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিভিন্ন মহলে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন। এদিকে, সংবাদ প্রকাশের পর থেকে তার অধিনস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের
সাথে খারাপ আচরন করছেন।
যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি ট্রেনিং সম্প্রসারণ প্রকল্পে কৃষক প্রশিক্ষণ প্রদশনীয় প্রকল্প লতি—কচু, সরেজমিনে বাঘারপাড়া উপজেলার বরভাগ গ্রামের কৃষক বিধানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাকে তিনহাজার দুইশত চারার পরিবর্তে তিনহাজার পাঁচশত টাকা ও অল্প কিছু সার দিয়েছে অথচ আমার চারা ক্রয় করতে খরচ হয়েছে সাতহাজার টাকা। পার্শ্ববর্তী মহিরন গ্রামের কৃষক আবু হুরাইয়ার কাছে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বরাদ্দকৃত মালামাল পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কৃষি অফিসারের সাথে কথা না বলে আপনাদের কোন তথ্য দিব না। এদিকে যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ লতি-কচু প্রকল্পে প্রশিক্ষণিদের মাঝে সরকারী নিয়মে মাথাপ্রতি বিল ৩৫০ টাকা, নাস্তা ও খাবার বরাদ্ধ থাকলেও ১২০—১৪০ টাকার দরে খাবার কৃষকের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন এ কর্মকর্তা ।
এবিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলার জান্নাতুল হোটেলের মালিক জিন্নাত আলীর কাছে খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কৃষি অফিসের বিভিন্ন সময়ে সকল খাবারের দায়িত্ব নিয়ে ১২০—১৪০ টাকা দরে খাবার প্যাকেট ডেলিভারি দিয়ে থাকি। উল্লেখ্য
এদিকে কৃষি কর্মকর্তা অফিস চলাকালীন সময়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বাসায় বসে অফিসের স্টাফদের মনিটরিং করার জন্য নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তার রুম ব্যতীত সকল রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন, যা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অফিসের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাঠ দিবসে নিজের মনগড়া নির্দেশিত ৬০ জন কৃষককে নিয়ে মাঠ দিবস বাস্তবায়ন করান। পরবর্তীতে জোরপূর্বক ১২৫—১৫০ জনের তালিকায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও চাপ প্রয়োগ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে সনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষর এবং বরাদ্দের টাকা ভুয়া বিল ভাউচার করে আত্মসাত করেন। বিভিন্ন প্রকল্পের উপকরণ বরাদ্দ মোতাবেক জৈব ও রাসায়নিক সার, বীজ, কীটনাশক, পরিবহন, রোগিং, ফলজ—বনজ গাছ কৃষকের প্রাপ্তি যথাযথ না দিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাত করে অফিস রেজিস্টারে সঠিক বরাদ্দ মোতাবেক কৃষকদেরকে দিয়ে স্বাক্ষর করে নেন। এছাড়া খালি রেজিস্টরে স্বাক্ষর করানোর পর বরাদ্দকৃত উপকরণের পরিমাণ লিপিবদ্ধ এবং উপসহকারী কৃষি অফিসার দিয়ে জোরপূর্বক সনাক্তকারীর স্বাক্ষর করানো হয় বলেও অভিযোগ। প্রণোদনা/পুনর্বাসন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লেবারের টাকা বরাদ্দ থাকা সত্বেও অফিস স্টাফ, কৃষকদেরকে দিয়ে কাজ করানো, অফিসের বিভিন্ন উপকরণ জোরপূর্বক অফিস স্টাফদের বেতনের টাকা দিয়ে কিনে তা আবার ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত করেন বলেও ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ মতে, বিভিন্ন প্রকল্পের কৃষক প্রশিক্ষণে খাবার ও নাস্তা কম মূল্যের ও নিম্নমানের খাবার দিয়ে প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন, ভুয়া ভ্রমণ ভাতা দাখিল করে, ফিল্ড ভিজিট না করেই অবৈধভাবে ভ্রমণ ভাতা উত্তোলন, সরকারি গাড়ি ডিপার্টমেন্টাল অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, নিজ উপজেলার বাইরে ঢাকা, অভয়নগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করেন।
সকাল ৯ টার পরিবর্তে তিনি অফিসে আসেন বেলা ১১ টার পর। ফিল্ড ভিজিটের নামে দুপুর ১ টার পরপরই বাসায় চলে যান এবং অফিসে আসেন বিকাল ৫ টার দিকে। এছাড়াও অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ছুটির অপব্যবহার, কৃষক ও অফিসের অধীনস্তদের সাথে দুর্ব্যবহার, হয়রানী, অনিয়মের প্রতিবাদকারীদের বদলী, অপমান অপদস্ত করা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ বিভিন্ন অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এসবের তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন অভিযোগকারীরা।