বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

শাহিদুর রহমান,দিরাই উপজেলা প্রতিনিধি:

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ানের নাম। পাঁচ দশকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে পেয়েছেন খ্যাতি, সম্মান, মর্যাদা। স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদ সদস্যসহ ৭ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এই নেতা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৪৫ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন আনোয়ারপুর গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডা. দেবেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত ও মাতা সুমতি বালা সেনগুপ্ত। রাজনীতিক হিসেবে সুরঞ্জিত সেন মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য ছিলেন তার প্রমাণ ভোটেই পাওয়া গেছে বার বার। ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৭ (উপ-নির্বাচন), ২০০১, ২০০৮ আর ২০১৪ সালে কখনও তাকে বিমুখ করেনি জনতা। ১৯৯৬ সনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী শরীফ উদ্দিন আহমেদ বানিয়াচঙ্গ-আজমিরীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি উন্তেকাল করলে ওই আসনের উপ-নির্বাচনে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।
ষাটের দশকে বাম রাজনীতির মাধ্যমে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সক্রিয় রাজনীতির শুরু। আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী উত্তাল আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় তার। এগার দফা, ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরে ন্যাশনাল আসেম্বলির সদস্য, সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য। সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এই প্রবীণ নেতা। ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই টুকরা হলে মাওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। বলা যায় ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটি, এরপর একতা পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি হয়ে পরে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ। আপাদমস্তক রাজনীতিক হিসেবে সেক্যুলার কিংবা অসাম্প্রদায়িক চিন্তা, চেতনা ধারণ করেছেন সব সময়ই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। লালন করেছেন তার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল তার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৫ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৫৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রথম সারির রাজনীতিকের আসনে বসলেও হঠাৎ করেই আসা অপ্রত্যাশিত ঝড়ে তার জীবনকেই যেন এলোমেলো করে দিয়েছে। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুরঞ্জিত। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তার এপিএসের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। তবে দেশের সকল রাজনীতিকের মতো নন সুরঞ্জিত। এপিএসের দায় নিজের কাধে নিয়ে অবশেষে পদত্যাগ করে দেশের ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রীসভায় রেখে দেন। এ সময় নির্দোষ প্রমাণিত না হলে সক্রিয় রাজনীতি করবেন না বলে সুরঞ্জিত ঘোষণা দেন। এপিএস’র অর্থ কেলেঙ্কারীর ঘটনা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুরঞ্জিত সেনকে নির্দোষ ঘোষণা করলে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলন তিনি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৫ ফেব্র“য়ারি রোববার ভোররাত ৪টা ২৪ মিনিটে ৭২ বছর বয়সে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশ পরপারে চলে যান

error: Content is protected !!